Sharing is caring!
উৎফল বড়ুয়া, সিলেট :
সিলেটের সঙ্গে দীর্ঘদিনের উন্নয়ন বৈষম্যের প্রতিবাদে এবং ন্যায্য উন্নয়ন দাবিতে রবিবার (২ নভেম্বর) সকালে সিলেট নগরীর সিটি পয়েন্টে অনুষ্ঠিত হয়েছে অবস্থান কর্মসূচি। ‘সিলেট আন্দোলন’-এর উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক, শিক্ষক, সাংবাদিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ হাজারো সাধারণ মানুষ।
অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি অভিযোগ করেন, দেশের অন্যান্য বিভাগে একের পর এক প্রকল্প অনুমোদন পেলেও সিলেট নিয়মিতভাবে বঞ্চিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ২৪ শত কোটি, খুলনায় ২৪ শত কোটি, চট্টগ্রামে ৩১ শত কোটি, বরিশালে ২৪ শত কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়, অথচ সিলেটের জন্য মাত্র ১৯ কোটি টাকার প্রকল্পও পরে ফেরত নেওয়া হয়েছে। কাটছাঁটের নামে সিলেটকে ক্রমাগত অবহেলা করা হচ্ছে। আমরা জানতে চাই- এই সিলেটবিদ্বেষের মূল কারা?’
আরিফুল হক চৌধুরী আরও বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর সিলেটবাসী বৈষম্যের শিকার। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলেও যদি এই বৈষম্য অব্যাহত থাকে, তাহলে সিলেটবাসী রাজপথে কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। সিলেটের উন্নয়ন বঞ্চনা এখন সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে।’
তিনি জানান, পর্যটন নগরী হিসেবে সিলেটের জন্য একটি বিশেষ ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি ছিল, কিন্তু সেটি বাতিল করা হয়েছে। সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-কক্সবাজার রেলপথে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন প্রকল্পও অদৃশ্য কারণে স্থগিত আছে। এছাড়া সিলেটে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের কাজ দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছে, ফলে পানির সংকট ঘনীভূত হচ্ছে।
আরিফুল হক চৌধুরী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘শাহজালাল (রহ.)–এর পবিত্র মাটিতে আর কোনো বৈষম্য সহ্য করা হবে না। আমাদের দাবি দ্রুত পূরণ না হলে সিলেট বিভাগজুড়ে কঠোর অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
তিনি আরও জানান, উন্নয়ন বৈষম্যের প্রতিবাদে সারা বিশ্বে প্রবাসী সিলেটিরাও ইতোমধ্যে সংহতি আন্দোলন শুরু করেছেন। সড়ক ও রেল যোগাযোগ, পানি সংকট, বিমান ভাড়া, স্থানীয় সরকার প্রকল্পের বরাদ্দসহ নানামুখী বঞ্চনার বিষয়গুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সিলেটের মানুষের এখন রাজপথে নামা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।’
কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন দরগাহ মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আসজাদ আহমদ। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সিলেট শুধু একটি অঞ্চল নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। তাই সিলেটের প্রতি বৈষম্য মানে দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা।’
এ সময় সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমের হাতে সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে লিখিত দাবি পেশ করেন।
দাবিপত্র গ্রহণ করে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জমি অধিগ্রহণের কাজ দ্রুত চলছে। রাস্তা সংস্কার, রেলপথ উন্নয়ন, পানির সংকট সমাধানসহ সব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সিলেট থেকে নতুন একটি ফ্লাইট চালু হবে। রেল যোগাযোগে টেকসই পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে সিলেটের মানুষকে আর আন্দোলনে নামতে না হয়। এছাড়া, এয়ারলাইনসের টিকিট সংক্রান্ত অস্বচ্ছতা দূর করতে সরকার আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। পানি সংকট নিরসনে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং সিলেটের পর্যটন শিল্প উন্নয়নে সরকারের একটি বৃহৎ পরিকল্পনা রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক আশ্বাস দেন, ‘টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার সিলেটের প্রতিটি প্রকল্পকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। উন্নয়ন বৈষম্য দূর করতে আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবো।’
প্রায় ৫ ঘণ্টাব্যাপী এ অবস্থান কর্মসূচিতে সিটি পয়েন্ট থেকে সুরমা মার্কেট পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকাজুড়ে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে নগরী। ‘আমাদের দাবি, আমরা করবো-আদায় করে ঘরে ফিরবো’ এই শ্লোগানে আন্দোলনকারীরা সিলেটের প্রতি বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানান।
কর্মসূচিতে অংশ নেন সিলেটের রাজনৈতিক ও পেশাজীবী নেতারা, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা, সাংস্কৃতিককর্মী, শিক্ষক, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
সবশেষে ‘সিলেট আন্দোলন’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকারের কাছ থেকে দ্রুত ইতিবাচক সাড়া না পেলে বিভাগব্যাপী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।