আজ রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিউ ইয়র্কে শনিবারের আড্ডা

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৫:২৬ পূর্বাহ্ণ
নিউ ইয়র্কে শনিবারের আড্ডা

Sharing is caring!

‘শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন যেমন বুদ্ধিজীবীদের জন্য পরিত্যাজ্য, আজকের অধ্যাপক ইউনুসের মার্কিন তোষণনীতি ও মৌলবাদী জামাতপন্থী রাজনীতি ততোধিক ঘৃণ্য!’

আবেদীন কাদের

আমাদের আড্ডাটাকে কেন জানি না খুব তক্কাতক্কি-নির্ভর করে ফেলেছি আমরা। এটাকে বরং কিছুটা বিনম্র মানে একটু কোমল তারে বাঁধার প্রয়োজন বলে বন্ধুদের কেউ কেউ পরামর্শ দিলেন। এসব নিয়ে আমি বিছানায় গা এলিয়ে ভাবছিলাম, কিন্তু আজকাল যা হয়েছে আমার, অতি অল্প সময়ের মধ্যে গভীর নিদ্রায় তলিয়ে যাই। ঘরে সব বাতি নেবানো ছিলো, সময় কতক্ষণ গড়িয়ে গেছে জানি না! ভেবেছিলাম ঘণ্টা খানেক বা দুয়েক ঝিমিয়ে উঠে পড়বো। কিন্তু পারি নি, তলিয়ে ছিলাম গভীর ঘুমে। কবি শামস আল মমীন সন্ধ্যা সাতটার দিকে এসে চারদিক অন্ধকার দেখে ভেবেছেন হয়তো আমি বাড়ি নেই, তাই টেলিফোন করেছেন, আমি উঠে নিজেকে একটু ধাতস্থ করে বেরিয়ে দরোজা খুলে দিলাম। মমীন ভাইকে বসতে দিয়ে নিজের কাপড় পরতে ঘরে ঢুকেছি সে-সময়ে কথাশিল্পী বদরুন নাহার ও কবি অভীক সোবহানের কণ্ঠ পেলাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই আদনান সৈয়দ ও নসরত শাহ এসে পৌঁছলেন। যাহোক আমাদের আড্ডার প্রয়োজনীয় সদস্য সবাই এসে গেছেন, তাই কফি বানিয়ে শুরু হলো বিভিন্ন লেখা নিয়ে আলোচনা। আমাদের আড্ডার সদস্যদের অধিকাংশই আমাদের সমকালীন লেখকদের লেখা নিয়ে ভাবেন, পড়েন, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। তাঁদের চিন্তা বা পড়াশুনার অধিকাংশ সময় তাঁরা ব্যয় করেন এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের লেখা বিষয়ে ভেবে ভেবে। আমি একটু পুরনো দিনের মানুষ, আমার পড়ার জন্য অনুমোদিত সময়ের অনেকটাই চলে যায় সাহিত্যের বাইরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে। আমার সমাজবিজ্ঞানে আসক্তি, ইতিহাস বা সমকালীন রাজনৈতিক তত্ত্ব আমার অনেকটা সময় কেড়ে নেয়। এছাড়া গান ও সিনেমাও আমার দিনের বরাদ্দের অনেকটা সময় খেয়ে নেয়। তাই আমার ঘুমহীন আঠারো উনিশ ঘণ্টা কেমন করে চলে যায় বুঝতেই পারি না। তাই লেখার জন্য বরাদ্দ থাকে একেবারে কম সময়। আগে টেলিফোন যেহেতু কিছুটা সময় নিয়ে নিতো, আজকাল অধিকাংশ সময় টেলিফোন বন্ধ রাখি বলে সেটুকু সময় বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। মা চলে যাওয়ার পর টেলিফোনে পাওয়া আমার বলতে গেলে জগতের কোন সংবাদই আর তেমন গুরুত্ব বহন করে না, তাই এই বস্তুটির প্রয়োজন ক্ষীণ হয়ে আসছে আমার কাছে।
