আজ শনিবার, ১লা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শ্রীমঙ্গলে ফাগুয়া উৎসব: রঙে, গানে ও নৃত্যে চা-জনগোষ্ঠীর জীবনকথা

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ১২, ২০২৫, ০৭:১২ অপরাহ্ণ
শ্রীমঙ্গলে ফাগুয়া উৎসব: রঙে, গানে ও নৃত্যে চা-জনগোষ্ঠীর জীবনকথা

Sharing is caring!

Manual3 Ad Code
তাপস দাশ শ্রীমঙ্গল:
চায়ের সবুজ পর্দার আড়ালে কর্মজীবনের ক্লান্তিকে রঙে-গানে ভুলে গিয়ে উৎসবমুখর এক বিকেল কাটালেন মৌলভীবাজারের চা জনগোষ্ঠী।
শনিবার (১২ এপ্রিল) মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া চা-বাগানের সবুজ মাঠ যেন রঙিন ক্যানভাসে রূপ নিলো। শ্রমিক কলোনির সামনের ফুটবল মাঠের মাঝে নানা রঙের কাপড়ে সাজানো হয় অতিথি ও দর্শনার্থীদের আসন। মাঠের এক পাশে মঞ্চে উঠেন অতিথিরা। তাঁদের শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর রঙ ছিটিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ফাগুয়া উৎসব।
এ যেন শুধু উৎসব নয়, এক আত্মপরিচয়ের সম্মাননা। একে একে মঞ্চে আসেন চা জনগোষ্ঠীর শিল্পীরা। শুরু হয় তাঁদের মরমি সুর আর ছন্দময় নৃত্যের মাধ্যমে জীবনের গল্প বলা। গুরুবন্দনা, কুমুর দ্বৈত, হালি গীত, ডাল ও কাঠি নৃত্যে উঠে আসে তাঁদের সংস্কৃতির রঙিন রেখাচিত্র।
অনুষ্ঠানের আয়োজক জেলা প্রশাসন ও ফাগুয়া উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব ও ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক প্রীতম দাস।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত এ আয়োজনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা জানান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা  মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন।
বিশেষ অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন, ওসি মো. আমিনুল ইসলাম, বাগান প্রশাসনের প্রতিনিধি, চা-জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফোরামের সভাপতি পরিমল বাড়াইকসহ অনেকে।
পরিমল সিং বাড়াইক বলেন, “ফাগুয়া আমাদের জন্য শুধু উৎসব নয়, নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি আর ইতিহাসকে নতুন করে মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে—এখনই সাংস্কৃতিক সংরক্ষণে বাস্তব উদ্যোগ প্রয়োজন।”
ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক প্রীতম দাশ বলেন, “মৌলভীবাজারে দেশের সবচেয়ে বেশি চা-বাগান আছে। এখানেই সবচেয়ে বেশি চা-শ্রমিকের বসবাস। তাঁদের সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের লক্ষ্য।”
এক পর্যটক তরুণী, সায়রা তাসনিম, বলেন, “এই উৎসব যেন এক চলমান সাংস্কৃতিক যাত্রা, যেখানে সব রঙ একসঙ্গে কথা বলে। মনে হচ্ছিল, গল্প শুনছি—চা-জনগণের গল্প।”
ফাগুয়া উৎসব তাই শুধু একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন নয়—এটি স্মরণ করিয়ে দেয় চা-জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ ইতিহাস আর আত্মপরিচয়।
Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code