আজ শুক্রবার, ২৪শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একগুচ্ছ কবিতা

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ৮, ২০২৫, ০৪:০৬ পূর্বাহ্ণ
একগুচ্ছ কবিতা

Sharing is caring!

Manual6 Ad Code

 

এইচ বি রিতা

 

 

মহাবিশ্বের জটিলতা

তারা বলে, মহাবিশ্বের সীমানা নেই, কিন্তু আমি জানি, এ কেবল ধারণা-অন্তহীনতা, যতদূর চোখ যায়, তার চেয়ে আরও বিস্তৃত, অণু থেকে আলোকবর্ষ—সবকিছু একে অপরকে ছোঁয়।

 

গ্যালাক্সির জন্ম, নক্ষত্রের মৃত্যু, এ এক অদৃশ্য নিয়মে বেঁধে থাকে-আধিক্য ও শূন্যতার খেলা। ভ্রাম্যমাণ সময়, স্থানপথের সীমানা ছুঁয়ে, অভিযান হয়ে ওঠে অবিনাশী—অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ মিলিয়ে এক।

 

কী অদ্ভুত এই শূন্যতা, কী রহস্য তার মাঝে? একই সময়ে সবকিছু আলাদা, একইভাবে একত্রিত। অণু থেকে কোয়ান্টাম, আমি আর তুমি—এক, এ কি মহাবিশ্বের সঙ্গীত? যেখানে অবিরত ক্ষণবোধ।

 

চলে যায় সব—চিরন্তন, নির্বিকার, আমাদের অস্তিত্ব মহাকাশের মাটির মতো। জন্ম এবং মৃত্যু শুধুই এক সন্নিহিত আবর্তন, এক জটিলতা হায়! কে জানে তার শেষ কোথায়?

 

 

 

Manual7 Ad Code

রক্তমাখা শার্ট

Manual4 Ad Code

 

রক্তমাখা শার্ট ঝুলে আছে বাতাসে,
যেন যুদ্ধের পরে শূন্যে ভাসমান স্মৃতি।
এই তো মানুষ—এখনও দাঁড়িয়ে,
তবু কোথাও সে ভেঙে পড়ে একাকী।

 

শার্টের কাপড়ে লেখা আছে ইতিহাসের অক্ষর,
প্রশ্নহীন রক্তের কলমে।
কোন শহীদ, কোন পথিক, কোন বিদ্রোহী
এই রক্তে ভিজে ছিল শেষবার?

নীরবতার চাদর মেলে আকাশে রক্তের দাগেরা

জ্বলজ্বল করে! এ কী মানুষের পরাজয়?
নাকি জীবনের অনন্ত মঞ্চে এরও আছে এক

নিজস্ব শোকগাথা?

 

এই শার্ট-স্তব্ধ, তবু বোধিপ্রসূত।
মানবতার কান্নার সংকলন, যা যুগে যুগে রচনা

করেছে এক অমোঘ পুঁথি।
যতক্ষণ এটি ঝুলে থাকে বাতাসে, ততক্ষণ মনে পড়বে-
রক্ত কখনো থামে না,
কখনো শুকায় না ইতিহাসের বুকে।

 

যে শার্ট একদিন ঢেকে রেখেছিল এক জীবন্ত কাউকে,
আজ তা ছায়ার মতো ফেলে যাচ্ছে এক অমর প্রতিধ্বনি।

 

 

পথ, মাটি, শেকড়ের খোঁজে

 

পথটা শুরু হয়েছিল শৈশবের এক গলিপথে,

যেখানে মাটির গন্ধে ভিজে উঠত পায়ের পাতা।
সেখানে খুঁজে পেয়েছিলাম দিগন্তের ছায়া,
আর শেকড়ের আদিম বাঁধন।
কিন্তু সেই পথটা ঝাপসা হয়ে গেল কবে,
জানি না।

মাটি আজও চুপচাপ, শেকড়গুলোও যেন

আড়ষ্ট হয়ে গেছে।
মাঝে মাঝে কেবল বাতাসে ভেসে আসে কোনো

বিস্মৃত আর্তনাদ।

আমি কি সেই হারানো দুপুরের কথা মনে করি?
নাকি শেকড়ের ডাক আমাকে প্রতিদিন আরো

নিঃসঙ্গ করে তোলে?

