আজ শনিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঘায় আনিসুরকে গলা কেটে হত্যার দায় স্বীকার করেছে রায়হান আলী 

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২৫, ২০২৪, ০২:৫৯ অপরাহ্ণ
বাঘায় আনিসুরকে গলা কেটে হত্যার দায় স্বীকার করেছে রায়হান আলী 

Sharing is caring!

দোয়েল, বাঘা  (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ
 রাজশাহীর বাঘায় বাক প্রতিবন্ধী দিনমজুর আনিসুর রহমান (৪২)কে গলা কেটে হত্যার দায় স্বীকার করেছে তার আপণ ভাইরা ভাই রায়হান আলী (৪২)। হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে তার ভাইরা ভাই আনিসুর রহমানকে গলা কেটে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে তার বাড়ির পাশের গ্রাম মনিগ্রামের বজলুর রহমান মাষ্টারের আম বাগানে নিয়ে গিয়ে একাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। তাকে হত্যা করলে আনিসুর-পারভীন দম্পতির মাধ্যমে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণে নেওয়া টাকা পরিশোধ করা লাগবে না-এমন মানষিকতা নিয়ে হত্যা করেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে সে।  পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
 হত্যাকারি রায়হান আলী বাঘা উপজেলার  মনিগ্রাম ইউনিয়নের দেবত্ত বিনোদপুর গ্রামের মৃত সাদেক আলীর ছেলে। নিহত আনিসুর রহমানের বাড়ি  একই উপজেলায় ও  ইউনিয়নের তুলশীপুর গ্রামে। তিনি গ্রামের মৃত শামসুল মোল্লার ছেলে । শুক্রবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে মনিগ্রাম বাজারে যান ভায়রা ভাইয়ের কাছে কিস্তির টাকা নিতে। সেখান থেকে ফেরার পর নিখোঁজ হন তিনি। পরদিন পাশের গ্রামের একটি আমবাগানে গলাকাটা লাশ পাওয়া যায় আনিসুরের।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, দিনমজুরির আয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার খরচ চালাতেন বাক প্রতিবন্ধী আনিসুর রহমান।  এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের টাকায় আধাপাকা ঘর তৈরি করেছেন। ধীরে ধীরে ঋণের কিস্তিও শোধ করছিলেন। সব মিলিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল।
তারা জানান,আনিসুর ছিল সরল-সহজ মানুষ । কেউ ভালো করে কথা বললেই তাঁর সঙ্গেই চলে যেতেন। কোনো রকম নেশায় আসক্ত ছিলেন না। আনিসুর বাকপ্রতিবন্ধী হিসেবে ভাতা পেতেন।  বছর তিনেক আগে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণের টাকা উঠায়ে রায়হানকে দিয়েছিলেন আনিসুর-পারভীন দম্পতি।
 নিহত আনিসুর রহমানের স্ত্রী পারভীন বেগম জানান, তাঁর বোন সাথী বেগমের স্বামী রায়হান আলীর সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে দেখে বিভিন্ন  এনজিও থেকে টাকা তুলে দিয়েছিলেন। শুক্রবার বিকেলে  রায়হানের কাছ থেকে কিস্তির সেই টাকা নিতে বাড়ি থেকে বের হয়ে মনিগ্রাম বাজারে যান স্বামী আনিসুর। পরে আর ফেরেননি। শনিবার সকালে মনিগ্রামের একটি আমবাগানে স্বামীর গলাকাটা লাশ পড়ে থাকার সংবাদ পান তারা।
