ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমের সরকারি বাসভবনের সীমানা প্রাচীর থেকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি’ মুছে ফেলা হয়েছে।
এ ঘটনাকে জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি অবমাননা আ্যাখা দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ সাধারণ মানুষ।
তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংস্কার কাজের জন্য মুছে ফেলা হয়েছে গ্রাফিতি। কাজ শেষে এসব গ্রাফিতি আবারও প্রতিস্থাপন করা হবে।
সম্প্রতি সময়ে এসব গ্রাফিতি মুছে ফেলা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠের পাশে অবস্থিত জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবনের সামনে কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক।
সেই ভবনের সীমা প্রচাীরের (দেয়ালে) গ্রাফিতি মুছে ফেলা হয়েছে। দেয়ালজুড়ে নতুন করে রঙ লাগানো হয়েছে। ফলে গ্রাফিতির এখন আর কোনও চিহ্নই নেই।
এসময় গ্রাফিতি মুছে ফেলে রঙ করার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাহবুব এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সম্পূর্ণ দেয়ালের কাজ পেয়েছে মাহবুব রেজা করিমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাহবুব এন্টারপ্রাইজ।
জেলা প্রশাসকের বাসভবনের দেয়াল আরও কয়েক ফুট উঁচু করতে, পুরো দেয়ালে রঙ করতে, দেয়ালের ওপরে কাঁটাতার লাগানোসহ আরও কিছু আনুষঙ্গিক কাজের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ লাখ টাকা।
তিনি আরও জানান, দেড় মাস যাবত কাজ করা হয়েছে। আগের দেয়ালের ওপর কোনও অংশে দুই ফুট, আবার কোনো অংশে তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট পর্যন্ত উঁচু করা হয়েছে।
এরপর নতুন রঙ লাগানো হয়েছে। দেয়ালের ওপর কাঁটাতার লাগানো হবে। এরপর হবে লাইটিং। ঠিকাদার লোকের মাধ্যমে নতুন দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকবে এমন কোনও চুক্তি হয়নি বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। এই গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণ করে সারাদেশের মতো ময়মনসিংহের শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন দেয়ালে ‘রক্তাক্ত জুলাইয়ের’ গ্রাফিতি এঁকেছিলেন।
জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবনের দেয়ালও বাদ যায়নি। সম্প্রতি সময়ে সেই দেয়াল থেকে গ্রাফিতি মুছে ফেলা হয়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্যসচিব আলী হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা রক্ত দিয়ে যে গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল, তার স্মারক হিসেবে আমরা শহরের বিভিন্ন দেওয়ালে গ্রাফিতি এঁকেছিলাম।
জেলা প্রশাসকের বাসভবনের দেয়ালটিও ছিল সেই বিপ্লবের একটি প্রতীক। এটি কেবল একটি ছবি ছিল না, এটি ছিল জুলাই বিপ্লবের চেতনা ও শহীদদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা।
এটিকে মুছে ফেলা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক। এছাড়াও তিনি জুলাই গ্রাফিতি দ্রুতই আগের মতো করেই অঙ্কন করার দাবি জানান।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ময়মনসিংহ জেলার সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘যদি খুব দ্রুত আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে এই গ্রাফিতিটি আগের রূপে ফিরিয়ে আনা না হয়, তবে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
জুলাই বিপ্লবের স্মৃতিকে কেউ মুছে ফেলতে পারবে না, এর জন্য আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাব।’
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের এই গ্রাফিতি মুছে ফেলার ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার আলোচনা করা প্রয়োজন ছিল।’
ময়মনসিংহ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ কামরুল হাসান জানান, জুলাই বিপ্লবের পর দেয়ালের গ্রাফিতি ছিল রক্তাক্ত বিপ্লবকে উজ্জীবিত রাখার প্রতীক। এটি মুছে ফেলা কোনোভাবেই কাম্য ও গ্রহণযোগ্য নয়।
গ্রাফিতি মুছে ফেলার বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে জেলা প্রশাসনের এনডিসি সাইফুল্লাহিল গালিব জানান, জেলা প্রশাসকের বাসভবনে সীমানা প্রাচীরের দেয়ালে কিছু সংস্কারকাজ চলছে। সংস্কারকাজ শেষে আবারও ২৪-এর আদর্শ ধারণ করা গ্রাফিতি আঁকানো হবে।