আজ শনিবার, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অপু বিশ্বাস-শাওন-জায়েদ খান-নুসরাত ফারিয়াসহ ১৭ অভিনয়-শিল্পীর নামে মামলা

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ০২:৫৭ অপরাহ্ণ
অপু বিশ্বাস-শাওন-জায়েদ খান-নুসরাত ফারিয়াসহ ১৭ অভিনয়-শিল্পীর নামে মামলা

Oplus_16908288

Sharing is caring!

Manual6 Ad Code
সদরুল আইনঃ
ঢাকাই চলচ্চিত্র অঙ্গন এক নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বড় পর্দার জনপ্রিয় সব অভিনয়শিল্পীকে এবার দেখা যাচ্ছে ভিন্ন এক মঞ্চে-আইনের কাঠগড়ায়।
তারকাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর, হত্যাচেষ্টা। মামলার তালিকায় নাম উঠেছে নুসরাত ফারিয়া, অপু বিশ্বাস, জায়েদ খান, নিপুণ আক্তার, সুবর্ণা মোস্তফা, রোকেয়া প্রাচী, সোহানা সাবা, আশনা হাবিব ভাবনা, মেহের আফরোজ শাওন, জ্যোতিকা জ্যোতিসহ ১৭ জন শিল্পীর।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহুরুল ইসলাম।
২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন রাজধানী ঢাকার ভাটার থানাধীন এলাকায় হওয়া একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে।
মামলাটি দায়ের করেছেন এনামুল হক নামে এক ব্যক্তি। দায়ের করা মামলায় অভিযোগ তোলা হয়েছে, এই তারকারা আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত হত্যাচেষ্টায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন।
মামলার নথিপত্র সূত্র জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের সংশ্লিষ্ট ২৮৩ জন ও অজ্ঞাতনামা তিন-চারশ’ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেছেন এনামুল হক।
মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে আসামি করা হয়েছে ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে।
ফারিয়া ছাড়াও আসামি করা হয়েছে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফা, রোকেয়া প্রাচী, আসনা হাবিব ভাবনা, সোহানা সাবা, মেহের আফরোজ শাওন, জ্যোতিকা জ্যোতি, চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক, জায়েদ খান, আজিজুল হাকিমসহ ১৭ অভিনয়-শিল্পীকে।
এ বিষয়ে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ১৭ অভিনয়শিল্পীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। আমাদের কাছে এটা তদন্তের জন্য এসেছে। সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া মেনেই মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
চলচ্চিত্র অঙ্গনে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নতুন কিছু নয়। অতীতে বিভিন্ন সময় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া, দলীয় অনুষ্ঠান বা প্রচারণায় অংশ নেওয়া এবং সরকারি পদে থাকা শিল্পীদের রাজনৈতিক অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
কিন্তু সরাসরি সহিংসতায় যুক্ত থাকার অভিযোগ, বিশেষ করে হত্যাচেষ্টার মতো গুরুতর মামলায় এত সংখ্যক তারকার নাম আসা নজিরবিহীন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মামলা কেবল আইনি প্রক্রিয়ার অংশ নয়, বরং এর একটি রাজনৈতিক দিকও রয়েছে। সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারকারা এক ধরনের ‘সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার’ হিসেবে বিবেচিত হন।
তাই রাজনৈতিক বিতর্কে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের বিরুদ্ধে এমন মামলা আদালতের বাইরেও প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেক সংগঠন ও শিল্পী এই ঘটনায় হতবাক। তারা মনে করছেন, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানি হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ অভিনেতা বলেন, ‘তারকাদের রাজনৈতিক মত থাকতে পারে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে সরাসরি মামলায় জড়ানো একটি গভীর সংকেত বহন করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি কেবল একটি মামলা নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিসরে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে।’
অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘আমরা যদি সত্যিই হত্যাচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হতাম, তাহলে কোনো তদন্ত ছাড়াই এতদিনে প্রমাণ আসত। এই মামলা প্রমাণ করে দেশে মত প্রকাশ বা ভিন্ন অবস্থান নেয়ার দায়ও এখন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।’
আইন ও গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মামলা একটি বিপজ্জনক নজির তৈরি করতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব কবির বলেন, ‘এ ধরনের মামলায় আদালতের দায়িত্ব অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে কাজ করা। যদি মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, তবে এটি অপব্যবহার এবং হয়রানির শামিল।’
তিনি বলেন, ‘অন্যদিকে যদি অভিযোগে সত্যতা থাকে, তাহলে এটি শিল্পীদের সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়েও নতুন করে ভাবার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।’
সাহিত্য, সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্র অঙ্গন বরাবরই ছিল জনচেতনার প্রতিফলন এবং প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের উৎস। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও সুবিধা অর্জনের প্রবণতা একে বিতর্কিত করে তুলেছে। এবার সেই বিতর্ক আরও একধাপ এগিয়ে- সরাসরি ‘হত্যাচেষ্টা’র অভিযোগে।
আদালত ও তদন্ত সংস্থার ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি জনমত ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের প্রতিক্রিয়া এটিকে কেমন মাত্রায় নিয়ে যাবে, সেটিও দেখার বিষয়।
এটি শুধু একটি মামলার প্রশ্ন নয়, বরং এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বলয়ের রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্ক এবং নিরপেক্ষতা নিয়েও একটি বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে।
Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code