আজ সোমবার, ২৭শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শুরুতেই বিতর্কিত হয়ে পড়েছে এনসিপি

editor
প্রকাশিত মার্চ ২৫, ২০২৫, ০২:২২ পূর্বাহ্ণ
শুরুতেই বিতর্কিত হয়ে পড়েছে এনসিপি

Sharing is caring!

Manual5 Ad Code

টাইমস নিউজ 

শুরুতেই বিতর্কিত হয়ে পড়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজনীতি । জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র ও তরুণদের দল। ব্যাপক জনপ্রত্যাশার স্নায়ুচাপ সৃষ্টি করে তৃতীয় ধারার এ রাজনৈতিক দলটি সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করেছে।

কিন্তু একেবারে দল গঠনের প্রথম দিন থেকে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। সঙ্গে নানামুখী অভিযোগের চাপও ঘিরে ধরেছে তারুণ্যনির্ভর এ দলটিকে। আন্দোলনের সময় কোনো সিদ্ধান্ত না থাকলেও এই পর্যায়ে এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করা, গণ-অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বীরোচিত ভূমিকা রাখা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন, শহিদ পরিবারসহ আহতদের পাশে সক্রিয়ভাবে না থাকা, দল গঠনের সময় শুধু একটি কোরগ্রুপকে প্রাধান্য দেওয়া, দল পরিচালনার তহবিল গঠন প্রশ্নে জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী সব প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট না করা, সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইনহাউস বৈঠকের তথ্য প্রকাশ্যে আনা এবং সর্বোপরি দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে একে অপরের বিরুদ্ধে মন্তব্য করার ঘটনায় এনসিপিকে নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সোমবার এমন সব মন্তব্য করেন বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

Manual8 Ad Code

তাদের মতে, বিশেষত এনসিপির কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহর সাম্প্রতিক সময়ের একটি আলোচিত ফেসবুক স্ট্যাটাস এখন টক অব কান্ট্রি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ হিসাবে পুনর্বাসন করার জন্য ক্যান্টনমেন্ট থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে ওই ফেসবুক পোস্টে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরা হয়। আর এ ফেসবুক পোস্ট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যখন তুঙ্গে, তখন এর একদিন পর হাসনাতের সহযোদ্ধা এনসিপির কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের আর একটি পোস্ট রোববার দুপুরে দ্বিতীয় দফায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তোলে। নাতিদীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে সারজিস আলম হাসনাতের ফেসবুক পোস্টের মূল বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করলেও কিছু কিছু বিষয়ে দ্বিমত অবস্থান তুলে ধরেন।

Manual6 Ad Code

এদিকে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, এভাবে এনসিপিকে যদি একের পর এক বিতর্ক ঘিরে ধরে এবং দেশবাসীকে আরও আশাহত হতে হয় তাহলে নতুন এ দলটির পথচলা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া যেহেতু এ দলটির সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা জড়িত, সেহেতু এ দলের যে কোনো নেতিবাচক দিক বর্তমান প্রেক্ষাপটে নানান সংকট তৈরি করবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, এই দলকে নিয়ে খুব আশাবাদী ছিলাম, আর যাই হোক তারা নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে আসবে। আমাদের রাজনীতি সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু যে কর্মকাণ্ড দেখছি তাতে হতাশা বাড়ছে। অনভিজ্ঞতা যে কত বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে-তা তারা দেখিয়ে দিয়েছেন। এই অনভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে তারা যে খুব বেশিদূর অগ্রসর হতে পারবেন, এটা আমার কাছে মনে হয় না। তাদের এই সময়ে উচিত ছিল মানুষের মন জয় করা। এমন কিছু আচরণ করা, যা নাকি আমরা প্রথাগত বড় দলগুলোর মধ্যে পাইনি। মানুষের প্রত্যাশা ছিল- তারা সৎ হবে, তাদের কোনো কর্মকাণ্ডে বিতর্ক সৃষ্টি হবে না এবং তারা ঐক্যবদ্ধ থাকবে। অথচ এই তিনটা কাজের কোনোটাই তারা করতে পারেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী  বলেন, সম্প্রতি হাসনাত আবদুল্লাহর আলোচিত ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়টি মোটেই ঠিক হয়নি। কারণ মানুষের বিশ্বাস একবার ভঙ্গ হলে পরে কেউ বিশ্বাস করবে না। দল দাঁড় করাতে হলে কাজকর্মে সৎ হতে হবে। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী (মুখ্য সমন্বয়ক) জিয়াউর রহমান সম্পর্কে যে কথাগুলো বলেছেন, তিনি কি তার (জিয়াউর রহমানের) ইতিহাস জানেন? জিয়াউর রহমানের সততা নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। অথচ তিনি বললেন-জিয়াউর রহমান লুটেরা। ফলে এই দলের কোনো ভবিষৎ দেখতে পাচ্ছি না। তিনি বলেন, যাদের কথার মধ্যে কোনোরকম সম্মানবোধ নেই, তাদের ব্যাপারে মানুষের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে বেশি সময় লাগবে না।