কফি মেশিনে জল চাপাতে গিয়ে সময় কীভাবে সবচেয়ে হিশেবীভাবে ব্যয় করা যায় তাই ভাবছিলাম। ছেলেবেলায় সারাদিন বাংলা উপন্যাস পড়তাম, বিশেষ করে কলকাতার বড় লেখকদের অনেকের নাগরিক মধ্যবিত্ত জীবনের উপন্যাসগুলোতে বাড়িতে অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক পিতামাতার জীবন চাকুরে ছেলেমেয়ের সঙ্গে যেভাবে কাটতো, সেখানে একটি বিষয়ের বর্ণনা আমাকে ভীষণ বিষণ্ণ করে দিতো, সেটা হলো কবি বিষ্ণু দে’ র ভাষায় দীর্ঘ প্রতীক্ষারত মৃত্যুর আগের ‘পেনসনিত পঁচিশ বছর’ যে করুণ ও ক্লিষ্টতার সঙ্গে বাবা তাঁর মাসিক অর্থ থেকে নিজেকে ও পরিবারের সবার জন্য ব্যয় করতেন! বিশেষ করে তাঁর পেনসনের টাকা থেকে নিজের ও বৃদ্ধা অসুস্থ স্ত্রীর ওষুধগুলো কিনে যে সামান্য টাকা থাকতো হাতে, তাতে সংসারে সাহায্য করা! এ যে কী ভীষণ কষ্টের হিশেব, তা যিনি পেনসনের জীবনে নেই, তাকে বোঝানো সম্ভব নয়। দিনের কাজের সময়টা টেবিলে বসে নিজেকে আমার পেনসনভুক্ত বৃদ্ধের মতো মনে হয়! কী করে যে কৃপণের মতো সামান্য সময় বাঁচিয়ে লেখা ও পড়ার ফাঁকে ফাঁকে অন্য প্রয়োজনীয় কিছু কাজ করতে হয়, তা কাউকে বোঝানো যাবে না। তরুণ বয়সে অবিবেচকের মতো সময় অপচয় করেছি, এখন ভাবতে বসলে খুবই কষ্ট হয়! দিনের পর দিন প্রয়োজনীয় লেখার কাজ ফেলে রেখেছি, অবহেলা করেছি, আলস্যে দিন কাটিয়েছি, এখন তা ভেবে অনুশোচনার শেষ নেই! হঠাৎ কফি মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে এসব অকারণে ভাবছিলাম নিজের ব্যর্থ নিষ্ফলা জীবনের কথা। কফি মেশিনের আওয়াজে সম্বিৎ ফিরে পেলাম! সবার জন্য কফি মাগে ঢেলে গিয়ে বসলাম টেবিলে। তাকিয়ে দেখি বদরুনের হাতে পুরনো একটা গল্পের বই, বদরুন জানালেন তিনি আজ একটি পুরনো গল্প পাঠ করে শোনাবেন।
বদরুনের গল্প পাঠ শোনার কথা উঠতেই আমাদের সমকালীন গল্পের ও কথাশিল্পের গতি-প্রকৃতি নিয়ে হাজারটা কথা উঠলো। আমাদের কথাশিল্পের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কথাশিল্পের মোটাদাগে তফাৎটা কোথায়! এটা ছিলো আমার প্রশ্ন। এ সম্পর্কে আদনান সৈয়দ, আহমাদ মাযহার, কবি অভীক সোবহান ও বদরুন বিভিন্ন মন্তব্য করেন। নসরত শাহ আগেও বলেছেন, আজও অনেকটা জোর দিয়ে আমাদের জীবনের সঙ্গে পশ্চিমবঙের সাধারণ মানুষের জীবনের অনেক পার্থক্য রয়েছে। এই দুটি সমাজ দুরকম, এদের স্কুল কলেজের পড়ালেখার গতি-প্রকৃতি ও গুণগত মান একেবারে আলাদা, এরা ভিন্ন সমাজব্যবস্থায় জীবনাতিপাত করে। গত পঁচাত্তর বছরের বেশি, অর্থাৎ ‘৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে পাকিস্তান কোন দিন সত্যিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখে নি, হয় জোড়াতালি দেয়া সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের রাজত্বে নয়তো পুরোপুরি সামরিক বুটের তলায় পিষ্ট একটি সমাজ, সঙ্গে রয়েছে মৌলবাদী ইসলামের কঠোর সামাজিক চাপ। আর বাংলাদেশ তিনজন জেনারেলের বুটের তলায় ও দুটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচিত স্বৈরশাসনে পিষ্ট হয়েছে । গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, হোক সে খুঁড়িয়ে চলা গণতন্ত্র, আর গণতন্ত্রহীন ব্যবস্থায় জীবন চালানো সমাজের মানুষের মনোজগৎ যেমন সম্পূর্ণ আলাদা হয়, তেমনি এই দুই ধরণের সমাজের লেখকদের ভাষা থেকে শিল্পরীতিও সম্পূর্ণ আলাদা হয়। বিচারব্যবস্থা থেকে দুটি সমাজের সুশীল সমাজ আলাদা, লেখকদের ভাবনার পরিধি ও অভিজ্ঞতার সূত্র ও উৎসও আলাদা। সে কারণে ভাষা এক হওয়া সত্ত্বেও এই দুটি দেশের কবিতা বা কথাশিল্প আলাদা, এমনকি চিন্তাশীল মানুষদের লেখাও আলাদা। আরেকটি বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা ভাবি না, সেটা হলো এই দুটি সমাজের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ আলাদা। এটা খুব ভালভাবে বোঝা সম্ভব বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই দুটি দেশের ছাত্রদের পড়তে যারা আসে তাঁদের পড়াশুনার বিষয় ও গুণগত স্তর নিয়ে বিচার করতে বসলে। বাংলাদেশ ও ভারত থেকে সম্ভবত যারা মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়তে আসে তারা সে-সমাজের মোটামুটি মেধাবী বা মধ্যম মেধা থেকে উঁচু স্তরের ছাত্ররাই আসে। তাঁদের পড়াশুনা বিচারের ভার যে মার্কিন অধ্যাপকদের হাতে থাকে তারা পরিষ্কার পার্থক্যটা বুঝতে পারেন। শুধুমাত্র আমাদের শিক্ষার মান বিষয়েই নয়, ইংরেজদের হাত থেকে দুটি দেশ একই সঙ্গে স্বাধীনতা লাভ করে, কিন্তু পাকিস্তানের নয়া উপনিবেশ থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ প্রায় চুয়ান্ন বছরে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রাথমিক প্রতিষ্ঠানগুলোও আজ পর্যন্ত গড়তে পারেনি। সারে পাঁচ দশক সময়ের প্রায় অনেকটাই এরা ব্যয় করেছে সমাজটা ধর্মভিত্তিক হবে নাকি সেকুলার ব্যবস্থার হবে, এই সাধারণ সমস্যাটা বিষয়ে বিবাদ করে। ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র যে কোনদিন আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ গড়তে পারে না, এই সাধারণ কথাটাও বাংলাদেশের রাষ্ট্রনির্মাতারা কোনদিন বুঝতে সক্ষম হয় নি। এনিয়ে হাজারটা বিতর্ক করা সম্ভব, কেন সম্ভব নয় তা নিয়েও গবেষণা করতে পারেন সমাজবিজ্ঞানীরা বা রাজনীতিকরা, কিন্তু মানবেতিহাসে কোথাও এই নজির খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় যে ধর্মভিত্তিক একটি সমাজও আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজে রূপ নিয়েছে। এটা অনেকটা কাঁঠাল দিয়ে আমসত্ত্ব বানানোর চেষ্টা। ধার্মিক দেশ ধনী হতে পারে, শক্তিশালী হতে পারে, এমনকি বিজ্ঞানেও হয়তো উন্নত হতে পারে, কিন্তু গণতান্ত্রিক হতে পারে না। এর মূল কারণ বিশ্বাসী বা ধর্মবিশ্বাসে ভিত্তি করে নির্মিত শাসনতন্ত্র কখনও গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্ত যে সকল নাগরিকের সমান অধিকার তা প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম নয়। এছাড়া অধিকাংশ ধর্মই নারী পুরুষের বৈষম্যে বিশ্বাসী! এটাও সকল নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের সমাজের মৌলিক সমস্যাগুলোর মধ্যে এটা নিঃসন্দেহে অন্যতম, কিন্তু এসব নিয়ে তক্কাতক্কি উঠতেই মাযহার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করলেন সেটা ন্যাশনালিজম বা জাতীয়তাবাদ। আমাদের শাসনতন্ত্রের মূল স্তম্ভগুলোর একটি বা চার