Sharing is caring!

সালেহ আহমদ (স’লিপক):
মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল) সংসদীয় আসনে বিএনপির আগামির কান্ডারী হয়ে উঠছেন আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান চৌধরী (হাজী মুজিব)। বিভিন্ন সভা সেমিনার এবং চায়ের টেবিলে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে এ নিয়ে চলছে চুল-ছেঁড়া বিশ্লেষণ। সমর্থকরা দাবি করছেন প্রতিনিয়ত বাড়ছে হাজী মুজিবের কদর। এখানে হাজী মুজিবের বিকল্প নেই।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভা নিয়ে মৌলভীবাজার-৪ সংসদীয় আসন গঠিত। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখের উপরে। বিগত ১৯৮৬ এবং ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্যতিত) এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে আসছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারি সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এমতাবস্থায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা ক্ষীণ থাকায় এই আসনে এখন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-জামায়াত সহ অন্যান্য ছোট দলগুলো।
চায়ের রাজধানীখ্যাত এই আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে কে হচ্ছে সংসদ সদস্য এ নিয়ে ভোটার সহ সর্বত্র চলছে জল্পনা-কল্পনা এবং নানা বিশ্লেষণ। নির্বাচনী আলোচনার শীর্ষে অবস্থান করছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব)। দুই উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন হাজী মুজিব। দুই উপজেলার মানুষের সাথে তার রয়েছে সখ্যতা এবং ভালো সম্পর্ক।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার পর থেকেই সারা দেশের ন্যায় মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল) সংসদীয় আসনেও নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে এবার জনপ্রিয় এবং সর্বজন গ্রহণযোগ্য বাক্তি হিসেবে বিএনপির র্নিবাহী কমিটির অন্যতম সদস্য আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান চৌধরী (হাজী মুজিব) এর নাম আসছে সবার আগে। কারণ এ আসনে এখন পর্যন্ত অন্যান্য দলের তেমন কোনো ভালো প্রার্থী না থাকায় বিএনপি দলীয় ভোট ছাড়াও দলমত নির্বিশেষে তাকেই ভোট দেবেন বলে মনে করেন তার সমর্থকরা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে এমপি না হয়েও সুখ-দুঃখে, বিভিন্ন সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে হাজী মুজিবের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব সহ অসচ্ছল মানুষদের সাহায্য সহযোগীতা করেছেন। বন্যা সহ যে কোন দুর্যোগে তিনি খাদ্য সামগ্রী, শীত বস্ত্র, ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করেছেন এবং এখনও করছেন। হাজী মুজিবের ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে মহিলা কলেজ, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডায়াবেটিস সেন্টার, হাফিজিয়া মাদরাসাসহ শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট নাচ ঘর, পুটিয়া ছড়ায় সাজঘর, আমড়াইল ছড়ায় মন্দির নির্মাণ ইত্যাদি উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।
হাজী মুজিব বিএনপিতে যোগদানের পূর্বে দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ খ্যাত মৌলভীবাজার-৪ আসনে কেউ স্বেচ্ছায় বিএনপির প্রার্থী হতে চাইতেন না। এ আসনে কাউকে না কাউকে কেন্দ্র থেকে জোড় করে বিএনপির প্রার্থী করা হতো। ফলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হতো। ২০০৮ সালে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের পাতানো নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাজী মুজিবকে পরাজিত করানোর জন্য সংসদীয় আসনের সিমানা পরিবর্তন করে তার ভোটব্যাংক খ্যাত চারটি ইউনিয়নকে কর্তন করে মৌলভীবাজার-২ ( কুলাউড়া) আসনের সাথে সংযুক্ত করা হয়। মূলত সেটাই ছিল হাজী মুজিবকে সেই নির্বাচনে আটকানোর নীল নকশা বলে মনে করেন তার সমর্থকরা। আর ২০১৪ সালে তো অটোপাশ নির্বাচন হয়।
২০১৮ সালে ষড়যন্ত্রের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট করে নির্বাচনে যায় বিএনপি। প্রার্থী হন হাজী মুজিব। সরকারের ষড়যন্ত্রের কারণে তার প্রার্থীতা বাতিল হলে বিকল্প প্রার্থী কে হবেন? প্রশ্ন উঠলে, তখন কোন নেতা পাওয়া যায়নি। প্রার্থীতার দাবি নিয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি। বরং অনেকে গণফোরামের প্রার্থীকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। যাতে এখনে হাজী মুজিবকে বাদ দিয়ে গণফোরামের নেতা এডভোকেট শান্তি পদ বাবুকে প্রার্থী করা যায়। তাদের সে মিশন সফল হয়নি। হাজী মুজিবের প্রার্থীতা বাতিল হলে বিকল্প কোন নেতা না পেয়ে তার ছেলেকেও নমিনেশন দেওয়া হয়। যাতে আসনটা শূন্য না থাকে। শুরু হলো প্রহসনের নির্বাচন। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসলে সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয় একটার পর একটা মিথ্যা মামলা। নেতাকর্মী সবাই পলাতক, অনেকে জেলে আটক। নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন একা হাজী মুজিব। নির্বাচনের মাঠে হাজী মুজিব এবং তার ছেলেকে আঘাত করা হয়। তাদের গাড়ি ভাংচুর করা হয়। কেন্দ্রে এজেন্ট দেয়ার মতো লোক পাওয়া যায়নি। আগের রাতেই কেন্দ্র দখল ও ভোট হয়ে যায়। ভোটের দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত যে সমস্ত কেন্দ্রে ভোট হয়েছে এগুলো লোক দেখানো। দুপুরের পর আবারও কেন্দ্র দখল। তারপরও লক্ষাধিক ভোট পেয়েছেন হাজী মুজিব শুধু জনপ্রিয়তার কারণে বলে দাবি করেন তার কর্মী সমর্থকরা।
দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব) বলেন, আমি ২০০৮ ও ২০১৮ সালে মৌলভীবাজার-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। ২০১৮ সালের পর এমন কোনো কাজ করিনি, যে কারণে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে না। জনপ্রিয়তা যাছাই করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন। যে কারণে আমার মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।