আজ সোমবার, ৩০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন : বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিরোধীদলকে নিষিদ্ধ করা কোনো সমাধান নয়

editor
প্রকাশিত জুন ২৭, ২০২৫, ০২:২৩ অপরাহ্ণ
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন : বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিরোধীদলকে নিষিদ্ধ করা কোনো সমাধান নয়

Oplus_16908288

Sharing is caring!

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
১৯৭১ সালে রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের।
তবে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি। মাত্র চার বছরের মাথায় সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে থেমে যায় সেই স্বপ্নের যাত্রা।
২০২৪ সালে আরেকটি বড় পরিবর্তনের সাক্ষী হয় দেশটি—১৫ বছরের একচ্ছত্র শাসনের অবসান ঘটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতনের মধ্য দিয়ে।
জনগণের চাপ ও আন্দোলনে জন্ম নেয় অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকার, যার নেতৃত্বে থাকেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশজুড়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশা জেগে ওঠে।
তবে বাস্তবতা বেশ কঠিন। বহু বছরের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের ফলে দেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর থেকে জনআস্থা উঠে গেছে, এবং দুর্নীতি, দমন-পীড়ন আর অর্থনৈতিক অস্থিরতা যেন প্রাত্যহিক বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশে তরুণদের এক-পঞ্চমাংশ বেকার—যা একটি বিপজ্জনক সামাজিক চিত্র তুলে ধরে।
অন্তর্বর্তী সরকার কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি দেখিয়েছে—অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা কিছুটা ফিরেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা পুনরায় পাওয়া শুরু হয়েছে।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকারও দিয়েছে তারা।
তবে এই সরকারকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে, বিশেষত পররাষ্ট্র নীতিতে চীনের দিকে দৃশ্যমান ঝুঁকে পড়া এবং আঞ্চলিক সম্পর্কের অবনতি নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র, যেটি বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের অন্যতম প্রধান গন্তব্য, তাদের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিচ্ছে।
 একইসঙ্গে ভারতের সঙ্গেও কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য সুখকর নয়।
সবচেয়ে বিতর্কিত পদক্ষেপগুলোর একটি হলো, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা। এটি একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি দলীয় প্রতিহিংসার ইঙ্গিত দিতে পারে।
যদিও দলটির শীর্ষ পর্যায়ে কিছু নেতার বিরুদ্ধে দায় আছে, তবে দলের সব কর্মী বা সমর্থক যে অপরাধে জড়িত—তা বলা যাবে না।
রাজনীতি মানেই প্রতিযোগিতা, মতবিরোধ, তর্ক। কিন্তু এর মানে কখনোই সম্পূর্ণ একটি রাজনৈতিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া নয়। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ধরে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি বড় শক্তি হয়ে আছে।
তারা হয়তো আগামী নির্বাচনে জিতবে না, কিন্তু তাদের সংসদীয় উপস্থিতি গণতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে ভূমিকা রাখতে পারে।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গঠনের পথে হাঁটতে হলে প্রতিশোধ নয়—প্রয়োজন পুনর্মিলন ও অন্তর্ভুক্তি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এক সংকট ও সম্ভাবনার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ভিন্নমতকে সুযোগ হিসেবে দেখার মনোভাব না থাকলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার যাত্রাও অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।সূত্র: দ্যা ইকোনমিষ্ট