মূলনীতির একটি জাতীয়তাবাদ। এই জাতীয়তাবাদ আসলে কী, এর সংজ্ঞা কী এবং রবীন্দ্রনাথ একে কেন সভ্য সমাজের জন্য ক্ষতিকর ভাবতেন, এবিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হলো! রাজনীতিবিদরা একটি জনগোষ্ঠীকে একত্রিত করার রাজনৈতিক হাতিয়ার হিশেবে জাতীয়তাবাদকে উস্কে দেয়, বা এর দ্বারা একটি জনগোষ্ঠীকে তাদের পরিচয়ের ভিত্তি বা আইডেন্টিটি হিশেবে বিবেচনা করে একত্রিত করে। একত্রিত করার জন্য এটা খুব সহজ ও সস্তা উপায়। কিন্তু ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ বা ভাষা ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের উদ্দেশ্য একই, মানুষকে একত্রিত করা। ভাষাভিত্তিক জনগোষ্ঠীকে একটি নির্দিষ্ট পরিচয় দেয়া সম্ভব হয়, তেমনি ধর্মের পরিচয় লেপটে দিয়ে সেই একই জনগোষ্ঠীকে একত্রিত করাও সম্ভব। তবে ধর্মীয় অন্ধতার ভিত্তিতে এটা করা ও অশিক্ষিত মানুষদেরকে একত্রিত করা সহজতর, কারণ পরকালের ভীতি। মাযহার বিশ্লেষণ করতে চাইলেন রবীন্দ্রনাথ কেন জাতীয়তাবাদকে অপছন্দ করলেন বা এই গ্রন্থ লিখলেন। আসলে রবীন্দ্রনাথ ১৯১৬ সালে নিউ ইয়র্কের কার্নেগী হলে আমন্ত্রিত হয়ে ‘ন্যাশনালিজম’ বিষয়ে ইংরেজিতে একটি বক্তৃতা দেন। সেটিই প্রথমে বই আকারে প্রকাশিত হয় ১৯১৭ সালে। পরে এ বিষয়ে বাংলায়ও এর তর্জমা প্রকাশিত হয়। কী বলেছেন এই প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ! এবিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন বিষয়টি। ইংরেজি প্রবন্ধটি ও বাংলায় ‘আমাদের স্বদেশী সমাজ’ এক বিষয় বোঝায় না। ‘সমাজ’ বলতে রবীন্দ্রনাথ সম্ভবত বুঝিয়েছেন সমাজ-সম্পর্কিত রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যেভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে, কিন্তু রাজনীতি যে ভিন্ন ‘ক্ষমতা বা ‘প্রতাপ’ নিয়ন্ত্রিত বিধি যা রবীন্দ্রনাথের মানববিচারের মানদণ্ড নয়। সে-অর্থে রবীন্দ্রনাথকে দর্শনের দিক থেকে Anti-politics ভাবাদর্শের শিল্পী হিশেবেই বিবেচনা করা বেশি সমীচীন মনে হয় আমার। বিখ্যাত পশ্চিমা ইতিহাসবিদ ই পি থম্পসন রবীন্দ্রনাথের মনোজগৎকে বিবেচনা করেন প্রতি-রাজনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। রবীন্দ্রানাথের জাতীয়তাবাদের আলোচনায় প্রাচ্য ও পশ্চিমের জাতীয়তাবোধের মধ্যে বেশ ফারাক রয়েছে যা পশ্চিমের একাডেমিক লেখকদের মধ্যে কম পাওয়া যায়। একটি ধারার মধ্যে স্টেট বা রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য বা ভালোবাসা, আরেকটি ধারার মধ্যে এথনিসিটি, দেশপ্রেম, সমাজপ্রেম সবকিছুই বোঝায়। কিন্তু এতে সেই গোষ্ঠীবদ্ধতার কথাই বার বার ফিরে ফিরে আসে যাকে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বমানবতাবোধের তুলনায় সংকীর্ণ বলেছেন মনে হতে পারে। মাযহার আড্ডায় বিশেষভাবে আলোচনা করতে চাইলেন আজকের আধুনিক সমাজবিজ্ঞানীরা যেভাবে জাতীয়তাবাদকে ‘ইম্যাজিনড কমুনিটিবোধ’ থেকে পর্যালোচনা করেন, বিশেষ করে বেনেডিকট এনডারসনের বিখ্যাত তত্ত্ব আশির দশকের