আজ শুক্রবার, ৩রা অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক বছর পুর্তি হলেও কোন সরকারী অনুদান পায়নি মৌলভীবাজারে গুলিবৃদ্ধ দুই জুলাই যোদ্ধা

editor
প্রকাশিত আগস্ট ৪, ২০২৫, ০৮:২৮ পূর্বাহ্ণ
এক বছর পুর্তি হলেও কোন সরকারী অনুদান পায়নি মৌলভীবাজারে গুলিবৃদ্ধ দুই জুলাই যোদ্ধা

Sharing is caring!

Manual3 Ad Code

জাফর ইকবাল মৌলভীবাজার:

Manual3 Ad Code

মৌলভীবাজার ২৪ জুলাই পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ক্ষত চিহ্ন নিয়ে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে আহত তারেক মিয়া (২৭) ও রজব আলী (৪২)। ৪ আগষ্ট মৌলভীবাজার সদরের চাঁদনীঘাট থেকে স্বৈরাচার পতনের দাবীতে ছাত্র জনতার মিছিল শহরে প্রবেশ করতে গিয়ে চাঁদনী ঘাট ব্রীজের উপর থেকে পুলিশের গুলিতে আহত হয় তারেক মিয়া ও রজব আলী ।

Manual1 Ad Code

পরিবারের লোক খবর পেয়ে নিয়ে যায় মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চলে আসে বাসায়। শরীরে থেকে যায় অসংখ্য গুলি। টাকার অভাবে আর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। মোহাম্মদ তারেক মিয়া পেশায় একজন ভ্যান রিক্সা দিয়ে কাপড় ফেরি করে বিক্রি করে।কুলাউড়ার বরমচালে তার গ্রামের বাড়ি। ব্যাবসার কারনে স্বপরিবার নিয়ে চাঁদনীঘাট গুজারাই এলাকায় বসবাস করে। রজব আলী হোটেলের বাবুর্চি। সেও স্বপরিবার নিয়ে বসবাস করে গুজারাই। জুলাই বিপ্লবের ১ বছর পুর্ণ হতে চলেছে। কিন্তু কেউ নেয়নি তাদের খবর।মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক অফিসে আবেদন করে কোন ফলাফল আজও জানতে পারেনি।

Manual7 Ad Code

তারেক মিয়া ২৪ জুলাইয়ের স্মৃতিচারন করে বলেন, আমি একজন ফেরিওয়ালা। ভ্যান রিক্স দিয়ে কপড় বিক্রি করি। ২০২৪ সালের ৪ আগষ্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের দাবীতে ছাত্র জনতা মিছিল নিয়ে চাঁদনী ঘাট ব্রিজ থেকে শহরে প্রবেশের চেষ্টা করে। আমিও ভ্যান রেখে ছাত্রদের সাথে যোগ দেই স্বৈরাচার সরকার পতনের জন্য। যখন আমার ব্রিজের উপর উঠি তখন পুলিশ আমাদের উপর টি আর গ্যাস মারে। আমাদের মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তখন আমি চোখে হাত দেই আর তখন পুলিশ ছিটা গুলি শুরু করছে। আমার সারা শরীরে, পিঠে এবং হাতে ২৬/২৭ টি গুলি লেগে রক্ত ঝরতে থাকে। চোখে ধরে ব্রিজের ওই পাশ থেকে এ পাশে চলে আসি। তারপর আমার আর কোনো জ্ঞান ছিলও না। আমার ভাই বোন আমাকে নিয়ে হাসপাতালে ডাক্তার দেখায়। আমি গরীব ফেরিওলা। সংসারে আমার স্ত্রী, ২ মেয়ে,আমার মা আছেন। টানটানির সংসার। আর চিকিৎসা করাতে পারিনি। আমার চিকিৎসা পত্র সহ মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও কোনো ফলাফল পাই নাই।
রজব আলী বলেন, আমি পেশায় বাবুর্চি। চাঁদনীঘাট গুজাইয়ে স্বপরিবার নিয়ে থাকি। ছাত্রজনতার আন্দোলনের ৪ আগষ্ট মিছিলে যোগ দেই। চাঁদনীঘাট ব্রীজের উপর পুলিশ গুলি করে। অন্তত ৩৭ টি গুলি আমার সারা শরীরে লাগে। আমি পড়ে যাই। খবর পেয়ে আমার বোন আমাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে কোন কাজ করতে পারিনা। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের নিকট চিকিৎসার সব কাগজ পত্র সহ আবেদন করেছি। কোন ফলাফল পাইনি।
তারেক মিয়ার ভাই, মোহাম্মদ উসমান আলী বলেন, ৪ আগষ্ট সরকার পতনের দাবিতে যখন ছাত্ররা মিছিল নিয়ে বের হয়, তখন আমার ভাই মোহাম্মদ তারেক মিয়া ছাত্রদের সঙ্গে মিছিল নিয়ে যায়। পুলিশের সম্মুখে গুলিতে আহত হয়। প্রায় ২৫/২৬ টা গুলি লাগে। ডাক্তার ২ টা গুলি বের করেছেন। আর বাকি গুলি তার শরীরে রয়েছে।টাকার কারণে চিকিৎসা করা হয় নাই। সরকার কাছে আবেদন আমাদের দিকে একটু চাইতে।

তারেকের মা হালিমা বেগম বলেন, ৪ আগষ্ট আন্দোলনে আমার ছেলে গিয়ে গুলি খাইছে। মাত্র ২ টা বার করতে পারছি। আর পারছি না অভাবের কারণে।এখন আমার ছেলের দিকে চেয়ে যদি সাহায্য করেন সরকার। বাকি গুলি শরীরে থাকার ফলে রাতে ঘুমাতে পারে না যত্ননায় ছটফট করে।

Manual2 Ad Code

রজব আলীর বোন হাজেরা খাতুন বলেন, গুলি লেগেছে শুনার পর আমরা দৌড়ে গেছি। যাওয়ার পর দেখি ৩৭ টা গুলি লেগেছে। হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করেছি। ডাক্তার বলছেন এক্স করাতে।কিন্তু আমরা করাতে পারি নাই টাকার অভাবে। বর্তমানে শরীরে এখনও গুলি আছে। অসুস্থ মানুষ কোনো রুজি রোজগার করতে পারেন না। সরকার যদি আমাদেরে কিছু সাহায্য করেন তাহলে চিকিৎসা করাতে পারবো।
এই বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো: ইসরাইল হোসেন বলেন, আমাদের জুলাই আন্দোলনে আহত গ্যাজেটভোক্ত ব্যক্তিদেরে ১ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। ওরা যদি জুলাই আন্দোলনে আহত হয় সরকারী সহযোগীতা করা হবে। আহত ব্যক্তিরা তাহার নিকট আবেদন করে কোন উত্তর পায়নি জানতে চাইলে বলেন, আবেদনের বিষয়টি আমাকে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। আবেদন করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code