আজ শনিবার, ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঈসা খাঁর বংশধরদের তৈরী ৪ শ বছরের পুরনো শালিসখানা

editor
প্রকাশিত জুলাই ১০, ২০২৫, ০২:৫২ অপরাহ্ণ
ঈসা খাঁর বংশধরদের তৈরী ৪ শ বছরের পুরনো শালিসখানা

Sharing is caring!

আসাদুজ্জামান তালুকদার,নেত্রকোণা:

নেত্রকোণা জেলার আটপাড়া উপজেলার শুনই ইউনিয়নের শুনই গ্রামে রয়েছে চারশ বছরের পুরোনো একটি সালিশখানা। মুঘল সেনাপতি ঈসা খাঁর বংশধরদের তৈরী এ শালিসখানা একসময় ছিল সামাজিক ন্যায়বিচারের কেন্দ্র, কালের বিবর্তনে আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, মোঘল সাম্রাজ্যের একসময়ের সেনাপতি ঈসা খাঁর বংশধর আছালত খাঁ ছিলেন এই সালিশখানার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নেত্রকোণা জেলা সদরের সিংহের বাংলা এলাকা থেকে এসে আটপাড়ার শুনই গ্রামে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। সেইসময় থানার কোনো অস্তিত্ব ছিল না, বিচারব্যবস্থা পরিচালিত হতো জমিদারি সালিশের মাধ্যমে। এই প্রয়োজনে আছালত খাঁ নির্মাণ করেন তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি দালান, যা সালিশখানা নামে পরিচিতি পায়।

প্রতি সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে এই স্থাপনাতেই বসত বিচারসভা। দূর-দূরান্তের মানুষ আসত সালিশে অংশ নিতে। এখানে শুধু বিচার নয়, দণ্ড কার্যকর করার ব্যবস্থাও ছিল।

বর্তমানে এই সালিশখানাটির একেবারে জরাজীর্ণ অবস্থা। চারপাশে ভাঙাচোরা ইট, দেয়ালে শ্যাওলা আর জং ধরা কাঠামো ইতিহাসের নীরব সাক্ষ্য দিচ্ছে। অথচ, এটি এক সময় ছিল স্থানীয় শাসনব্যবস্থার মেরুদণ্ড।

শুনই গ্রামে এখনও আছালত খাঁর অষ্টম ও নবম বংশধরেরা বসবাস করছেন। তাদের অনেকেই মনে করেন, ইতিহাস সংরক্ষণ না করা শুধু অবহেলা নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঙ্গে অন্যায়ও বটে।

এলাকাবাসীর দাবি, সালিশখানাটি শুধু একটি পুরোনো দালান নয়, এটি তাদের শেকড়, ঐতিহ্য এবং ন্যায়বিচারের গৌরবময় ইতিহাস। তারা চান, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে এবং যথাযথভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

নেত্রকোণার ইতিহাসে এই সালিশখানার মতো নিদর্শনগুলো শুধু অতীত স্মরণ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্যও বার্তা—ন্যায়বিচার, সামাজিক শৃঙ্খলা ও ঐতিহ্যকে ঘিরে গড়ে ওঠা জনজীবনের প্রতিচ্ছবি। এখন প্রয়োজন শুধু সংরক্ষণের সদিচ্ছা।

এ ব্যাপারে আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুয়েল স্রাংমা গণমাধ্যমে বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে স্থাপনাটির তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে এর ঐতিহাসিক মূল্য যাচাই করব এবং পরবর্তী সময়ে তা প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরে প্রেরণ করা হবে।