সুইটি এক অসহায় মেয়ে। ছোটকাল থেকে বাবা-মা তার খবর নিতেন না। খালা আকলিমার আদরে তার বেড়ে ওঠেছে সে। দেড় বছর পূর্বে গোপনে খালু নাজমুল সুইটির বিয়ে দেন নুর ইসলামের সঙ্গে। নুর ইসলাম এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। বিয়ের পর থেকেই নুর ইসলাম সুইটিকে প্রতিনিয়ত মারপিট করতেন। গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে খালু নাজমুল ফোনে স্বামী সুইটির পরিবারকে জানান, সে মারা গেছে। খবর পেয়ে স্বজনরা এসে সুইটির মরদেহ দেখতে পান। ঘরে কাঁদছিল ৪ মাসের দুধের শিশু। পাশে পড়েছিল মায়ের নিথর দেহ। শিশুর কান্নায় সাড়া দেননি মা। পাষন্ড বাবা পিটিয়ে মাকে মেরে পালিয়ে গেছে এমনটাই বলছেন এলকাবাসী ও স্বাজনেরা।
গতকাল বুধবার রাত দশটার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের বরমী গ্রামের মধ্য পাড়া এলাকার শাজাহান মৃধার বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
নিহত সুইটি আক্তার নিশি(২০) ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার চাকুয়া গ্রামের আফসারুল ইসলামের মেয়ে। অভিযুক্ত স্বামী নুরুল ইসলাম (৩৫) উপজেলার বরমী গ্রামের মো. শাজাহান মৃধার ছেলে।
জানা গেছে, দেড় বছর আগে সুইটির সঙ্গে নুর ইসলামের বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে ৪ মাসের এক মেয়ে রয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করেছে। সেই সঙ্গে শাশুড়ি জোবেদাকে আটক করেছে।
সুইটির মামা জসিম শেখ বলেন, ‘আমার ভাগ্নি বড় অসহায়। ছোটবেলা থেকে বাবা-মা তার খবর নিতেন না। আমার এক বোনের কাছে তার বেড়ে ওঠা। উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় গোপনে খালু নাজমুল নুর ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে দেন। আমরা বিয়ে মেনে নিতে পারিনি। নুর ইসলাম এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। বিয়ের পর থেকে মাদকাসক্ত নুর ইসলাম সুইটির উপর নির্যাতন করতেন।
এ নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। বুধবার রাত ১০টার দিকে ঘটক নাজমুল ফোন করে জানান, সুইটি মারা গেছে। খবর পেয়ে আমরা দৌড়ে নুর ইসলামের বাড়িতে এসে ভাগ্নির মরদেহ দেখতে পাই। তাকে মেরে নুর ইসলামসহ বাড়ির লোকজন পালিয়ে গেছে। রাতেই পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে সুইটির মরদেহ উদ্ধার করেছে। সুইটির দুই পা হাঁটুর নিচে থেতলানো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত প্রতি ইঞ্চি শরীরেও মারপিটের চিহ্ন। নুর ইসলাম পিটিয়ে আমার ভাগ্নিকে মেরে পালিয়েছে।’
নিহতের খালা আকলিমা জানান, বিয়ের পর থেকেই সুইটির ওপর নির্যাতন করতেন নুর ইসলাম। বুধবার রাতে পিটিয়ে সুইটিকে মেরে তিনি পালিয়ে গেছেন। ৪ মাসের দুধের শিশুর পাশেই মাকে পিটিয়ে মেরেছেন নুরু। শিশুটির শরীরেরও আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। শিশুটি এখন মায়ের জন্য হাহাকার করছে। এ শিশুটিকে আমরা কোথায় নিব। আমাদের সামর্থ নেই শিশুটিকে পালার।
শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এস আই) মো.জাহাঙ্গীর জানান, খবর পেয়ে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে। স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।