আজ বৃহস্পতিবার, ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১৬তম শাহাদাত বার্ষিকী

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ০৪:১৯ অপরাহ্ণ
সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১৬তম শাহাদাত বার্ষিকী

Sharing is caring!

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান এর ১৬তম শাহাদাত বার্ষিকী আগামী ৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার। ১৬তম শাহাদাত উপলক্ষে নানা কর্মসূচী পালন করবে এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ, মরহুমের পরিবার ও তাঁর রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপি।
এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট ড. আব্দুল মতিন চৌধুরী জানান,  ১৬তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ এর উদ্যোগে জাতীয় ও  স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। স্মৃতি পরিষদ ও মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর গ্রামের বাড়িতে ওইদিন সকাল ১০টায় কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। জেলার বিভিন্ন মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। কোরান খতম, বাদ জুম্মা মিলাদ, দোয়া ও  শিরণী বিতরণ করা হবে। বিকেল ৪ টায় সাইফুর রহমান অডিটরিয়ামে এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে সাবেক মন্ত্রী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য, (বীর বিক্রম) মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন মরহুমের যোগ্য উত্তরসূরি, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি ও স্মৃতি পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এম নাসের রহমান।
এছাড়াও দলীয়ভাবে স্থানীয় জেলা বিএনপি, উপজেলা বিএনপিসহ অংঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন শাখার নেতাকর্মীরা মিলাদ মাহফিল, দোয়াসহ নানা কর্মসূচী পালন করবে।
মরহুম এম সাইফুর রহমান কর্মময় জীবনে তার অনন্য গুণে মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়ে ছিলেন। তার সাদামাঠা ব্যক্তিগত জীবন মানুষের দৃষ্টি কাড়ত। ছিল না চাওয়া পাওয়ার অস্থিরতা। এমনকি উচ্চ আকাঙ্খা উচ্চ বিলাসিতাও পছন্দ ছিলনা একদমই। কথা বলতেন মারপ্যাচের জটিলতা ছাড়াই সরল সহজ আর ইংরেজী মিশ্রিত আঞ্চলিকতায়। একারনেই দেশ বিদেশে সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ছিল তাঁর। দেশ দুনিয়ায় নাম কুড়ানো মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনের সেই ছেলেটি দেশের অন্যতম অর্থমন্ত্রী যিনি একনাঘাড়ে ১২ বার সংসদে বেশ সফলতার সাথে বাজেট পেশ করেছেন। কর্মে তারঁ অনন্য গুণ তিনি উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তবায়নও করতেন। এটাই তার অবিচল আস্থা বিশ্বাস আর কাজের প্রতি নিখাঁদ আন্তরিকথা ও কর্তব্যকর্মে দ্বায়িত্বশীলতার নজির। নিজ জন্মস্থান মৌলভীবাজার সহ পুরো সিলেট বিভাগেই রয়েছে তার চোখ ধাধাঁনো উন্নয়নের চোঁয়া।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: জন্ম ১৯৩১ খ্রীষ্টাব্দের ৬ অক্টোবর, মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনে। তার পিতার মোহাম্মদ আব্দুল বাছির,মাতার তালেবুন নেছা। ৩ ভাইয়ের মধ্যে সভার বড় ছিলেন তিনি, মাত্র ৬ বছর বয়সে তাঁর পিতা মারা যান। সে সময়ে তাঁর অভিভাবকক্ত গ্রহণ করেন চাচা মোহাম্মদ সফি। শিক্ষাজীবন, গ্রামের মক্তব ও পাঠশালা শেষ করে তিনি ১৯৪০সালে জগৎসী গোপালকৃষ্ণ উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর ১৯৪৯সালে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকুলেশনে উর্ত্তীণ হন। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে আইকম পাশ করে ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর তিনি ব্যারীস্টারী পড়ার জন্য লন্ডনে চলে যান সেখানে পৌঁছার পর মত পাল্টে যায় তার, ব্যারিষ্টারীর পরিবর্তে পড়েন র্চাটার্ড একাউন্টেন্সি। ১৯৫৩-৫৮ সময়কালে পড়াশোনার পর ১৯৫৯ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ফেলোশীপ অর্জন করেন।