গোড়ায় পশ্চিমা সমাজবিজ্ঞানীদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হওয়ার পর থেকে। তবে আমি নিজেও রবীন্দ্রনাথের মতকেই বেশি মূল্যবান মনে করি, কারণ জাতীয়তাবাদ থেকে উগ্র জাতীয়তাবাদের জন্ম হতে পারে, এবং সেখান থেকে ফ্যাসিবাদের জন্ম হওয়া স্বাভাবিক। এক সময়ের নাৎসি পার্টি মূলত জার্মান জাতীয়তাবাদকে ভর করেই জন্ম নিয়েছিলো। তাই সত্যিকার বিবেকী মানুষদের হাতে না পরিচালিত হলে জাতীয়তাবাদ ভয়ঙ্কর রূপ নিতে বাধ্য। বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোর শাসকদের ক্ষেত্রে। রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদ, রাষ্ট্রচিন্তা ও মানবিকতার বিভিন্ন দিক নিয়েও আড্ডায় অনেকটা তক্কাতক্কি হয়।
সমাজবিজ্ঞানের এসব আলোচনার সময় আদনান সৈয়দ তার লেখা একটি পুথির আদলে লেখা সেটায়ার পড়ে শোনান। কিন্তু জারি বা পুথি গানের আদলে লেখাটা নির্জলা সেটায়ার সেটা সহজে ধরা কঠিন নয় মোটেই, এর শিরোনাম ‘রাজাকারের পালা’। সমকালীন রাজনীতি নিয়ে আদনান মাঝে মাঝে এধরনের সেটায়ার লেখেন যা বেশ সাহিত্যগুণসম্পন্ন। বদরুন নাহারের গল্পটি ভীষণ হৃদয়-ছোঁয়া। একটি দরিদ্র তরুণী রাহেলা গ্রাম থেকে শহরে এসে পরিবার ও বাবা মাকে সাহায্য করার জন্য গার্মেন্টসে চাকুরী নেয়। কিন্তু সেলাই মেশিনে জিনস বা মোটা কাপড় সেলাই করার মেশিনের মোটা সূচ তার আঙুলের ভেতরে ঢুকে যায়। এর তেমন ভাল চিকিৎসা হয় না। শুধু সামান্য সেভলন দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয় দুর্ঘটনা ঘটার পর, কিন্তু ঘরে ফিরে যাওয়ার পর তরুণীটি জ্বরে আক্রান্ত হয়, প্রচণ্ড ব্যথা বোধ করে। সামান্য ব্যথার ওষুধ দেয়া হয় তাকে। কিন্তু এতে তার ক্ষতের আঙুল থেকে টিটেনাস হয়ে যায়, মেয়েটি মৃত্যুবরণ করে। এটা ভীষণ হৃদয়বিদারক। পুরো বিষয়টাই গার্মেন্টস কোম্পানির গাফিলতির ফলে ঘটে। কিন্তু অসহায় দরিদ্র তরুণীটির মৃত্যুকে ঘিরে আরও অনেক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। আমাদের সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীভুক্ত মানুষের প্রতাপ-উৎসারিত শক্তির বিন্যাসের একটি চমৎকার চিত্র গল্পটিতে আঁকা হয়েছে। এর প্রধান চরিত্র রাহেলা, কোম্পানির শ্রমিক নেতা, রাহেলাদের গ্রামের চেয়ারম্যান, গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিক নেতা ও অন্যান্য শ্রেণীর মানুষের উপস্থিতি, তাদের নিজেদের স্বার্থ-উৎসারিত ভূমিকা, দীর্ঘ পথ ভ্রমণের সময় লাশ নিয়ে বিভিন্ন চরিত্রের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া খুব মুনশিয়ানার সাথেই চিত্রিত। শ্রমিক নেতার গার্মেন্টস কোম্পানি প্রদত্ত টাকা নিয়ে ছলচাতুরী আমাদের সমাজেরই আরেক চিত্র। মানব চরিত্রের বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত কথাশিল্পের প্রতীকী চিত্রায়নে সিদ্ধ বদরুন নাহারের কলম। গল্পকার বদরুন নাহারের ভাষা ও বিভিন্ন মেটাফরের ব্যবহার গল্পটিকে এতো জীবন্ত এবং শিল্পিত করে তোলে, যা পাঠকের মনকে স্পর্শ করে শুধু তাই নয়, বরং আজকের