 

পথের ধুলোর মাঝে আশ্রয় খুঁজি, কিন্তু পায়ের তলায়

কেবল চলে আসে ভাঙা স্বপ্নের টুকরো।
আকাশেও আজ নেই সেই শ্যামল রং,
নদীর ঢেউ নেই, কেবল শুকনো নুড়ি।

 

তবু আমি হাঁটি, মাটি ছুঁয়ে দেখি-যদি কোনো এক

কোণে পাই আমার ফেলে আসা শেকড়ের গন্ধ।
প্রতিদিন ভোরে উঠে এ পথেই পা বাড়াই—
মাটি, পথ আর শেকড়ের কাছে-ফিরে যাবার আশায়।

 

 

হারিয়েছে যে পথ

 

হারিয়ে যে পথ, সে পথ অনন্ত, সংশয়ের পরিসর,

সময়ের ছায়ায়—অদৃশ্য।

বিশ্বের তলায় কখনো যদি খুঁজে পায় কেউ, তবে

অজানা পথে তার চিহ্ন মুছে যায়।

 

মনোযোগের শূন্যতায্‌ এক্সিলারেশন অবিরত,

ভবিষ্যতের সুদূর গন্তব্য—কিন্তু কোথায় সে শেষ?

Manual5 Ad Code

অস্তিত্বের কাহিনি এক কাল্পনিক অভ্যন্তরীণ সমীকরণ, যেখানে সব কিছু চলছে হিসাবের বাইরে।

পরিসংখ্যান বলে, সকল কণা এক চিরন্তন অবস্থানে,

কিন্তু কিসে চলি আমরা, কী কল্পনায় আবদ্ধ?

কোয়ান্টাম বলছে—এখানে ওখানে আমরা এক, তবুও

পথ হারাই, হারানো পথে ফিরে যাই,

অথচ কোন এক সময় কোথাও তো পৌঁছাই।

 

কী জানি, সারা বিশ্বে হোক না প্রতিটি পদক্ষেপ,

এ পথ নিঃশেষ, এক বৃত্তের মতো—ঘুরে ফিরে আসে।

এ জগৎ, এ জীবন হারিয়ে যায় হুটহাট-

যেখানে প্রশ্নের স্রোত গড়িয়ে যায়—অদৃশ্য।

 

 

পাতারা কাঁদে

 

পাতারা কাঁদে, যখন বাতাস তাদের কোলে

আকাশের গল্প বলে।
আলো ছুঁয়ে আসে, ছায়া ছুঁয়ে যায়, তবু –

তাদের শরীরে থেকে যায় অতীতের রক্তাক্ত স্মৃতি।

 

পাতারা কাঁদে, কারণ শেকড়ের খবর তারা জানে না।
মাটির গভীরে কান্নার ভাষা তারা বুঝতে পারে না।
বসন্তের গানেও যে লুকিয়ে থাকে মৃত শীতের অশ্রু-

তা তারা জানে না

পাতারা কাঁদে, যখন দিগন্তে হারিয়ে যায়

Manual1 Ad Code

শেষ সূর্যরশ্মির চিহ্ন।
রাতের অন্ধকারে নিজেদের ছায়া হারিয়ে ফেলে-
ঝরে পড়ে তারা একা, নির্জনতার কবিতার ছন্দে

তারা কাঁদে, কারণ জন্মের পর থেকেই তারা জানে,

একদিন ঝরে যেতে হবে।
কোনো এক গোপন রহস্যের টানে তারা দুলে ওঠে—
তবু কাঁদে, কারণ তারা জানে বেঁচে থাকা মানে এক

নিরন্তর বিদায়।

তারা কাঁদে, তাদের কান্নার শব্দ মানুষ শোনে না।
তবু তারা কাঁদে, কারণ এই কান্নাই তাদের –

জীবনের শেষ সঙ্গীত।

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code