আজ সোমবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে নতুন উত্তাপ

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ১২, ২০২৫, ০৭:৩১ পূর্বাহ্ণ
ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে নতুন উত্তাপ

Sharing is caring!


Manual4 Ad Code

টাইমস  নিউজ

বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতি এখন সরগরম নির্বাচন নিয়ে। স্পষ্ট করে বললে নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে। নির্বাচন আগে নাকি সংস্কার আগে -সেই বিতর্কে সম্পর্কে ভাটা পড়েছে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গেও প্রকাশ্যে কথার লড়াইয়ে জড়িয়েছেন বিএনপি নেতারা।

Manual3 Ad Code

এরমধ্যেই নতুন উত্তাপ শুরু হয়েছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। শুরুটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন নিয়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবির এবং মোটাদাগে অন্যান্য সংগঠনগুলো খুব দ্রুতই ডাকসু নির্বাচনে আগ্রহী। তবে এখানে আবার একটু সময় নিতে চায় বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল। তাদের যুক্তি আগে সংস্কার, তারপর নির্বাচন।

এই বিতর্কের মধ্যেই বিরোধ আরও বেড়েছে কারণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা চায় জাতীয় নির্বাচনের আগেই সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়ে যাক। সবমিলিয়ে ছাত্ররাজনীতিতে বেশ চাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে।

ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দিকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে গেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। গত ৩০ ডিসেম্বর ছাত্রসংসদ নির্বাচন তথা জাকসুর রোডম্যাপ দিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

Manual6 Ad Code

রোডম্যাপ অনুযায়ী এর একদিন পরই নির্বাচন কমিশনও গঠিত হয়। চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। আর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে পহেলা ফেব্রুয়ারি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ কিংবা বাম সংগঠনগুলো নির্বাচনের এই রোডম্যাপকে স্বাগত জানালেও নির্বাচনের সময় নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছে ছাত্রদল।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনটির সদ্য গঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাইমুল হাসান কৌশিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা আগে সংস্কার এবং বিচার চান।

তিনি বলেন, যৌক্তিক সংস্কার এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, হামলাকারী ছাত্রলীগ এদের বিচারের পূর্বে কোনো ধরনের নির্বাচন উপযুক্ত মনে করছি না। এই বিষয়গুলোর আগে সুরাহা করতে হবে। তাছাড়া দীর্ঘ সতেরো বছর আমরা ক্যাম্পাসের বাইরে। আমাদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক এবং জানাশোনার জন্যও সময় প্রয়োজন। একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তখনই সম্ভব।

ছাত্রদল সংস্কার চায়। চায় প্রস্তুতির সময়। তবে এর জন্য আবার নির্বাচনে দেরি করার কোনো যুক্তি দেখছে না জাহাঙ্গীরনগরের অন্য ছাত্রসংগঠনগুলো। তাদেরই একটি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট।

ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক সোহাগী সামিয়া বলছেন, কারও সুবিধার জন্য নির্বাচন পেছানোর পক্ষপাতি নন তারা।

তিনি বলছেন, কোনো সংগঠনের সাংগঠনিক আয়োজনের জন্য তো নির্বাচন আটকাতে পারে না। আমরা বলতে চাই এই মুহূর্ত থেকে ডাকসু নির্বাচনের যতো ধরনের প্রস্তুতি আছে সেগুলো নিতে হবে। কারণ গণঅভ্যত্থানে এতো শিক্ষার্থী জীবন দিয়েছে, এর বিনিময়ে আমরা যদি এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন দিতে না পারি, তাহলে তো গণতন্ত্রটাই ভেঙে পড়লো।

 

নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়। একই অবস্থা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন নিয়েও দেখা যাচ্ছে। একইসঙ্গে উঠে আসছে দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ।

Manual8 Ad Code

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে সোচ্চার দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসা ছাত্রশিবিরকেও। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এমন সময়ে প্রকাশ্যে এসেই শিবির কেন জোর দিচ্ছে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সেটা একটা বড় প্রশ্ন।

তবে ছাত্রশিবির বলছে, নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি আছে তাদের। সেক্ষেত্রে দ্রুত নির্বাচনের পক্ষপাতি সংগঠনটি। কিন্তু কেন?

