আজ শুক্রবার, ২৪শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নরেন্দ্র মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরঃ একটি সমীক্ষা

editor
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ
নরেন্দ্র মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরঃ একটি সমীক্ষা

Sharing is caring!

Manual3 Ad Code

 

সুব্রত নন্দী

গত ২০ জানুয়ারী ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেব দ্বিতীয়বারের মত ক্ষমতায় ফিরে আসার মাত্র তিন সপ্তাহের ভেতর এই প্রথম একটি দেশের রাষ্ট্র প্রধান হিসেব নরেন্দ্র মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফর বেশ কৌতুহল সৃষ্টি করেছে !

Manual2 Ad Code

নরেন্দ্র মোদী ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আরেকবার যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিলেন তখন তাকে উষ্ন অভ্যর্থনা দিয়েছিলেন ট্রাম্প ! বলেছিলেন মোদী তার দীর্ঘদিনের বন্ধু! কিন্তু পরবর্তীতে দ্বিপাক্ষিক নানা ইস্যুতে বিশেষ করে যুক্তরাস্ট্রে ভারতের অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যাবর্তনে ভারতের অনিহা ও ভারতে রপ্তানীকৃত মার্কিন পণ্যে বেশি করে শুল্ক আরোপের ঘটনায় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হয় ! কিন্তু গত ৭/৮ বছরে চীন মার্কিন বানিজ্য লড়াইয়ে চীনের আধিপত্য ও তাইওয়ান ইস্যুকে কেন্দ্র করে গোপনে চীনের সামরিক শ্রেষ্টত্বের গোপন চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের কপালে চিন্তার ভাঁজ তৈরি করে ! পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া , ইরান ও আফ্রিকার ছোট বড় আন্চলিক শক্তিগুলোকে হাতে নিয়ে দক্ষিন আমেরিকার ল্যাটিনো দেশগুলির দিকে চীনের বানিজ্যিক ও সামরিক অগ্রযাত্রা যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে !
চীনকে থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পছন্দ হলো ৪০ লক্ষ সেনা সমৃদ্ধ পৃথিবীর চতুর্থ সামরিক শক্তি ভারত ! কিন্তু ভারতের চিরায়ত জোট নিরপেক্ষ নীতি ও রাশিয়া ঘেষা পররাষ্ট্র নীতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সবসময়ই অতিচালাক ও সন্দেহের চোখে দেখেছে ! দক্ষিন এশিয়াতে গত দশ বছরে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে ! চীন তাদের নতুন উদ্ভাবিত সামরিক সম্ভারকে ভারতের সীমান্ত বরাবর অত্যন্ত আগ্রাসীভাবে মোতায়েন করেছে ! তৈরি করেছে তাদের ষষ্ঠ প্রজন্মের স্টিল্থ যুদ্ধ বিমান ! সেগুলির ভেতর পন্চম প্জন্মের J-35 / J20 পাকিস্তানকে দিয়েছে ! ভারতের হাতে ৫ম প্রজম্মের বিমান নেই ! এমন বিমান ভারত নিজেই তৈরি করছে তবে বিমান সেনাদের পৌঁছতে আরো দশ বছর লেগে যাবে ! এরমধ্যে গত ৫৪ বছরের পরীক্ষিত বন্ধু প্রতেবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি ইসলামিক বিপ্লব হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশকে ভারত আর বিশ্বাস করতে পারছে না , পাকিস্তান অলিখিতভাবে এখন সেই আগের পূর্ব পশ্চিম ভৌগলিক অবস্থানে ফিরে গেছে ! ১৯৭১ এর পরাজিত রাজাকারদের হাতে এখন বাংলাদেশের স্বার্বভৌমত্ব দখল হয়ে গেছে ! এই ত্রিশঙ্কু বিপদে ভারত কখনোই পড়ে নাই ! পাকিস্তান যদি এখন দুই ফ্রন্টে জঙ্গী আক্রমণ চালায় বা চীনকে সাথে নিয়ে আক্রমণ করে তবে নিশ্চিত ভারতের ১৯৬২ এর পরিনতি বরন করতে হতে পারে বলে সামরিক বিশ্লেষকরা মতামত প্রকাশ করেছে !
