আজ বৃহস্পতিবার, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আবরার হত্যার আসামিসহ কারাগার থেকে পালানো ৫৩ ফাঁসির আসামির হদিস নেই

editor
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০৬:১৬ অপরাহ্ণ
আবরার হত্যার আসামিসহ কারাগার থেকে পালানো ৫৩ ফাঁসির আসামির হদিস নেই

Sharing is caring!

Manual2 Ad Code

টাইমস নিউজ 

Manual3 Ad Code

গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ৫৩ জন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তসহ ১৫১ জন আসামির হদিস এখনো পাওয়া যায়নি। গত বছর ৫ আগস্টে আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কারা বিদ্রোহ করে তারা পালিয়ে গিয়েছিল।

পালিয়ে বেড়ানো এসব আসামির মধ্যে বুয়েটের বহুল আলোচিত আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও আছে। এ কারণেই বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন (৬ আগস্ট) কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে মোট ২০২ জন আসামি পালিয়ে গিয়েছিল।

কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, পলাতক ২০২ জনের মধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিল ৮৮ জন। ওই সময়ে যারা পালিয়ে গিয়েছিল তাদের মধ্যে ৫১ জনকে আমরা ফেরত পেয়েছি। এদের মধ্যে ৩৫ জন বিভিন্ন মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

তবে এখনো যারা পালিয়ে আছে তাদের মধ্যে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি ছাড়া আলোচিত আর কোনো মামলার আসামি নেই বলে দাবি করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

আবরারের খুনি জেমির পালিয়ে যাওয়ার খবর সোমবার গণমাধ্যমে আসার পর রাতে বুয়েটে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। রাতেই এক সংবাদ সম্মেলনে তারা পালিয়ে যাওয়া আসামিকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীর নির্মম নির্যাতনে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়টির ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আবরার ফাহাদ।এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বুয়েটসহ সারা দেশ আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠে তখন। তুমুল অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল পুরো দেশজুড়ে।ওই ঘটনায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত।

Manual5 Ad Code

বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির আল জেমিসহ আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত সবাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল।

আবরার খুনের আসামি পালানোর খবর কিভাবে প্রকাশ্যে এলো

আবরার হত্যা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি সোমবার শেষ হয়েছে। এখন রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন হাইকোর্ট।এর মধ্যেই সোমবার ওই মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামির কারাগার থেকে পালানোর খবর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যার জের ধরে রাতে বুয়েটে বিক্ষোভে নামে একদল শিক্ষার্থী।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরদিন গত ৬ আগস্ট ওই আসামি জেল থেকে পালিয়েছে বলে জানান আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ এবং ওই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জসিম উদ্দিন।

গতকাল (সোমবার) আবরারের বাবা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সোমবার শুনানির শেষ পর্যায়ে বিচারপতি জানতে চান, কোন কোন আসামির পক্ষে কোন কোন আইনজীবী আছেন। তখন সেখানেই জানানো হয় যে কাশিমপুর কারাগার থেকে মুনতাসির আল জেমি পালিয়েছে।’

তিনি জানান, গত ৬ আগস্ট ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেমি কারাগার থেকে পালালেও সোমবারই প্রথম তিনি তা জানতে পারেন আদালতে মামলার শুনানির সময়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জসীমউদ্দিন জানান, জেমির সঙ্গে জেলে থাকা আরেক আসামির মাধ্যমেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।এ ছাড়া আসামি পক্ষের আইনজীবী ও কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেও বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন তিনি।

Manual8 Ad Code

কারাগার থেকে কিভাবে পালাল জেমি

কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুন জানান, ওই কারাগার থেকে যে ২০২ জন পালিয়েছিল তাদের মধ্যে ৮৮ জন ফাঁসির আসামির পাশাপাশি ১১ জন ছিল বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। আর বাকি ১০৩ জন বিভিন্ন মামলায় বিচারাধীন ছিল।

জানা গেছে, ওই কারাগার কমপ্লেক্সের ভেতরে মোট চারটি কারাগার আছে, যার একটি নারী আসামিদের জন্য।এর মধ্যে হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বিডিআর বিদ্রোহ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, জঙ্গি, ফাঁসি ও যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া আসামিদের পাশাপাশি কিছু রাজনৈতিক মামলার আসামিদেরও রাখা হয়।

আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট এই হাইসিকিউরিটি কারাগারের কারারক্ষীদের জিম্মি করে একদল কয়েদী তাদের মুক্তি দাবি করে।তখন কারাগারের নিরাপত্তায় সেনা সদস্যরাও নিয়োজিত ছিলেন। তারাও বন্দিদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।এক পর্যায়ে বিদ্রোহী বন্দিরা একটি দেওয়াল ভেঙে ফেলে এবং মই ব্যবহার করে দেওয়ালের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারারক্ষীরা গুলি করে। পরে হেলিকপ্টারে করে আরও সেনা সদস্য সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন।

ওই ঘটনার সময় গুলিতে হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ডের মামলার দুজন আসামিসহ মোট ছয়জন নিহত হয়।

এ ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানায় যে মামলা করে সেখানে বলা হয়, ‘কারাগারের দেওয়াল ভেঙে ও বিদ্যুতের পোল উপড়ে ফেলে মই বানিয়ে কারাগারের দেওয়াল টপকে ২০৩ জন পালিয়ে যায়’। যদিও এখন কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, এই সংখ্যা আসলে ২০২ জন।

ওই দিনের এ ঘটনায় যারা পালিয়েছিল তাদেরই একজন হলেন আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আসামি মুনতাসির আল জেমি।

Manual4 Ad Code

জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, এখনো যারা পালিয়ে আছে তাদের ধরতে পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে।সূত্র: বিবিসি

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code