মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা নাহার চা-বাগানের পার্শ্বে দুর্গম অরণ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রাচীনতম ৩০টিরও বেশি গিরিখাত। স্থানীয়দের দাবি, এসব গিরিখাতের দৈর্ঘ্য কোথাও এক কিলোমিটার, আবার কোথাও কয়েক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। এর কয়েকটি বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ভেতর ও প্রবেশ করেছে।
স্থানীয় আদিবাসীরা গিরিখাতগুলোর নাম দিয়েছেন লাসুবন, ক্রেম উল্কা, ক্রেম কেরি ইত্যাদি। ‘লাসুবন’ শব্দের অর্থ পাহাড়ি ফুল। এসব নামকরণ হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষানুসারে, আশপাশের বৃক্ষরাজি ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে। শুধু গিরিখাতই নয়, এর চারপাশে রয়েছে রহস্যময় গুহা, ছোট্ট ছোট্ট জলপ্রপাত, পাহাড়ি ঝর্না ও শিলা গঠন—যা মিলিয়ে পুরো এলাকাজুড়ে দিয়েছে সৃষ্টির অনন্য ও মনোমুগ্ধকর রূপ।
২০০০ সালে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনযাত্রা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে উপজেলা সমন্বয়কারী তাজুল ইসলাম জাবেদ প্রথম এসব গিরিখাতের সন্ধান পান। সে সময় স্থানীয় প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মী এলাকাটি পরিদর্শন করেছিলেন। তবে দুর্গম যাত্রাপথ ও জনসমাগমের অভাবে দীর্ঘদিন মানুষের নজরের বাইরে ছিল এসব স্থান। করোনাকালীন সময়ে চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় পর্যটন উদ্যোগও নেওয়া যায়নি।
গিরিখাতগুলোতে পৌঁছাতে হলে প্রথমে জিপ গাড়ি বা মোটরসাইকেলে যেতে হয় উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায়। এরপর কয়েক কিলোমিটার হেঁটে খাড়া ছড়া, ঘন বন ও পাথুরে উঁচু-নিচু পথে অগ্রসর হতে হয়। সীমান্তবর্তী এ এলাকায় মূলত খাসিয়া, চা-শ্রমিক ও অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস।
সম্প্রতি মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ ইসরাইল হোসেন এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ ইসলাম উদ্দিন লাসুবন গিরিখাত পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসক তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে লিখেছেন, “শ্রীমঙ্গলের নাহারপুঞ্জির নিকটস্থ লা-সুবহান (লা-সুবন) গিরিখাত ভ্রমণ করলাম। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর এই স্থান ভ্রমণপিপাসুদের জন্য হতে পারে আনন্দময় রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।”
ইউএনও জানান, পর্যটকদের সুবিধার্থে ইতোমধ্যে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে, বাকিগুলোও দ্রুত নির্মাণ করা হবে। তবে দুর্গম এলাকা হওয়ায় ভ্রমণকারীদের অবশ্যই অভিজ্ঞ গাইড সঙ্গে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন তিনি।
পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গহিন প্রাচীন অরণ্যে আবিষ্কৃত গিরিখাতগুলো যদি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা যায় এবং নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়, তবে তা শ্রীমঙ্গলের পর্যটন খাতে যুক্ত করবে আরেক এক নতুন অধ্যায়।
চা-বাগান, লেক, ঝর্না ও অরণ্যে ঘেরা এসব পাহাড়ি গিরিখাতকে ঘিরে ইতোমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আশার বাণী তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলো দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য হয়ে উঠতে পারে এক অনন্য রোমাঞ্চকর মনোমুগ্ধকর গন্তব্য।
স্থানীয়রা জানান, দুর্গম এই এলাকায় গিরিখাতগুলোর পাশাপাশি রয়েছে ছোট-বড় গুহা, জলপ্রপাত ও প্রাকৃতিক শিলার গঠন, যা ভ্রমণকারীদের কাছে হবে রহস্যময় অভিজ্ঞতা। তবে পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে গেলে সড়ক, ব্রিজ, নিরাপত্তা ও গাইড ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন জরুরি বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা মনে করছেন, এসব প্রাচীন গিরিখাত পরিকল্পিতভাবে পর্যটন মানচিত্রে যুক্ত হলে শ্রীমঙ্গলের পর্যটনের ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে নতুনভাবে পরিচিতি পাবে। এবং পর্যটকদের জন্য হবে আরেক নতুন অভিজ্ঞতার বাতিঘর।