সমাজের দ্বন্দ্ব ও ট্র্যাজিক ছবিটি বার বার নিম্নবিত্তের মানুষদের অসহায়ত্বকে বুঝিয়ে দেয়। ‘পতাকাটি লাল ছিল’ শিরোনামের গল্পটি নিয়ে আড্ডা ভেঙ্গে যাওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ আমি ভেবেছি। কথাশিল্পীদের শক্তির একটি বড় পরিচয় চিত্রশিল্পীদের মতো ডিটেলের অনুপুঙ্খ বর্ণনায় চরিত্রের মনোজগতের অজানা প্রদেশের খোঁড়াখুঁড়ি, যা বদরুনের গল্পে খুব ভালোভাবেই চিত্রিত হয়। এর আগে ওঁর যে কয়টি গল্প পড়েছি আমার মনে সেগুলো দাগ কেটেছিলো বদরুন নাহারের গল্পের ভাষা ও ডিটেলের অনুপুঙ্খ বর্ণনারীতি! বদরুন নাহার এসময়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ কথাশিল্পী সন্দেহ নেই!
বদরুন নাহারের গল্প পাঠের পর কথা ওঠে আমাদের সমাজের শিল্পের, বিশেষ করে গার্মেন্টসশিল্পসহ অন্যান্য শিল্পের শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক নিয়ে। ধ্রুপদী সমাজবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক দিক থেকে বিচার করলে পুঁজির বিকাশ আসলে শ্রমিককে শোষণ করেই সম্ভব, এর বাইরে দ্বিতীয় পথ কম খোলা রয়েছে। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে শ্রমিক শোষণের বিভিন্ন পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকের অধিকার নিয়েও বিভিন্ন আন্দোলন শুরু হয়, ফলে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠিত, তাদের অধিকার বিষয়ে আইন বা অন্যান্য দিক নিয়ে বিপুল গবেষণাও হয়। শ্রমিক সমাজের অধিকার মানবাধিকার আইনের অন্তর্ভুক্ত করে পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলোতে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন ও সেগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সত্তর দশকের শেষদিকে চীন সেদেশের সস্তা শ্রমিকের সুবিধা পশ্চিমা লগ্নিকারক দেশগুলোর জন্য খুলে দেয়। চীনা নেতা দেং সারা পৃথিবীর অর্থনীতিতে পুঁজির বিরাট পরিবর্তনে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন চীনের শ্রমবাজার বিশ্বের জন্য, বিশেষ করে মার্কিন পুঁজির জন্য। ফলে পুঁজির বাজার জাতীয় সীমানা ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং অর্থনীতিতে বিশ্বায়নের সেই থেকেই বিস্তার লাভ করে, যদিও সীমিত আকারে পুঁজির বিশ্বায়ন আগে থেকেই ছিলো। কিন্তু বিশ্বায়নের এই নতুন ব্যবস্থা রাজনীতি ও বিশ্বের ধনী দরিদ্র দেশের আন্তসম্পর্ক যে শুধু বদলে দেয় তাই নয়, মানুষের সংস্কৃতিও আমূল বদলে দেয়। এর ফলেই সংস্কৃতির হোমোজেনাইজেশন বা একীকরণ ঘটতে থাকে। এটা সম্ভব হয় শুধু পরাশক্তির রাজনীতির জন্য নয়, বরং ইনফরমেশন টেকনোলজি বা প্রযুক্তির বিপ্লবের ফলে। ইন্টারনেট ও অন্যান্য টেলিফোন প্রযুক্তির আমূল পরিবর্তন বিশ্বের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক মুদ্রাব্যবস্থা ও অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি আমূল বদলে যায়। কিন্তু দরিদ্র দেশগুলোর শ্রমিকরা আগের চেয়ে চাকুরী বেশি সংখ্যায় পেলেও মূলত তথ্যাদি তাদের