আজ শুক্রবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শ্রীমঙ্গলের ফুটপাত: জীবিকার লড়াই ও আগত পর্যটকদের স্বস্তির সন্ধান

editor
প্রকাশিত মার্চ ২০, ২০২৫, ০৭:৫০ অপরাহ্ণ
শ্রীমঙ্গলের ফুটপাত: জীবিকার লড়াই ও আগত পর্যটকদের স্বস্তির সন্ধান

Sharing is caring!

তাপস দাশ শ্রীমঙ্গল:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী। সারাবছর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনায় মুখর থাকে এ শহর। কিন্তু শহরের শৃঙ্খলার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ফুটপাত দখলের প্রবণতা। জীবিকার প্রয়োজনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা রাস্তার পাশেই দোকান সাজিয়েছেন, আর তাতেই সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এতে শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই নয়, ভোগান্তিতে পড়ছেন পর্যটকরাও।
শহরের বাজার এলাকা ও প্রধান সড়কে প্রতিদিনই দেখা যায় ফলমূল, পোশাক ও হস্তশিল্পের পসরা নিয়ে বসা ব্যবসায়ীদের। কেউ স্থায়ী বাসিন্দা, আবার কেউ এসেছেন আশপাশের গ্রাম ও শহর থেকে। তবে সমস্যা হচ্ছে, এই অস্থায়ী দোকানপাট পথচারীদের চলাচল বাধাগ্রস্ত করছে, যানজট বাড়াচ্ছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে—শহরের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করতে কী করা উচিত? তবে জীবনের তাগিদে যারা ফুটপাতে বসে স্বপ্ন বুনছেন,  তাদের জীবিকা রক্ষা করেই কি কোনো মানবিক ও টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব?
শ্রীমঙ্গলের স্থানীয় বাসিন্দা কাজী সৌরভ বলেন, “শুধু উচ্ছেদ করলেই কি সমাধান হবে? যদি বিকল্প ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে তারা আবার নতুন কোনো জায়গায় বসবে।”
পর্যটক ফারিহা আহমেদ এঞ্জেলার মন্তব্য, “শ্রীমঙ্গল এত সুন্দর একটি শহর, কিন্তু ফুটপাত দখলের কারণে হাঁটতে কষ্ট হয়, যানজট লেগে থাকে।  শহরের সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ফুটপাত দখলের সমস্যার সমাধান জরুরি। তবে সেই সমাধান যেন জীবিকার শেষ আশ্রয় নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলোর স্বপ্ন ভেঙে না দেয়, বরং তাদের জন্য বিকল্প পথ সৃষ্টি করে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু উচ্ছেদ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। বরং বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এই ব্যবসাগুলোকে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে আনা প্রয়োজন। শহরের কোনো নির্দিষ্ট স্থানকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ করে দেওয়া যেতে পারে, যেখানে তারা শৃঙ্খলার সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবেন। এছাড়া ফুটপাত ব্যবসার জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ, স্বল্পমূল্যে সরকারি জায়গায় ছোট দোকান বরাদ্দ এবং ভ্রাম্যমাণ দোকানের মতো আধুনিক নীতিমালা চালু করার পরামর্শও দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে শ্রীমঙ্গলে পর্যটকদের চাপ আরও বাড়বে। এ সময় যানজট ও ফুটপাত দখল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছাবে।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন কল্যাণ পরিষদের সদস্যসচিব তারেকুর রহমান পাপ্পু বলেন, “ঈদের সময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক এখানে বেড়াতে আসবেন বলে আমরা আশাবাদী। এখন থেকেই যদি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও ফুটপাত ব্যবস্থাপনা নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে শহরের পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “পর্যটনবান্ধব শহর গড়ে তুলতে শুধু সমস্যার দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলবে না, সমাধানের পথও খুঁজতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের অনুরোধ, মানবিকতা ও শৃঙ্খলার সমন্বয়ে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক।”
শহরের সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকা রক্ষা করেও যদি সুপরিকল্পিত সমাধান বের করা যায়, তবে শ্রীমঙ্গল হতে পারে পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় এবং চলাচলের জন্য আরামদায়ক এক শহর।