Sharing is caring!

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার (৫ই সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারের এম সাইফুর রহমান অডিটোরিয়ামে দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম। এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের সভাপতি সৈয়দ তৌফিক আহমদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ড. আব্দুল মতিনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন এম সাইফুর রহমানের বড় ছেলে ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আলিমুল ইসলাম, বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ জি কে গউছ, সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক মো. ফয়জুল করিম ময়ূন, সদস্য সচিব মো. আব্দুর রহিম রিপন ও জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, “বাংলাদেশের প্রথম বৃহৎ সেতু যমুনা সেতু। এই সেতুটি নির্মানের প্রধান কারিগর ও স্থপতি এম সাইফুর রহমান। প্রথম বিশ্ব ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন তখন এই যমুনা সেতুতে টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করে বলেন, এ সেতুতে এত বিশাল অংকের টাকা দেয়া ঠিক হবে না। সাইফুর রহমান তার ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি বিশ্ব ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে যেভাবে পরিচালনা করেছেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে সেকারণে তার প্রতিও তাদের অনেক দুর্বলতা ছিল। তিনি বিশ্ব ব্যাংক কনভেন্স করে এই যমুনা সেতু নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য নিয়ে আসেন। অতি অল্পদিনে অল্প সুদের মাধ্যমে আমরা এ ঋনটি পেয়েছিলাম। যার ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে এ বৃহৎ যমুনা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু তিনি ছিলেন আত্মপ্রচারে বিমূখ, যেই জন্য বাংলাদেশের জনগণ জানেও না যে সাইফুর রহমানের কৃতিত্ব এই যমুনা সেতু প্রতিষ্ঠার পিছনে কে। বাংলাদেশের বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে অন্যান্য অঞ্চলে অনেক উন্নয়নের কাজ করে গেছেন। তিনি একজন বৃহৎ কৃতিত্ববান পুরুষ ছিলেন। কিভাবে তিনি বৃহত্তর সিলেট এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের নারী সমাজ ছিল সব সময় অবহেলিত। নারী শিক্ষার হার ছিল অনেক কম। সেখানে তিনি শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য এ কর্মসূচীর মাধ্যমে যে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছিলেন এ জন্য যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষ তাকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। সাইফুর রহমান তিনি ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন পুরুষ ছিলেন। এমনিতেও তিনি সিনিয়র ছিলেন। অর্থ মন্ত্রী হিসাবে বাংলাদেশের ভাগ্যের উন্নয়ন করার জন্য তার একটা প্রধান মূল দায়িত্ব তার কাঁধে জোয়াল লাগানো ছিল সেজন্য তিনি কখনো ম্রিয়মান ছিলেন না সব সময় হাসিখুশি ছিলেন। কিন্তু তার অন্যান্য কলিগদেরকেও যাকে যেভাবে হ্যান্ডেল করা দরকার সেভাবে হ্যান্ডেল করেছেন। মন্ত্রীরা তো তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়ার জন্য পাগল ছিল কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তিনি সময় দিতে পারতেন না। অনেক সময় অনেক মন্ত্রী কিছু কিছু সিনিয়ার মন্ত্রীও বিনা অ্যাপয়েন্টমেন্টে তার রুমে ডুকলে আমি দেখেছি তিনি দরজায় তাদেরকে থামিয়ে দিতেন বলতেন এই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসছো। অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া আসছো কেন? অর্থ মন্ত্রীর ব্যস্ততা আছে। দেশের কাজেই তো আমি ব্যস্ত। আমাকে এভাবে ডিস্টার্ব করবা না। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসো। এভাবেই মন্ত্রীদেরকে তিনি দরজা থেকে বিদায় দিতেন। এই তার ব্যক্তিত্ব ছিল। এইভাবে তিনি দেশের অর্থনীতির কর্মকান্ডে মনোনিবেশ করার জন্য তিনি টাইম বের করে নিয়েছেন। এবং দেশের জন্য যেভাবে যখন দেশ সেবা দেয়ার জন্য প্রযোজ্য সেটা তিনি দিয়েছেন।”
দোয়া মাহফিলে অন্যান্য বক্তারা বলেন, এম সাইফুর রহমান শুধু দেশের অর্থনীতি সংস্কারের নকশা তৈরি করেননি, বরং বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অঙ্গনে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা ও কর্মদক্ষতা আজও দেশের অর্থনীতির জন্য দিশারী হয়ে আছে। পরে এসএসসি’র অসচ্ছল ১০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন প্রধান অতিথি। পরে মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে সকাল ১১টা থেকে এম সাইফুর রহমানের নিজ বাড়ি বাহারমর্দানে কবরে সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা পৌর বিএনপি যুবদল, ছাত্রদল, কৃষকদল,মৎসজীবি দল সহ বিএনপি’র অঙ্গসংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় কবর জিয়ারতসহ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, খাবার বিতরণ করা হয়।