আজ শুক্রবার, ৩রা অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৬০ বছর পথচলায় এক আলোর ফেরিওয়ালা খালেক

editor
প্রকাশিত আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৬:৫১ অপরাহ্ণ
৬০ বছর পথচলায় এক আলোর ফেরিওয়ালা খালেক

Sharing is caring!

Manual7 Ad Code

তৈয়বুর রহমান (কালীগঞ্জ) গাজীপুর:

Manual8 Ad Code

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের এক কোণায় প্রতিদিন সকালে বসে পড়েন ৭৮ বছর বয়সী মো. আব্দুল খালেক। না, তার দোকানে নেই ঝলমলে আলো কিংবা রঙিন পোস্টার। নেই ডিজিটাল ডিসপ্লে বা আকর্ষণীয় প্রচারণা। কিন্তু রয়েছে বইয়ের ঘ্রাণ, স্মৃতির স্পর্শ আর অদম্য এক ভালোবাসা—মানুষ গড়ার।

১৯৬৫ সালে কালীগঞ্জ বাজারে মাত্র কয়েকটি পুরোনো বই নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন খালেক। তখন স্থানীয় পর্যায়ে বইয়ের দোকান বলতে যা ছিল, তা হাতে গোনা। শিক্ষাকে সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই পথচলা শুরু করেন তিনি। খালেক বলেন, “শিক্ষা যেন সবার হাতে পৌঁছায়, সাশ্রয়ী দামে—এই ছিল আমার স্বপ্ন।”

Manual2 Ad Code

আজও তার দোকানে আর আগের মত ৬০-৭০ দশকের বাংলা সাহিত্য নেই। কবে জীবনের প্রথম শিক্ষার আদর্শ লিপি। অনেকেই বলেন, খালেক ভাইয়ের কাছে এক সময় শুধু বই পাওয়া যায় না—পাওয়া যায় অতীত, আবেগ আর জীবনের ছোঁয়া।

Manual6 Ad Code

খালেক এখনো প্রতিদিন দোকানে বসেন। কাপা কাপা শরীর নিয়ে, চোখেও খুব একটা ভাল দেখেন না, করেন চশমার ব্যবহার, শরীরে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। তবু বইয়ের পাতায় হাত রেখে বলেন, “এইগুলো শুধু কাগজ না, মানুষ এগুলার ভেতরে স্বপ্ন দেখে।”

তার দোকানে প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসেন। কেউ বই কিনতে, কেউ পুরোনো দিনের গল্প শুনতে। অনেকে খুঁজে বেড়ান নিজেদের শৈশবের পাঠ্যবই। কারও জীবনের প্রথম বই কিনেছেন খালেক মিয়ার হাত থেকে—আজ তারাই তাদের সন্তানদের হাতে সেই একই বই তুলে দিচ্ছেন।

জেলার কাপাসিয়া উপজেলার বারিসাব ইউনিয়নের মানুষ খালেক কিশোর বয়সে বাবার সঙ্গে কালীগঞ্জে আসেন। তার বাবা কাজ করতেন তৎকালীন সময়কার এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম কারখানা মসলিন কটন মিলে। শিক্ষাজীবনে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার না করতে পারলেও খালেকের হৃদয়ে ছিল শিক্ষার প্রতি এক গভীর ভালোবাসা। সেই টান থেকেই বই বিক্রিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি।

বয়সের ভারে এখন শরীর আর আগের মতো সাড়া দেয় না। মাঝে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে বিছানায়ও শুয়ে থাকতে হয়েছে অনেকদিন। তবে সেরে উঠে আবার ফিরে এসেছেন তার চিরচেনা পেশায়। বর্তমানে স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই পাশে। একমাত্র কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন, তিনি এখন শ্বশুরবাড়িতে।

“আমি কোনোদিন বড়লোক হইনি, ব্যাংক ব্যালেন্সও নেই। কিন্তু এই ছোট দোকান থেকে যতো মানুষ জীবনের প্রথম বই কিনে আজ শিক্ষক, ডাক্তার, লেখক হয়েছে—এই গর্বে আমি নিজেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির চেয়েও বড় মনে করি।”

কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদার্ত্তী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, “আমরা তখন এমসিএম হাই স্কুলে পড়ি। নতুন বই কেনা সবার পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু খালেক ভাইয়ের কাছ থেকে পুরোনো বই কিনে মাধ্যমিক শেষ করেছি।”

Manual3 Ad Code

 

লেখক ও চিকিৎসক অসীম হিমেল বলেন, আজ যখন ডিজিটাল যুগে বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে যেতে বসেছে, তখন খালেক মিয়ার মতো মানুষেরা যেন একেকজন আলোর রাখাল। তারা মনে করিয়ে দেন—মানুষকে গড়ার জন্য, একটি জাতিকে জাগানোর জন্য এখনো বইয়ের বিকল্প নেই।

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code