হাতে না থাকায় বেশি হারে তাদেরকে শোষণ করা বেড়ে যায়। এমনকি অনেক দেশের শমিকের জীবন বিপন্ন হয়। এটা সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় গার্মেন্টস শ্রমিক ও খনি শ্রমিকদের ক্ষেত্রে। এ বিষয় নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা ঘটনা বর্ণনা করেন লেখক আদনান সৈয়দ। এ কাহিনী খুব হৃদয়বিদারক। বেশ কয়েক বছর আগে আদনান নতুন চাকুরী নিয়ে বাংলাদেশে যান এবং সেখানে ছিলেন দীর্ঘদিন। একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির কনসালটেন্ট হিশেবে তিনি কাজ পরিদর্শনে উত্তরবঙের বিভিন্ন জেলা ভ্রমণ করেন, সেখানে শ্রমিকরা সারাদিন পাথর গুড়ো করার কাজ করেন। দিনের শেষে এসব শ্রমিকদের দেখলে ঠিক চেনা কঠিন। নাকে মুখে কোন মাস্ক তারা পরিধান করেন না। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা কাজ করার পর দেখা যেত শ্রমিকের সারা মুখ, মাথার চুল থেকে সারা শরীর পাথর-ধূলিতে আকীর্ণ হয়ে ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। ছয় মাস বা বছরাধিক একাজ করার পর দেখা যেত অনেক শ্রমিক একটি নির্দিষ্ট রোগের শিকার হচ্ছে। রোগটির নাম সিলিকোসিস (silicosis)। পাথরের গুড়া ফুসফুসে যেয়ে ফুসফুস ছিদ্র কিরে ফেলে এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয় আর এক সময় মারা যায়। উত্তরবঙ্গে পাথর শ্রমিকদের এই রোগ বেশি হয়। ভয়াবহ বিষয় হলো এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। অল্প বয়সেই ফুসফুসে সমস্যা নিয়ে রোগী মারা যায়। এই নিয়ে আদনানের নির্মিত একটি তথ্যচিত্রও আছে। বিলস(BILS) Bangladesh Institute of Labour Studies এর অর্থায়নে সিলিকোসিস নিয়ে তিনি কাজ করেছিলেন তাদের কনসালটেন্ট হিসেবে। এটা ভয়াবহ এক রোগ। এলাকার হাতুড়ে ডাক্তাররা সন্দেহ করতো এসব শ্রমিকের যক্ষ্মা হয়েছে। তাদের কাউকে কাউকে ঢাকায় মেডিক্যাল পরীক্ষার পর দেখা যেত আসলে তাদের যে রোগটি হয়েছে সেটি ঘটেছে পাথরের গুড়ো নাসিকা দিয়ে প্রবেশ করে তাদের শ্বাসনালী ফুটো হয়ে গিয়েছে। এটা ভীষণ ভয়ঙ্কর রোগ। এতে মৃত্যু প্রায় অবধারিত হয়ে দাঁড়ায়। আদনানের বর্ণনায় জানা যায় উত্তরবঙ্গের এই জাতীয় শ্রমিক ছাড়াও যারা সিলেটের চুনাপাথর গুড়োর কাজে নিয়োজিত থাকেন সেই সব শ্রমিকরাও এই রোগের শিকার হন।
আদনান সৈয়দের এই অভিজ্ঞতা-নির্ভর শ্রমিকদের সমস্যা বর্ণনার পর আমার মনে পড়ে গ্লোবালাইজেশন কোর্স পড়ানোর সময় প্রায় আড়াই দশক আগে আমার নিউ স্কুলের অধ্যাপক অর্জুন আপ্পাদুরাই কয়লা শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি, সমস্যা নিয়ে একই বর্ণনা দিয়েছিলেন। মার্কসের ক্যাপিটাল গ্রন্থে বিলেতের কাপড় কলের শ্রমিকদের যে অমানুষিক কষ্ট ও জীবনের ঝুঁকির বর্ণনা রয়েছে, সেকথা মনে পড়ে যায়। বাংলাদেশের শ্রমিকদের জীবনের করুণ দিক নিয়ে বদরুনের লেখা ট্র্যাজিক গল্প ও আদনান সৈয়দের ব্যক্তিগত গবেষণা আমাদেরকে একটু বিষণ্ণ করে দেয়। ভাবলাম আজ ফারজানার দুটি বইয়ের জায়গায় একটি বই নিয়ে আমি আলোচনা করবো, কিন্তু নসরত চলে গেছেন, আমি আর নসরতই শুধু ফারজানা সিদ্দিকার বই দুটি পড়েছি। মাযহার পরামর্শ দিলেন, তিনিও পড়বেন, আরও দুয়েকজন পড়ে আগামী সপ্তাহে সবার আলোচনায় অংশ নেয়া ভালো। তাই সিদ্ধান্ত হলো বইটি নিয়ে আলোচনার বিষয়ে।
