ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে ‘হত্যা’ করার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইসরায়েলি পত্রিকা ইদিয়োত আহারোনোত-এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে কাৎজ বলেন, এ ধরনের একজন মানুষের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্য এমন এক সময় এলো, যখন ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র সোরোকা হাসপাতাল এলাকায় আঘাত হানে। যদিও ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, হাসপাতাল নয়, হাসপাতালের পাশেই একটি সামরিক স্থাপনাই ছিল মূল লক্ষ্য।
তবে ইসরায়েলি পক্ষ বলছে, বেসামরিক স্থাপনায় হামলার নির্দেশ দিয়ে খামেনি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ আরও বলেন, ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করাই যার উদ্দেশ্য, তাকে আর পৃথিবীতে থাকতে দেওয়া যায় না।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ৮০ জন আহত হয়েছেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু ছিল সোরোকা হাসপাতালের পাশে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদরদপ্তর। তাদের দাবি, বিস্ফোরণের তরঙ্গে হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেখানেই অনেকে আহত হন।
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে ইসরায়েলের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারের একাধিক ওয়ার্ড ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের মহাপরিচালক শ্লোমি কোদেশ।
বিবিসিকে তিনি বলেন, পুরো হাসপাতালজুড়েই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে—ভবন, কাঠামো, জানালা, ছাদ—সবখানে ধ্বংসের চিহ্ন রয়েছে।
হামলার আগে হাসপাতালের উত্তর পাশের পুরনো সার্জিক্যাল ভবনটি থেকে রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে জানান কোদেশ। এই ভবনটি যেহেতু পুরোনো, তাই গত কয়েকদিন ধরেই আমরা এটি খালি করে রেখেছিলাম। হামলার সময় সেটি ফাঁকা ছিল।
তবে হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগ, যেখানে তখনও রোগী ও কর্মীরা অবস্থান করছিলেন, সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
কোদেশ বলেন, হাসপাতালে থাকা অবস্থায় ৪০ জন আহত হয়েছেন। অধিকাংশই হাসপাতালের কর্মী ও রোগী। মূলত ভাঙা কাচ, ছাদ ধসে পড়া ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক প্রভাবের কারণেই তারা আহত হন।
শ্লোমি কোদেশ আরও জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে সোরোকা মেডিকেল সেন্টার থেকে ২০০ জনের বেশি রোগীকে অন্য মেডিকেল সেন্টারে স্থানান্তর করা হবে এবং হাসপাতালের অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করছে বিশেষজ্ঞ দল।
দুজন মার্কিন কর্মকর্তা বুধবার জানিয়েছেন, সম্ভাব্য ইরানি হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি ঘাঁটি থেকে কিছু বিমান ও যুদ্ধজাহাজ সরিয়ে নিয়েছে।
এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও স্পষ্টভাবে জানাননি— যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় হামলা করবে কি না। ছয় দিন ধরে চলা বিমান হামলার মধ্যে ইরানের রাজধানী ছাড়ছেন ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে ব্লুমবার্গ নিউজ বুধবার জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের সিনিয়র কর্মকর্তারা ইরানে আসন্ন হামলার সম্ভাবনা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তবে এই পরিকল্পনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কয়েকটি সূত্র উইকএন্ডে হামলা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে।
বুধবার (১৮ জুন) সকালে হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, তিনি এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি বলেন, আমি এটা (ইরানে হামলা) করতে পারি, আবার না-ও করতে পারি। মানে কেউই জানে না আমি কী করব।
এদিকে বৃহস্পতিবার কাতারের মার্কিন দূতাবাস এক সতর্কবার্তা জারি করেছে। সেখানে তাদের মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের সাময়িকভাবে কাতারের আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে প্রবেশ সীমিত রাখতে বলা হয়েছে। দোহার বাইরে মরুভূমিতে অবস্থিত এই ঘাঁটি মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক স্থাপনা।
দূতাবাস কর্মী ও কাতারে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের দেওয়া সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, চলমান আঞ্চলিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, বিমান ও যুদ্ধজাহাজ সরিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্য মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও সরঞ্জামকে নিরাপদ রাখা। তবে ঠিক কতগুলো বিমান ও জাহাজ সরানো হয়েছে এবং সেগুলো কোথায় নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তারা কিছু জানাননি।