আজ বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজনগরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ধৌলাইয়ে কাজের বিলে অনিয়ম দুর্নীতি

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ৭, ২০২৫, ০২:১২ অপরাহ্ণ
রাজনগরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ধৌলাইয়ে কাজের বিলে অনিয়ম দুর্নীতি

Sharing is caring!

Manual2 Ad Code

মো: জাফর ইকবাল:

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিয়ম দুর্নীতি আখড়ায় পরিনত হয়েছে। দুর্নীতি যেন পিছু ছাড়ছেনা। বিভিন্ন খাত দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারী হরিলুটে ব্যস্ত। জবাবদাহিতার কোন চিন্তাই নাই। ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৩ লাখ মানুষের জন্য একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্রে সেবার নামে চলছে বাণিজ্য। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯ বেডের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় ধৌলাইয়ের কাজে ভূতুরে বিল তৈরী করে গত ২৪-২৫ অর্থ বছরে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে লাখ লাখ টাকা। এই সময় ছিলনা নিয়োগ প্রাপ্ত কোন ঠিকাদার। কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রন করে এই সব কাজের।

Manual6 Ad Code

অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯ বেডের এক বছরে ধৌলাইয়ে বিছানা চাদর ১১ হাজার ৮ শতাধিক, মশারি ৪ শত, কম্বল ৩ হাজার, দরজার পর্দা ৫ শত, জানালার পর্দা ৫ শত, বালিশের কাভার ১১ হাজার ৩ শতাধিক, ওটি জামা গাউন ৫ শত, ওটি ড্রেস জামা ২ শত, ওটি ড্রেস পায়জমা ২ শত, ওটি ড্রেস ক্যাপ ২ শত, তোয়ালে ৫ শত, এপ্রোন ৩ শত, মেট্রেস কাভা ১৫ শত ধৌলাই দেখানো হয়।

রাজনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৩ লাখ মানুষের জন্য একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র রাজনগরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হলেও বর্তমানে ১৯ শয্যা চলছে। আর এই ১৯ শয্যার বিপরীতে ব্যবহারে পরবর্তীতে জীবাণু মুক্ত করার জন্য উপরোক্ত কাপড় ধৌলাইতে দেওয়া হয়। জরিপে দেখা যায় প্রতি বেডে প্রতিদিন দুইবার বিছানা চাদর, বালিশ কাভার সহ অন্য গুলো পাল্টানো হয়। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি রোগী প্রতিদিন বিছানা চাদর, বালিশ কাভার ৩ দিনেও পাল্টানো হয়না। জীবাণু যুক্ত এই সব চাদর, কাভার সহ অন্যান্য জিনিষ পত্র ব্যবহারের ফলে ছড়াচ্ছে রোগ জীবাণু। এই সমস্ত জিনিস পত্রের ধৌলাই বিল দেখিয়ে ভূতুরে বিল তৈরী করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বড় অন্কের টাকা।

Manual4 Ad Code

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব কাজের ঠিকাদার বা লন্ডির নাম ঠিকানা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারনে এই বিষয়ে উদাসীন।

রোগী ফারুক মিয়া জানান আমরা ময়লা বেডের মাঝে আছি। একদিন পর পর ময়লা কাপড় নিয়ে নেয়। আবার ধোয়ে- ধোয়ে দিয়ে দেয়। পরিমাণ অনুযায়ী আমরা জিনিস পাই না। সরকার থেকে দেয়, তারা মারিয়া খাইলায়। কয়দিন পর পর তারা নিয়ে রাখেন, ২ দিন পর আবার ফিরত দেইন।

Manual3 Ad Code

রাজনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোগীরা জানান আজ আমরা এসেছে দেখে ময়লা বিছানা চাদর, মশারি কিছু দেইন না। একটা বেড ও পরিষ্কার নায়। আমরা রোগীদের ত মিলে না। ময়লা ঠিক আছে কাপড়। বিছানা চাদর আনিয়া রাখি দেন, আমরা বিচাই। এসব বেডে মানুষ ঘুমাবে না। আজ রোগী বলে ঘুমাচ্ছে। কারেন্ট চলে গেলেই মশায় ধরে। তারা লিস্টে ত সব কিছু আছে, মশারি,বেড। কিন্তু আমরা ত কিছু পাই না। সরকারি মাল যারা সরকারি দ্বায়িত্বে আছে সব তারা হলিলুট করে।

রাজনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর সিনিয়র স্টাফ নার্স শিউলি বলেন, প্রতিদিন রাতের বেলায় পাল্টিয়ে দেওয়া হয়। যার যখন লাগে বেড, এখান থেকে এসে নেয়। ময়লা বেড গুলো প্রতি দিন ধোপাতে যায়। আর ধোপা থেকে যে গুলো আসে সেগুলো রোগীকে দেওয়া হয়। ১৫টা, ১২ টা ৯ টা রোগীর পরিমাণে।
রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হিসাবরক্ষক রতন মনি দাস বলেন, রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেডগুলো রোগীর উপরে নির্ভর রয়েছে। রোগী যদি ১০ টা হয়, ১০ টা বিল আসবে। ১২ টা হলে ১২ বিল আসবে।যতজন ভর্তি রোগী হবে, ততজনের।

ঠিকাদারের বিষয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন তথ্য দিতে নারাজ। ফলে ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

Manual4 Ad Code

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অসীম কুমার বিশ্বাস বলেন, ১৯ বেড বিছানা চাদর হিসাব হবে না, ৩১টা বেড হিসাব হবে। প্রতিদিন রোগী ভর্তি যতটা বেড থাকবে ততটা পরিপূর্ণ থাকে। মাঝে মাঝে ২/৩ টি কম থাকে। আমাদের ১৯ টি বেড আছে মাঝে মধ্যে ১৭-১৮ টি বেড পরিপূর্ণ থাকে।

মৌলভীবাজার জেলার সিভিল সার্জন,ডা. মোঃ মামুনুর রহমান অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে তিনি স্বীকার করে বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতি আগে হয়েছে, হয়তো বা হইতে পারে। এখন নতুন যে বিল্ডিং সেটা ১৯ বেডের। এই এক্সটেনশন বিল্ডিং বেড দিয়ে যখন রোগী বেশি আসে তখন বেড দিয়ে রোগী ভর্তি দিচ্ছে। আপনারা যে বলতেছেন যে বেড কভারে সমস্যা। আমি এটার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আমি নিজেই ইনসিটিভ নিয়ে কিছু জোগায় করে দিয়েছি। গত অর্থ বছরে ঠিকাদার ছিলনা। তাই ঐ দায়ীত্ব গুলো আমি দেখেছি।

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code