ঠিক এমনি একটি পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল জাতীয়তাবাদী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় আরোহন বিশ্বজুড়ে একটি নতুন আবহ সৃষ্টি করেছে ! ট্রাম্পের নতুন বানিজ্য নীতি যাকে আমরা বানিজ্য যুদ্ধ বলছি তাতে তেমন কোন ছাড় কাউকেই তিনি দেবেন বলে মনে হয় না ! নরেন্দ্রমোদী এটা মেনে নিয়েই গিভ এন্ড টেক পলিসির দিকে এগুচ্ছেন ! তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানীকৃত মালামালের উপর শুল্ক কমিয়ে দিয়েছেন , বলছেন আমরা তো কমালাম এখন আপনি যৎকিন্চিৎ ছাড়েন। অবৈধ অভিবাসী ফেরত নিতে সম্মত হয়েছেন ! আজকেও বৈঠক চলাকালীন সময়ে দুই বিমান ভর্তি অভিবাসী ভারত ফিরে যাচ্ছেন ! যুক্তরাষ্ট্রের সকল শর্ত মেনে নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ অভিবাসীদের নেবার জন্য H1 B ভিসা চাইছেন ! ট্রাম্প তাতে রাজি ! কারন তার কেবিনেটে বেশ কয়েকজন ভারতীয় বংশোদ্ভুত এক্সপার্ট আছেন ! যুক্তরাষ্ট্র ভারতের আইটি বিশেষজ্ঞদের যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির প্রাণ ভ্রমর বলে মনে করে !
ট্রাম্প চাইছেন ভারত যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী স্টিল্থ যুদ্ধ বিমান F-35 তাদের বিমান বাহিনীতে সংযুক্ত করুক , ভারত চীনের সঙ্গে পাল্লা দিতে এখনই ৮০ টি F-35 চায় ! যৌথভাবে এটা তারা লকহিড মার্টিনের সঙ্গে ভারতেই উৎপাদন করতে চায় ! ট্রাম্প হয়ত সেই অনুমোদন দেবেন ! ভারত যুক্তরাষ্ট্রের মত নেভী সিল কমান্ডো করতে চান ! এজন্য ভয়ন্কর আর্মার ভেহিকেল আমদানীর একটা চুক্তি হয়েছে ! যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণঘাতী MQ ড্রোন চুক্তির চালানের বাইরে আরো ৫০ টি ড্রোন তারা চেয়েছে ! দক্ষিন এশিয়াতে ইসরাইলের মত একটি মিলিটারী কোলন হিসেবে ভারতকেই আমেরিকার একমাত্র পছন্দ ! বানিজ্য ও সামরিক শক্তির অংশী হিসেবে ইসরাইলের পরেই হবে ভারতের অবস্থান !
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির একটা যুত্সই সমাধান চান ! বাংলাদেশ ভবিষ্যতে জঙ্গীবাদের আস্তানা হিসেবে পাকিস্তানের মতই সবসময় সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি করুক সেটা হতে দেবে না ! আজ ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন বাংলাদেশেকে আমি নরেন্দ্র মোদীর হাতে ছেড়ে দিয়েছি ! অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কি হবে তা ভারত তার আভ্যন্তরীন নিরাপত্তার স্বার্থেই সেটা নির্ধারন করবেন ! বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়ে কাজ না হলে বাংলাদেশের গায়ে পারা দিয়ে ভারত বিরোধীতার খেসারত খুব একটা ভাল হবে না বলেই মনে করি ! জঙ্গীবাদ দিয়ে গত ৭২ বছরে পাকিস্তান ভারতের একটি চুল ছিঁড়তে পারেনি বরং নিজেরাই ফকির হয়েছে ! একটি উনিনয়নশীল দেশ হিসেবে আমার বাংলাদেশ তা হোক কখনই আমরা তা চাইব না !
নরেন্দ্র মোদী যুক্তরাষ্ট্রে সফরে তার সঙ্গে দেখা করেছেন ইলন মাক্স , যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টস , যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড , উদ্যোক্তা ও রিপাবলিকান ভারতীয় বংশোদ্ভুত বিবেক রামস্বামী ! নিরাপত্তা উপদেষ্টা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বরাতে নরেন্দ্রমোদীকে নিশ্চিত করেছেন ২৬/১১ তে মুম্বাই হামলার অভিযুক্ত তাহাউর রানাকে ভারতের হাতে বিচারের জন্য তুলে দেবে যুক্তরাষ্ট্র ! এই হামলায় ২৬ জন বিদেশী সহ ১৬৬ জন নিহত হয়েছিলেন ! মোট ৩৬ ঘন্টার ৬ টি হাইপ্রোফাইল মিটিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিবির সম্পর্ক তৈরি , অভিবাসন সুবিধা , বানিজ্য ও শুল্ক কমানো ও সামরিক অস্ত্রের চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে ! যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সম্পর্কের এই নতুন মেরুকরণে দক্ষিন এশিয়াতে জঙ্গীবাদ দমন ও শান্তির সুবাতাস বয়ে নিয়ে আসবে বলেই আমি মনে করি! এ নিয়ে নিশ্চয়ই বড় দুশ্চিন্তায় আছেন বাংলাদেশের পাকিস্তানপন্থী অনির্বাচিত অবৈধ রাজাকার অপদেষ্টারা ।

Manual3 Ad Code

 

Manual1 Ad Code

সুব্রত নন্দী ঃ সাংবাদিক 

Manual8 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code