আজ শনিবার, ৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হঠাৎ করেই ডলারের দাম বাড়তে শুরু করেছে

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪, ০৪:৫৭ অপরাহ্ণ

Sharing is caring!

Manual8 Ad Code

টাইমস নিউজ

Manual8 Ad Code

 

স্থিতিশীল বাজার । তবু হঠাৎ করেই ডলারের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক বাড়তি দামে রেমিট্যান্সের বৈদেশিক মুদ্রা কেনা শুরু করেছে।

Manual5 Ad Code

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে—এক মাস আগে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম সর্বোচ্চ ছিল ১১৯ টাকা। পরে তা বেড়ে ১১৯ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে। এরপর থেকে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডলারের দাম আরও বেড়ে ১২২ টাকায় ওঠে। কোনও কোনও ব্যাংক ১২৩ টাকায়ও রেমিট্যান্স কিনছে।

ব্যাংকগুলো আমদানিতে এসব ডলার সর্বোচ্চ ১২৪ টাকা করে বিক্রি করছে। আগের আমদানির দায় মেটাতে অনেক ব্যাংক গ্রাহকের পক্ষে আগাম ডলার কিনে রাখছে। এতেও ডলারের দাম বাড়ছে। ফলে বেড়ে যাচ্ছে আমদানি খরচ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সীমা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১২০ টাকায় ডলার বেচাকেনার কথা। নির্ধারিত দরের চেয়ে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশিতে ব্যাংকে ডলার বেচাকেনা হচ্ছে। তবে ব্যাংকগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে প্রণোদনা দিয়ে বাড়তি দাম সমন্বয় করবে বলে জানা গেছে। ফলে ডলারের দাম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সীমার মধ্যেই থাকছে।

বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, রেমিট্যান্সের ডলারের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় আমদানি এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) নিষ্পত্তির ডলারের দাম বেড়ে ১২৩.৮০-১২৫ টাকায় পৌঁছেছে। এতে আমদানি খরচ বেড়ে গিয়ে তা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিতে পারে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। তারা বলছেন, বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) তাদের ব্যাংক ১২৪.৮০ থেকে ১২৫.৬০ টাকা দরে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করেছে। অবশ্য এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে রেমিট্যান্সের ডলারের সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ১২৬ টাকা।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গত ১২ নভেম্বর এক সার্কুলার দিয়ে বলা হয়, এখন থেকে আমদানির দায় নিয়মিত শোধ করতে হবে। কোনও দেনা বকেয়া রাখা যাবে না। কোনও ব্যাংকের আমদানির দায় বকেয়া থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন হুঁশিয়ারির পর ব্যাংকগুলোতে আমদানির বকেয়াসহ চলতি দায় পরিশোধের চাপ বেড়ে যায়। এতে ডলারের চাহিদাও বাড়ে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় ব্যাংকগুলো আমদানির দায় পরিশোধ করতে গেলে ডলারের সংকট তৈরি হয়।

এই সংকটের সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে। আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও বাজারে ডলার বিক্রি করছে খুব কম। এমন পরিস্থিতিতে আমদানির দায় পরিশোধের জন্য চাহিদা অনুযায়ী ডলার মিলছে না। ফলে বাধ্য হয়ে যেসব ব্যাংকের আমদানির দায় বেশি তারা বাড়তি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কিনতে শুরু করেছে। কোনও কোনও ব্যাংক সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে। এর সঙ্গে সরকার থেকে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। সব মিলে প্রতি ডলারে প্রবাসীরা পাচ্ছেন ১২৬ টাকা।

এদিকে ৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মুদ্রানীতি বিষয়ক কমিটির সভায় ডলারের দাম নির্ধারণের বর্তমান পদ্ধতি ক্রলিং পেগ (একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থেকে ডলারের দাম ওঠানামা করা) থেকে বেরিয়ে আসার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ডলারের দামকে পর্যায়ক্রমে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। এছাড়া সম্প্রতি আইএমএফও ডলারের দাম নির্ধারণের ক্রলিং পেগ পদ্ধতি তুলে দিয়ে বাজারভিত্তিক করার প্রস্তাব দেয়।

Manual2 Ad Code

নাম প্রকাশ না করে বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আইএমএফ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলারের রেট নির্ধারণে ক্রলিং পেগ বাস্তবায়নের জন্য চাপ দিচ্ছে। সেখান থেকেই আমাদের ধারণা, আগামীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্কেট ওপেন করে দিয়ে ক্রলিং পেগ পুরোদমে চালু করতে পারে। ফলে ডলারের দাম বাড়তে পারে। এমন শঙ্কায় গ্রাহকরা তাদের পেমেন্টগুলো ক্লিয়ার করে দিতে চাচ্ছেন। একইসঙ্গে বিদেশি বড় এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোও এ সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

রেমিট্যান্সের রেট বেড়ে যাওয়ার জের ধরে এলসি নিষ্পত্তির ডলার রেট বেড়ে সর্বোচ্চ ১২৫ টাকায় পৌঁছেছে। এর আগে, ব্যাংকগুলো গ্রাহকভেদে ১২২-১২৪ টাকা দরে গ্রাহকদের কাছে ডলার বিক্রি করতো। এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ১২৪.৪০-১২৪.৬০ টাকা দরে গ্রাহকদের পক্ষে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৬.৪৪ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮.৮১ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরে সেটি বেড়ে হয়েছে ১১.১৪ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে দেশের ব্যাংক খাতে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২.৩৪ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে, আগামী কয়েক সপ্তাহে রমজানের পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা শুরু হবে। তখন ডলারের দর এমন থাকলে তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ব্যাংকাররা।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রেমিট্যান্সের ডলারের রেট আগের চেয়ে বেড়েছে। এর জের ধরে এলসি সেটেলমেন্টেও ডলারের রেট বেড়েছে। তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতিজনিত চাপ আসতে পারে। তবে সেটি খুব বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে না।

Manual5 Ad Code

এদিকে খোলা বাজারেও ডলারের দাম এখন বাড়তে শুরু করেছে। এছাড়া ভারত থেকে যেসব দেশের ভিসা নিতে হয়, সেগুলোও পাওয়া যাচ্ছে না। চিকিৎসার জন্যও ভারতে যাওয়া যাচ্ছে না।

 

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code