আজ বুধবার, ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডাকসু নির্বাচন ২০২৫; ১১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করল ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ১২:৩১ অপরাহ্ণ
ডাকসু নির্বাচন ২০২৫; ১১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করল ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’

Oplus_16908288

Sharing is caring!

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সামনে রেখে ১১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’।
ওই ইশতেহারে ক্যাম্পাসকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও অন্যান্য বিশেষ চাহিদার শিক্ষার্থীদের জন্য অ্যাকাডেমিক রিসোর্সকে সহজলভ্য করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন এ প্যানেলের প্রার্থীরা।
আদিবাসীদের প্রধান সামাজিক উৎসবের দিনগুলোতে অ্যাকাডেমিক ক‍্যালেন্ডারে ছুটি যুক্ত করার উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলেছেন তারা।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এসব ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা ইশতেহার ঘোষণা করেন।
জাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক:
স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটে নামা প্রার্থীদের থেকে বাছাই করে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামে প্যানেল গড়েছেন জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া উমামা ফাতেমা।
তার প্যানেলের জিএস প্রার্থী হয়েছেন আল সাদী ভূঁইয়া, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি। আরি এজিএস পদে লড়ছেন জাহেদ আহমদ।
১১ দফা ইশতেহার:
১. দলীয়করণ ও বিরাজনীতিকরণ মুক্ত অ্যাকাডেমিক ক্যাম্পাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কাঠামোতে দলীয়করণের পথ চিরতরে বন্ধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দলীয়করণ ও বিরাজনীতিকরণ যেন আর ফিরে না আসে, সেটা নিশ্চিত করা।
জুলাই অভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনা যথাযথ ডকুমেন্টেশন করা।
১৫-১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলায় জড়িত সবাইকে সরাসরি বিচারের আওতায় আনা এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া নিশ্চিত করা। প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন নিশ্চিত করা।
২. অ্যাকাডেমিক শিক্ষার মান, কারিকুলাম ও গবেষণা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের সবচেয়ে অবহেলিত খাত হলো গবেষণা। এ খাতের বাজেট ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশে নিতে ‘সর্বোচ্চ’ উদ্যোগ নেয়া। হল ও আবাসন উন্নতিকরণ, লাইব্রেরি ও রিডিং ফ্যাসিলিটি (পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল লাইব্রেরি, অনলাইন বুক রিজার্ভেশন, এয়ার-কন্ডিশনড রিডিং রুম এবং ২৪ ঘণ্টা স্টাডি স্পেস) উন্নয়ন এবং স্মার্ট টেক অবকাঠামো (স্মার্ট ক্লাসরুম, ক্যাম্পাস ওয়াইড হাই-স্পিড ইন্টারনেট, ক্যাম্পাস অ্যাপ (ইভেন্ট আপডেট, বাস ট্র্যাকিং, সেফটি হেল্পলাইন, এবং সিসিটিভি সিকিউরিটি) নিশ্চিত করা।
নিয়মিত শিক্ষক মূল্যায়নের ব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীদের ফিডব্যাকের ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের নীতি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া। উপস্থিতির ভিত্তিতে কোর্স নম্বর দেওয়ার নিয়ম শিথিল করার ব্যবস্থা করা; বিশেষ করে অসুস্থতা বা বৈধ কারণে অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে।
 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসকে উন্নত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান ও গবেষণায় সহযোগী বই প্রকাশ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া। বিভিন্ন ভাষাভিত্তিক জরুরি অনুবাদকর্মের উদ্যোগ নেওয়া।
৩. ক্যারিয়ার ও কর্মসংস্থান
১ম ও ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য রেজিস্ট্রার বিল্ডিং, ডিপার্টমেন্টের সেমিনার, লাইব্রেরিসহ শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত কাজের জায়গাগুলোতে ন্যায্য বেতনে পার্ট টাইম চাকরির সুযোগ তৈরি করা।
৪. ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা নেওয়া। ধর্মীয় উৎসবের দিন ও আগে-পরে দুই দিন কোনো পরীক্ষা না রাখার ব্যবস্থা করা। আদিবাসীদের প্রধান সামাজিক উৎসবের দিনগুলোকে অ্যাকাডেমিক ক‍্যালেন্ডারে ছুটির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া।
 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু ও আদিবাসী শিক্ষার্থীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য, নিপীড়ন ও হয়রানির বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি স্থায়ী প্রশাসনিক কমিটি গঠন।
৫. নারীবান্ধব ও সবার জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস
যৌন নিপীড়ন সেলকে সর্বোচ্চ কার্যকরী করা এবং যৌন নিপীড়নের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের আপডেট নিয়মিত অনলাইনে হালনাগাদ নিশ্চিত করা। আইনি সহায়তা সেল গঠন করা, যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা যেকোনো বিষয়ে আইনি পরামর্শ গ্রহণ করতে পারবে।
প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নিয়ে সাইবার সিকিউরিটি সেল গঠন করা। কোনো শিক্ষার্থী অনলাইন কিংবা অফলাইনে নিপীড়ন বা বুলিংয়ের শিকার হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া।
৬. স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং খাদ্যসংকট নিরসন
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে প্রশাসনিক ক্যান্টিন, ডাইনিং চালুর উদ্যোগ গ্রহণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে শিক্ষার্থীদের খাদ্যে ভর্তুকি আদায়।
শহীদ ডা. মো. মোর্তজা মেডিকেল সেন্টার সংস্কার করা। এর আধুনিকায়ন ও পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য ই-হেলথ প্রোফাইল গঠন করা।
প্রতিটি হলে ২৪ ঘণ্টা মেডিকেল সাপোর্টের ব্যবস্থা রাখা। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বড় পরিসরে কাউন্সেলিং সেন্টার ও হেল্পলাইন চালু।
৭. আবাসন সমস্যা দূরীকরণ
শতভাগ আবাসন ব্যবস্থার লক্ষ্যে রূপরেখা তৈরি ও তা নিশ্চিতে উদ্যোগ নেয়া।
৮. পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতিকরণ
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোর আপ ট্রিপ ও ডাউন ট্রিপ সংখ্যা বাড়ানো। রাত ৮টা পর্যন্ত ডাউন ট্রিপ বাড়ানো।
৯. ডিজিটালাইজেশন
বিজনেস ফ্যাকাল্টির ই-লাইব্রেরি পুনরায় চালু করা। ভর্তি থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট তোলা পর্যন্ত সব আর্থিক লেনদেন এবং হল ও ডিপার্টমেন্টের সব দাপ্তরিক স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করা। ক্যাম্পাসের ‘হটস্পটগুলো’ চিহ্নিত করে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবস্থা করা।
১০. খেলাধুলা ও শরীরচর্চা
সম্ভাবনাময় ক্রীড়াবিদদের জন্য বৃত্তি এবং ইনজুরিকালীন আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচক প্যানেল গঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন খেলার দল গঠন করা।
১১. পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার জন্য কাজ করা।