আজ বুধবার, ৪ঠা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায়  ‘শিক্ষা অনির্বাণ বাংলাদেশ’র বিশেষ সম্মাননা পেলেন ডা. মোশতাক আহমেদ ও ডা. ফারহানা আনাম

editor
প্রকাশিত জুন ২, ২০২৫, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ
বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায়  ‘শিক্ষা অনির্বাণ বাংলাদেশ’র বিশেষ সম্মাননা পেলেন ডা. মোশতাক আহমেদ ও ডা. ফারহানা আনাম

Oplus_16908288

Sharing is caring!

সিনিয়র প্রতিবেদক:
সন্তান না হওয়া বা ইনফার্টিলিটি সমস্যার চিকিৎসায় বাংলাদেশে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে নিরলস ভূমিকা পালন করায় বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মোশতাক আহমেদ ও ডা. ফারহানা আনাম-কে বিশেষ সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত করেছে ‘শিক্ষা অনির্বাণ বাংলাদেশ’।
সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০০৩ সাল থেকে এই চিকিৎসক দম্পতি দেশে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় পথিকৃতের ভূমিকা পালন করে আসছেন। তাঁদের হাত ধরেই বাংলাদেশে প্রথম ইকসি ( intracytoplasmic sperm injection) শিশুর জন্ম হয়, যার বয়স বর্তমানে ২১ বছর। এরপর তাঁরা শত শত দম্পতির মুখে হাসি ফুটিয়েছেন এবং দেশের শীর্ষ ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে ‘শিক্ষা অনির্বাণ বাংলাদেশ’-এর পরিচালক ড. মুহাম্মদ আতাহার উদ্দিন বলেন— “ডা. মোশতাক আহমেদ ও ডা. ফারহানা আনামের মতো গবেষক ও চিকিৎসকরা আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাঁদের উদ্যমেই বাংলাদেশে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা আজ একটি প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা শাখায় পরিণত হয়েছে।”
পরাগরেণু ও মধুর পুষ্টিগুণ নিয়ে ব্যতিক্রমী গবেষণা
ইনফার্টিলিটি চিকিৎসার পাশাপাশি এই দুই গবেষক মধু ও পরাগরেণুর পুষ্টিগুণ এবং তা মানবদেহে হজমযোগ্য কিনা—তা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যতিক্রমধর্মী গবেষণা পরিচালনা করেছেন। মূল প্রশ্ন ছিল, মৌমাছির হজমপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া পরাগরেণু মানুষের দেহে হজম হয় কিনা এবং পুষ্টিগুণ বজায় থাকে কি না।
২০২১ সালের মার্চে দিনাজপুরের একটি মৌচাষ খামার (ডক্টর হানি) থেকে সংগ্রহ করা কাঁচা লিচু ফুলের মধু থেকে পরাগরেণু আলাদা করে pH ≈ 2 মাত্রার সাইট্রিক অ্যাসিডে পরীক্ষা চালানো হয়। গবেষণায় আরও দেখা যায়, সরাসরি প্রকৃতি থেকে সংগৃহীত কাঁচা পরাগরেণুকে pH ≈ 2 মাত্রার সাইট্রিক অ্যাসিডে ভিজিয়ে রাখলেও অধিকাংশ পরাগরেণু ভাঙেনি, যা প্রমাণ করে এর বাইরের আবরণ কতটা শক্ত। এ থেকে বোঝা যায়, মানবদেহে এমন পরাগ সরাসরি খেলে তা হজমযোগ্য নয়।
বিপরীতে, মৌমাছির হজমপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া পরাগ মৌচাকের মধুর সঙ্গে আধা-ভাঙা অবস্থায় থাকে, ফলে তা মানবদেহে সহজেই হজম হয় এবং পুষ্টিগুণ সহজে শোষণযোগ্য হয়।
এই গবেষণা প্রমাণ করে, মৌচাকের মধুতে থাকা পরাগরেণু মৌমাছির হজমপ্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যেই আংশিক ভেঙে যায়, যা মানুষ সহজেই হজম করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।
পরাগরেণুতে রয়েছে প্রায় ২২.৭% প্রোটিন, ১০.৪% অ্যামিনো অ্যাসিড, পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল, ফ্যাট ও ফ্ল্যাভোনয়েড—যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যানসার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখতে পারে।
মানবদেহে সেলুলোজ ভাঙার উপযুক্ত এনজাইম না থাকলেও, মৌমাছির হজমতন্ত্রে থাকা bifidobacterium ও coryneform জাতীয় উপকারী ব্যাকটেরিয়া এই কঠিন প্রাচীর ভাঙতে সক্ষম, ফলে মধুর পরাগ মানবদেহে অধিক হজমযোগ্য হয়।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষত আমেরিকায় বিক্রি হওয়া অধিকাংশ মধু থেকে পরাগরেণু ফিল্টার করে বাদ দেওয়া হয়, যাতে মধু জমে না বা স্ফটিকায়িত না হয়। কিন্তু এতে করে মধুর প্রকৃত পুষ্টিগুণ অনেকটাই হারিয়ে যায়।
এই প্রেক্ষাপটে গবেষকদের সুপারিশ—পরাগরেণু সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক মৌচাকের মধুই সর্বোত্তম পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করে, যা ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক ইনফার্টিলিটি চিকিৎসায়ও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
ডা. মোশতাক আহমেদ ও ডা. ফারহানা আনামের এই গবেষণা শুধু মধুর পুষ্টিগুণ নয়, বরং প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের সম্ভাবনা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। তাঁদের এই গবেষণা ইতোমধ্যেই দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে এবং ইনফার্টিলিটি চিকিৎসায় এক নতুন প্রাকৃতিক দিগন্তের ইঙ্গিত দিচ্ছে।