জানতে চাইলে ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম বিবিসিকে বলেন, ক্যাম্পাসগুলোতে যতো দিন যাচ্ছে, আমরা দেখছি একধরনের বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক সংগঠন আরেকজনের বিরুদ্ধে নানাভাবে অভিযোগ দিচ্ছে। আবার নানারকম ক্ল্যাশ দেখা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন কোনো প্ল্যাটফরম নেই, যারা এসবসহ অন্য যেকোনো সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে পারে।

তিনি বলছেন, ছাত্র সংসদ ইলেকশন হয়ে গেলে প্রতিটি ক্যাম্পাস তাদের প্রতিনিধি পাবে। ছাত্ররা তখন তাদের মাধ্যমে কোনও দাবি-দাওয়া থাকলে সেটা প্রশাসনের কাছে পৌছাতে পাারবে। এখন যে সমস্যা হচ্ছে, কোনো একটা ছাত্রসংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কোনো দাবি নিয়ে গেলে তাকে আগে চিন্তা করতে হয়, তার মূল দলের ভিউপয়েন্ট কী? মূল দলের পারসেপশনটা কী? কিন্তু ছাত্র সংসদ হয়ে গেলে ছাত্ররা তার অধিকারগুলোকেই প্রশাসনের কাছে নিয়ে যাবে।

তবে ছাত্রদের নির্বাচন হলেও এর একটা বৃহত্তর রাজনৈতিক তাৎপর্যও আছে। ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চায় জাতীয় নির্বাচনের আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র নেতৃত্বের নির্বাচন দেখতে। কিন্তু এতে কী লাভ?

এক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করছে, ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়ে গেলে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ছাত্র নেতৃত্ব তৈরি হবে, যারা গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় ভূমিকা রাখবে।

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাকসু নির্বাচন নিয়ে এক সংলাপে এমন বক্তব্যই তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল। এর জন্য জাতীয় নির্বাচনের আগেই ছাত্র নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।

তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগেই এটা হওয়া জরুরি। কারণ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে যে নেতৃত্ব উঠে আসবে, তারা হবে আমাদের গণতন্ত্রের সেইভগার্ড (রক্ষাকবচ)। এই সেইভগার্ড নিয়েই আমরা জাতীয় নির্বাচনের দিকে যাবো, গণতান্ত্রিক একটা পরিবেশে আমরা সব পক্ষই প্রবেশ করবো।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে জাতীয় রাজনীতির একটা ধারা হিসেবেই বিবেচনা করছে। যদিও ছাত্রদল তাদের ভাষায় ‘সংস্কার এবং বিচারের আগে’ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিকে দেখছে ষড়যন্ত্র হিসেবে।

Manual2 Ad Code

সংগঠনটির ভেতরে আলোচনা আছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং ছাত্র শিবিরসহ বিভিন্ন পক্ষ একসঙ্গে হয়ে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে কাজ করছে।

এছাড়া সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটা অংশ যে মিছিল করেছে তার পেছনেও ষড়যন্ত্র দেখছে সংগঠনটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাল্টা মিছিল করে ছাত্রদল।

জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বিবিসি বাংলাকে জানান, তারা কখনোই নির্বাচনের বিরোধী নন। কিন্তু তাদেরকে নির্বাচনের বিরোধী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে ‘ফায়দা লুটতে চায়’ একটি পক্ষ।

তিনি বলছেন, আমরা এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি এবং আল্লাহর রহমতে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আপনি দেখবেন, সাধারণ শিক্ষার্থীসহ সকল ক্যাম্পাসে আমাদের নেতা-কর্মী বৃদ্ধি পাচ্ছে। তো এটা হয়তো একটা গোষ্ঠী রয়েছে, যারা চায় ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এমন সম্পৃক্ততা যেন না হয়। কারণ তাহলে যারা নতুন সংগঠন এখন রয়েছে তাদের অস্তিত্য থাকবে না। সে কারণে তারা কোনো সংস্কার, ছাত্রলীগের বিচার না করেই ইলেকশন চায়। কোনোমতে একটা নির্বাচন দিয়ে পাস করাই হয়তো তাদের উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সংগঠনগুলো নিজ নামে সরাসরি অংশ নিতে পারে না। কিন্তু এরপরও অতীতের নির্বাচনে বিভিন্ন প্যানেলের নামে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে মূলত রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যেই।

ফলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে এসব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হয়। কিন্তু এবারের নির্বাচন নিয়ে যে একধরনের বিরোধীতা দেখা যাচ্ছে সেখানে ঐকমত্য কতটা আসবে তা বড় প্রশ্ন।

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code