পারভীন বেগমের ভাষ্য, স্বামী-স্ত্রীর যৌথ স্বাক্ষরে আশা এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। মাসে পাঁচ হাজার টাকা কিস্তি ও এক হাজার টাকা ডিপিএস জমা দিতে হয়। মোট ১১ কিস্তিতে ঋণ শোধ করার কথা। মাত্র একটি কিস্তি শোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া আইডিএফের কাছে তাঁর ঋণ ৫০ হাজার টাকা। সপ্তাহে ১ হাজার ৩০০ টাকা কিস্তি দিতে হয়। ৪৬ কিস্তির মধ্যে দুটি শোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া দিশা থেকে ঋণ নিয়েছেন ৬০ হাজার টাকা। ১ হাজার ৬০০ টাকা সাপ্তাহিক কিস্তি। ৪৬ কিস্তির মধ্যে ৩০ কিস্তি শোধ করেছেন। মাসে ৭ হাজার টাকা কিস্তিতে টিএমএসএস থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ করেছেন। ১১ কিস্তির মধ্যে সাতটি বাকি। এর বাইরেও দুই মাস আগে ব্যুরো বাংলাদেশ থেকে ৬ মাস মেয়াদে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এই ঋণ একবারেই শোধ করতে হবে। পারভীন বলেন, ব্র্যাক বাংলাদেশ থেকে মাসিক ৪ হাজার টাকা কিস্তিতে তারা ঋণ করেছেন ৪০ হাজার টাকা। ১১টি কিস্তির মধ্যে ৭-৮ কিস্তি দিয়েছেন। ডাক নামের আরেকটি এনজিও থেকে মাসিক ৯ হাজার টাকা কিস্তিতে তাদের ঋণ নেওয়া ৯০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শোধ হয়েছে ৯ কিস্তি। পারভিন জানান,এসব ঋণের মধ্যে আশা এনজিও এবং ব্যুরো বাংলাদেশ থেকে ঋণে নেওয়া টাকার কিস্তি নিজেরা চালাতেন। বাকি পাচটির টাকা তুলে রায়হান আলীকে দিয়েছেন। তিন বছর ধরে বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে রায়হানকে দিয়েছেন তারা। কিস্তি দিতেও হাল করেননি। কিন্ত কি ভাবে কি হয়ে গেল বুঝতে পারছিনা।  কান্না ভেঙে পড়ে আনিসুরের স্ত্রী পারভীন বেগম বলেন, এখন বিপুল অঙ্কের টাকার কিস্তি  ও সংসার খরচ চালাবেন কীভাবে । ছেলে-মেয়ের দেখভাল কে করবে? কেইবা জোগাবে ঋণের কিস্তির টাকা?
আনিসুর-পারভীন দম্পতির তিন সন্তান। বড় মেয়ে আল্পনার বিয়ে হয়েছিল। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর বাবার বাড়িতেই আছেন। ছোট মেয়ে মদিনার বয়স সবে সাত। সবার ছোট সোহাগ। তার বয়স মাত্র এক বছর। আনিসুরের মা সত্তরোর্ধ্ব আনজেরাকে কখনো বড় ছেলে আনিসুর কখনো তার ছোট ছেলে আনারুল দেখভাল করেন।
এ বিষয়ে আনিসুরের ছোট ভাই আনারুল ইসলাম ও চাচাতো ভাই কবি হাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, শুক্রবার রাত ১০টায়ও যখন তিনি বাড়ি ফেরেননি, তখন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিতে থাকেন। শনিবার সকাল ৮টার দিকে জানতে পারেন, মনিগ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বজলু রহমানের আমবাগানে লাশ পড়ে আছে। আত্মীয়স্বজন সেখানে গিয়ে শরীরের পোশাক দেখে তাঁকে শনাক্ত করেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। রায়হান গ্রেপ্তারের আগে জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে সন্ধ্যার পরই আনিসুর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।
চারঘাট-বাঘা সড়কের পূর্বদিকে আনিসুরের বাড়ি। পথেই চায়ের দোকান রয়েছে বজলু মিয়ার। বাড়ি ফেরার পথে মাঝে মধ্যেই এখানে বসতেন আনিসুর। শুক্রবার রাত ৮টার দিকেও এসেছিলেন। বজলু মিয়া বলেন, কিছুক্ষণ পরই চলে যান।
 হত্যার দায় স্বীকারের পর হতভম্ব রায়হান আলীর স্ত্রী সাথী বেগম।
 বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু সিদ্দিক বলেন, তিনিসহ চারঘাট-বাঘার সার্কেল সিনিয়র এএসপি প্রণব কুমার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও রায়হান এবং আনিসুরের স্ত্রীসহ চা দোকানীর সাথে কথা বলে এবং সিসি ফুটেজে রায়হানকে হত্যার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহ করা হয়। শুক্রবার রাতে রায়হান আলীকে গ্রেপ্তার করলে সে ভায়রা আনিসুরকে হত্যার দায় স্বীকার করে।
 এ বিষয়ে নিহত আনিসুরের স্ত্রী পারভিন বাদি হয়ে হত্যা মামরা দাযের করেছে বলে জানান বাঘা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সিদ্দিকুর।