আজ মঙ্গলবার, ১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুলাউড়ায় স্কুল ছাত্রী হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন,আলামত উদ্ধারসহ হত্যাকারী গ্রেফতার 

editor
প্রকাশিত জুন ১৬, ২০২৫, ০২:২৭ অপরাহ্ণ
কুলাউড়ায় স্কুল ছাত্রী হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন,আলামত উদ্ধারসহ হত্যাকারী গ্রেফতার 

কুলাউড়ায় স্কুল ছাত্রী হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন,আলামত উদ্ধারসহ হত্যাকারী গ্রেফতার 

Sharing is caring!

রেডটাইমস ডেস্ক মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় স্কুল ছাত্রী নাফিস্থা জান্নাত আনজুম (১৫) হত্যায় ঘাতক ভিকটিমের প্রতিবেশী মো: জুনেল মিয়াকে (৩৯) গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া আসামির দেখানো মতে এবং পুলিশের তল্লাশীকালে হত্যাকাণ্ডের আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা ভিকটিমের পরিহিত বোরকা, স্কুল ব্যাগ, বই ও একটি জুতা উদ্ধার করে পুলিশ।
আজ সোমবার (১৬ জুন) মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি জানান, গত ১২ জুন সকাল ৭টায় পাশের সিংগুর গ্রামে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয় নাফিছা। এ বিষয়ে কুলাউড়ায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়।
নিখোঁজ এর দুই দিন পর ১৪ জুন বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে বাড়ির পাশের ছড়ার পাশে দূর্গন্ধ পেয়ে ভিকটিমের ভাই ও মামা অর্ধগলিত মরদেহটি খুঁজে পান এবং পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় থানায় ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) নোবেল চাকমা, কুলাউড়া সার্কেলের (অতিঃ দায়িত্বে) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আজমল হোসেন, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ গোলম আপ্সার, পুলিশ পুরিদর্শক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যসহ একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
দ্রুততম সময়ে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল (অতিঃ দায়িত্বে কুলাউড়া সার্কেল) নেতৃত্বে কুলাউড়া থানার অফিসারদের নিয়ে কয়েকটি বিশেষ টিম গঠন করে আশেপাশের বাপক তল্লাশী করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলের পাশে একটি ঝোপ থেকে ভিকটিমের স্কুল ব্যাগ, বই এবং একটি জুতা উদ্ধার করা হয়।
আমরা শুধু স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিশেষ ৬টি টিম গঠন করি। স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, আলামত উদ্ধারের জাগো এবং নারী ঘটিত কিছু বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্টতা দেখে সন্দেহ হওয়ায় আমরা জুনেল মিয়াকে আটক করি। পরবর্তীতে তার মোবাইল চেক করে পর্ন সাইটে ব্রাউজিং এর তথ্য দেখে আমাদের সন্দেহ আরও বাড়ে। পরবর্তীতে আমরা তাকে দুপুর থেকে রাত প্রায় ১২ টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে পুলিশ সুপারের সামনে রাত ১২ টার দিকে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে।
সে জানায়, ভিকটিম তার বাড়ির সামনের একটি রাস্তা দিয়ে প্রায়ই স্কুল ও প্রাইভেটে আসা যাওয়া করত। সেই সুবাদে জুনেল মিয়া ভিকটিমের সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে ঘটনার দিন গত ১২জুন ভিকটিম পাশের গ্রামে প্রাইভেট পড়া শেষে আসামীর বাড়ীর সামনের রাস্তা দিয়ে ফেরার পথে সকাল অনুমান ১০.৩০ ঘটিকার সময় আসামী ভিকটিমের সাথে কথা বলতে বলতে তার পিছু নেয়। ভিকটিম এড়িয়ে যেতে চাইলে জুনেল মিয়া ভিকটিমকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। তখন ভিকটিম চিৎকার করলে জুনেল মিয়া তার হাত দিয়ে গলায় চাপ দিয়ে ধরলে ভিকটিম ঘটনাস্থল কিরিম শাহ মাজারের মধ্যের রাস্তায় অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর ভিকটিমকে মোকাম সংলগ্ন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ার পাড়ে ঝোপে ফেলে রাখে।
মোকামের মাঠে পড়ে থাকা ভিকটিমের স্কুল ব্যাগ ও একটি জুতা ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী ঘন ঝোপে ফেলে দেয় এবং ভিকটিমের পরিহিত বোরকাটি নিকটবর্তী কিরিম শাহ মাজারের উত্তর পাশে জনৈক রওশন আলী গংয়ের পারিবারিক কবরস্থানের সীমানা বাউন্ডারী পর করিয়া ছুড়ে ফেলে দেয়।
পুলিশ আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার ১৫ জুন দিবাগত রাতে স্থানীয় লোকজন এবং মিডিয়ার উপস্থিতিতে ভিকটিমের সেই বোরখা উদ্ধার করা হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নোবেল চাকমা,পিপিএম; কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম আপছার, কুলাউড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্য।