এদিকে এনসিপি নিয়ে এরকম বিতর্ক ও সমালোচনায় উত্তাপ যখন বাড়ছে, তখন দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য-বিবৃতি না দিলেও সোমবার এ বিষয়ে কিছুটা খোলাসা করেন সারজিস আলম। নীলফামারীতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এনসিপির এই মুখ্য সংগঠক বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে এসব নিয়ে কোনো মতানৈক্য মনে করি না। আর হাসনাতের (মুখ্য সংগঠক) যে লেখাটা ছিল তার সঙ্গে আমার লেখাটার কিছু পারসেপশনে দ্বিমত ছিল। তার পুরো বক্তব্যে বা লাইনগুলোর সঙ্গে কোথাও দ্বিমত ছিল না। আওয়ামী লীগ, রিফাইন আওয়ামী লীগের যে আইডিয়া-এই সামগ্রিক বিষয়গুলোয় কোনো দ্বিমত ছিল না।’

Manual6 Ad Code

অপরদিকে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার সোমবার ঢাকায় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অনেকে আমাদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখতে খুব চায়। কিন্তু এনসিপি অন্য দলের চেয়ে ভিন্ন। এখানে বহুমত প্রকাশের সুযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি নিয়ে মনে করি না যে সেনাবাহিনী বনাম ছাত্র বা সেনাবাহিনী বনাম এনসিপি-এরকম কোনো বিষয় আছে। আমরা এ প্রশ্নে কী অবস্থান নেব, আমরা সবাই প্রত্যেকে প্রত্যেককে ডিফাইন করেছি, প্রত্যেকে প্রত্যেকের পাশে থাকব। হাসনাত ও সারজিসের পোস্টের পর দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কারও কোনো দ্বিমত নেই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, সেনাপ্রধানের সঙ্গে মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমের আলোচনায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি এনসিপির নেতাদের বেশির ভাগই জানতেন না। তিনি (হাসনাত) যখন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের এহেন ‘প্রস্তাবের’ বিষয়টি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সামনে আনলেন, তখন দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের জন্য হাসনাতের প্রশংসা করেন। কিন্তু সারজিসের ফেসবুক পোস্টের পর দলের মধ্যে হাসনাতের ফেসবুক পোস্ট প্রকাশের বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। ওই নেতা বলেন, এনসিপি নতুন রাজনৈতিক দল। রাজনীতির প্রয়োজনে ভবিষ্যতে অনেকের সঙ্গেই আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করতে হতে পারে। হাসনাত ও সারজিস এমন একটি অনানুষ্ঠানিক কথোপকথন যেভাবে ফেসবুকে লিখে দিলেন, এর ফলে এনসিপির নেতাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে কেউ অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বসতে স্বস্তিবোধ করবে না। এটি নিশ্চিতভাবেই দলটিকে ভোগাবে।

এদিকে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশি সক্রিয় ছিলেন রাজপথে। আন্দোলন সফল করতে তাদের ভূমিকা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন কিংবা সম্প্রতি দল গঠনের সময় তাদেরকে উপেক্ষা করার অভিযোগ করে আসছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা।

Manual3 Ad Code

আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারীদের মধ্যে একজন হলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষার্থী আসাদ। তিনি সম্প্রতি একটি অনলাইন টকশোতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৭ জুলাইয়ের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। তাদের রাস্তায় নামার কোনো পথ ছিল না। তারা বিচ্ছিন্নভাবে সাধারণ শিক্ষার্থী বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক আন্দোলন আর হয়ে উঠেনি। ঢাকাকে ৫টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। আমি রামপুরা ও ভাটারার ২ নম্বরের দায়িত্বশীল একজন ছিলাম। আমরা কিন্তু কারও সঙ্গে গাদ্দারি করিনি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানস্বরূপ আমরা যে এ পর্যন্ত আসলাম, নাহিদ ইসলাম যখন উপদেষ্টা হলেন, একবারের জন্যও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি বসেননি। যে ছাত্র শক্তিকেন্দ্রিক কোরামটা ছিল, সে কোরামকে তারা নির্দিষ্ট জায়গায় অধিষ্ঠিত করেছেন। সেটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি বা জাতীয় নাগরিক পার্টি হোক-সেখানে ওই কোরামের বাইরে অন্য কাউকে স্থান দেওয়া হচ্ছিল না। বৈষম্য দূর করার আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের সঙ্গে তারা বৈষম্য করেছে।

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code