এরপর আমরা আবার কবিতা নিয়ে কিছু কথাবার্তা আলোচনা করি। কবি এবিএম সালেহউদ্দীন ও নসরত শাহ দূরে যাবেন, তাই তাঁরা মধ্যরাতের একটু আগেই উঠে গিয়েছেন। আমরা বাকী কজন সাহিত্যের হাজারটা দিক নিয়ে নতুন করে আড্ডায় আলোচনা করি। এসময় আমাদের সাহিত্যিকদের, বিশেষ করে এই সময়ের রাজনীতিতে কার কী ভূমিকা তা নিয়ে কথা ওঠে। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা অধিকাংশই শেখ হাসিনার শাসনকালের দেড় দশকের অধিক সময় প্রায় নিজেদের রাজনৈতিক ভূমিকা বা সাংস্কৃতিক ভূমিকা সম্পর্কে বিস্মৃত হয়ে পড়েছিলেন। এদের অধিকাংশই নিজেদেরকে ‘চেতনার’ পক্ষে দাবি করলেও আসলে তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো হাসিনা সরকারকে তোষামোদ করে আখের গোছানো। লেখকের সামাজিক দায় বিষয়ে বৌদ্ধিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে বিতর্ক থাকলেও আমাদের সমাজে তা যতোটা না বুদ্ধিবৃত্তিক, তার চেয়ে অনেক বেশি জাগতিক স্বার্থসম্পর্কিত। হাসিনা সরকারের পতনের পর এই বিপুল সংখ্যক বুদ্ধিজীবীরা কিছুটা নীরব হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু অভ্যুত্থানকারী ছাত্রনেতাদের পরিচয় গোপন করে আন্দোলন করা এবং এখন তাদের মৌলবাদী চরিত্র বেরিয়ে পড়ার পর আওয়ামী চেতনাপন্থী বুদ্ধিজীবীরা অনেকেই বেরিয়ে আসা শুরু করেছেন, এবং হয়তো কেউ কেউ ভাবছেন তারা শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনকে সমর্থন করে ভুল করেন নি। আসলে বিষয়টা আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের প্রতারণার আবরণে নিজেদের ত্রুটি ঢেকে দেয়া ভুল হবে হয়তো। সে সময়ের চেতনাপন্থীরা যা করেছেন তা যেমন এক ধরণের ধান্দাবাজি, আজকের অভ্যুত্থানকারী ছাত্রনেতারা যা করছে তাও এক ধরণের প্রতারণা ও রাজনৈতিকভাবে গণতন্ত্রের শত্রুরই কাজ! এবিষয়টা নিয়ে আমাদের আড্ডায় অনেকক্ষণ তক্কাতক্কি চলছিলো। আসলে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা খুব জটিল হয়ে উঠছে, তাঁরা শেখ হাসিনার শাসনকালকে আজ কীভাবে মূল্যায়ন করবেন, বা অধ্যাপক ইউনুসের মার্কিন তোষণকারী ও জামাতপন্থী মৌলবাদী রাজনীতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন তা খুব পরিষ্কার নয়, তবে দুটোই আমাদের সমাজকে সত্যিকার গণতান্ত্রিক করে তোলার ক্ষেত্রে ভীষণ অন্তরায় তা পরিষ্কার হয়ে উঠছে দিনে দিনে, এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়!
রাত গভীর হয়েছে, মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে অনেক আগে। সবাই বাড়ির দিকে রওয়ানা দিয়েছে। আমি আর মমীন ভাই আমাদের এই প্রতিকূল সময়ে সাহিত্যের অবস্থা কিছুটা যে ম্লান হয়ে উঠছে তার কারণগুলো নিয়ে অনেকক্ষণ কথা বললাম সবাই চলে যাওয়ার পর!