আজ বুধবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুযোগ পেলে আমরাও কিছু করতে পারি – প্রতিবন্ধী কাওছার আলী

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৫:১১ অপরাহ্ণ

Sharing is caring!


Manual6 Ad Code

মাহমুদুন্নবী,  নওগাঁ  প্রতিনিধি:

Manual5 Ad Code

প্রতিবন্ধী শব্দটি যেন এক বৈষম্যের প্রতিধ্বনী। শব্দের অন্তর্গত অর্থ সেই শব্দের নাম নির্দেশ করে থাকে। সেজন্য অন্য শব্দ ব্যবহৃত হলেও হয়তো নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সেই শব্দকেও নেতিবাচক করে তুলবে। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বৈষম্যের উৎপত্তি এবং বৈষম্য থেকে জনবিচ্ছিন্নকরণ। প্রতিবন্ধী নাগরিকরা যেন সমাজের অন্যসব নাগরিকদের মতো সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে পারেন, সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে দেশি ও বিদেশীও বেশ কিছু এনজিও। সরকার, দেশি ও বিদেশী বিভিন্ন এনজিও’র সহযোগীতা নিয়ে ২০০৯ সাল থেকে কাজ করছেন নওগাঁর পত্নীতলার কাওছার আলী নামক এক যুবক প্রতিবন্ধী।

১৯৯৮ সালের পহেলা জানুয়ারী পত্নীতলা উপজেলার আকবরপুর ইউনিয়নের কানুড়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের মো: আশরাফ আলী ও মোছা: নূর নাহার দম্পত্তির কোল কে আলোকিত করে জন্ম গ্রহণ করেন মো: কাওছার আলী। ছেলে সন্তান জন্ম হওয়াতে বাবা মা আত্নীয় স্বজন সবাই খুশি ছিলো। কিন্তু তাদের এই খুশি বেশি সময় ধরে ছিলোনা। হঠাৎ চোখ পড়ে সদ্য জন্ম নেওয়া ছেলে সন্তান কাওছার আলী এর পায়ের দিকে। মূহুর্তে¡র মধ্যেই তাদের মূখ মলিন হয়ে যায় সন্তানের ভবির্ষ্যতের দিকে তাঁকিয়ে। অবহেলা আর মানুষের কটু কথার মাঝেই শিশুকাল, কৈশরকাল কেটে যায় প্রতিবন্ধী কাওছার আলীর। তবে যে যাই বলুক কারো কথায় কান দিতোনা কাওছার। ইচ্ছে ছিলো বড় হয়ে কিছু করার। সেজন্য আত্নীয়- স্বজন, পাড়া প্রতিবেশি ও বন্ধু বান্ধবরে কটু কথায় কান না দিয়ে নিজের সব্বোর্চ্চ দিয়ে সাপাহার সরকারি ডিগ্রী কলেজ থেকে তিনি ডিগ্রী পাশ করেছেন। অভাব অনটন আর সামাজিক প্রতিবদ্ধকতায় ইতি টানতে হয় তার লেখাপড়ার।

Manual3 Ad Code

বেকার প্রতিবন্ধী কাওছার যেন হয়ে যায় সমাজের বোঝা। সকলের মূখে কটু কথা শুনে নিজের জেদ কে দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়ে ২০১৯ সালে এই প্রতিবন্ধীদের নিয়েই কাজ শুরু করেন কাওছার আলী। বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি’র সহযোগীতায় ২০১১ সালে পত্নীতলার বেশকিছ ু সংখ্যক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ শুরু করেন।  তাদের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের দাবি আদায়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতির সহযোগীতায় প্রতিবছর একাধিক প্রকল্প নিয়ে প্রতিবন্ধীদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করছেন প্রতিবন্ধী কাওছার আলী। বর্তমানে তিনি ৩৭৬৫ বেশি  প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছেন। তাদের জন্য একটি বিদ্যালয়ও তৈরী করেছেন।

কাওছারের মাধ্যমে প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রতিবন্ধী বিভিন্ন কার্মসংস্থানে কাজ করছেন। আবার কাউকে প্রকর্পের মাধ্যমে দোকান, ট্রাই সাইকেল, হুইচ চেয়ারসহ বিভিন্ন ধরণের সুবিধা দিয়ে আসছেন।

প্রতিবন্ধী আবুল কালাম আযাদ বলেন, আমার এক পা নেই। আমি চলাফেরা করতে পারিনা। কাওছার ভাই আমাকে একটি ট্রাই সাইকেল দিয়েছিল তারপর থেকে আমি আমার নিজের মতো করে চলাফেরা করতে পারি। পরবর্তীতে সেই ট্রাই সাইকেলটি নষ্ট হলে কাওছার ভাই পত্নীতরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( তৎকালিক ) মোছা: পপি খাতুন এর সাথে যোগাযোগ করে আবারো একটি ট্রাই সাইকেল নিয়ে দেন। এখন আমি সেই ট্রাই সাইকেল এর মাধ্যমে বাদাম বিক্রি করে নিজের জীবন চালাই।

প্রতিবন্ধী নাজমা বেগম বলেন, কাওছার ভাই আমাকে ছোট একটি দোকান করতে সহযোগীতা করেন। এখন আল্লাহর রহমতে আমার বড়  একটি দোকান আছে। এই দোকানের মাধ্যমে আমি আমার পরিবার খুব ভালো করে পরিচালনা করতে পারি।

এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বলেন, ইচ্ছে শক্তি থাকলে মানুষ অনেক কিছু করতে পারে। এরই বাস্তব একটি উদাহরণ হলো আমাদের কাওছার আলী। কাওছার হোসেন নিজেই একজন প্রতিবন্ধী হয়ে এই সমাজের প্রতিবন্ধী মানুষগুলোর জন্য যা করছেন তা অতুলনীয়।

Manual8 Ad Code

প্রতিবন্ধী কাওছার আলী বলেন, ”আমরা প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়”  এই প্রতিপাদ্য কে সামনে রেখে আমি ২০০৯ সাল থেকে কাজ করে আসছি। প্রথমত অনেকেই অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরী করেছে। বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে প্রথমত যখন আমি বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করি তখন এলাকার কিছু লোকের চক্ষুরস হয়ে যাই আমি। তারা বিভিন্ন সময়ে আমার উন্নয়ন মূলক কাজে বাধা দিয়েছে। আবার সমাজে অনেক ভালো মানুষ আছে যারা আমার এই কাজে সার্বিক সহযোগীতায় সকল বাধা কে উপেক্ষা করে আমি প্রমাণ করতে পারছি আমরা প্রতিবন্ধীরা এই সমাজের বোঝা নয়, সুযোগ পেওে আমরাও ভালো কিছু করতে পারি।

Manual8 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code