এছাড়া তিনি আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহণ করেন। বিবাহ ১৯৬০ সালের ১৫ জুলাই বেগম দূররে সামাদ রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৩ পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ২০০৩ সালে তার স্ত্রী দুররে সামাদ ইন্তেকাল করেন।
২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি এক মর্মান্তিক সড়ক র্দূঘটনায় শাহাদত বরণ করেন। তার শেষ ইচ্চানুযায়ী বাহারমর্দনে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) র’ প্রতিষ্টা লগ্নে দলটির প্রতিষ্টাতা জিয়াউর রহমান আপন করে ডাকলেন দল গঠনে অংশ নিয়ে দেশও জাতীর কল্যাণে নিবেদীত হতে। তিনি তাই করলেন। রাজনীতিতে এলেন আলোকিত করলেন আলোকিত হলেন। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসন ও ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ ও সিলেট-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০৬ সালের ৮ই জুন তিনি সংসদে দ্বাদশ বাজেট পেশ করে দেশের সংসদীয় ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক বাজেট পেশকারী হিসেবে রের্কড গড়েন। তিনি দীর্ঘদিন দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ছাড়াও দেশ-বিদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্টানগুলোতেও নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন কৃতিত্বের সাথে। তাঁর জীবদ্দশায় দেশ ও বৃহত্তর সিলেট নিয়ে যে উন্নয়ন মহা পরিকল্পনা করেছিলেন তার অনেক গুলো বাস্তবায়ন হলেও পুরোটা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। হঠাৎ এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিভেযায় তার জীবন প্রদীপ,স্তব্ধ হয়ে যায় তার দেখা উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার স্বপ্ন।
উল্লেখ্য; ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এম সাইফুর রহমান মৌলভীবাজারের নিজ বাড়ি বাহারমর্দন থেকে ঢাকায় যাওয়ার সময় ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার ঢাকা-সিলেট মহা সড়কের খড়িয়ালা নামক স্থানে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় শাহাদত বরণ করেন।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থপতি :
মরহুম এম. সাইফুর রহমান স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও প্রবৃদ্ধির প্রধান কারিগর ছিলেন। জাতীয় সংসদে সর্বাধিকবার বাজেট প্রণয়নকারী অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি রেকর্ড গড়েছিলেন। তাঁর দূরদর্শী নীতি ও সংস্কার কর্মসূচি বাংলাদেশকে আত্মনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের মর্যাদা নিশ্চিত করতেও তাঁর অবদান অসামান্য।
বিশেষ করে সিলেট বিভাগে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে তিনি আধুনিক রূপকল্প তৈরি করেছিলেন। মৌলভীবাজারসহ পুরো সিলেটকে উন্নয়নের ধারায় সংযুক্ত করতে তাঁর নেওয়া পদক্ষেপ আজও মানুষের হৃদয়ে অমলিন হয়ে আছে।
স্মৃতি যাদুঘর নির্মাণ :
অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে উন্মোচিত হবে নির্মাণাধীন ‘এম. সাইফুর রহমান স্মৃতি যাদুঘর’ এর নকশা। মৌলভীবাজারের নিতেশ্বরে (দুসাই রিসোর্ট সংলগ্ন) নির্মিতব্য এ যাদুঘর হবে তাঁর কর্মময় জীবনের দলিল এবং নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার এক অনন্য ভাণ্ডার।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, এম. সাইফুর রহমান ছিলেন আমাদের স্বপ্নের আলোকবর্তিকা। তাঁর মতো বিশ্ববরণ্যে নন্দিত অর্থনীতিবিদ আর জন্মাবে কি না সন্দেহ।
জেলা বিএনপির কর্মসূচি :
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি ৫ সেপ্টেম্বর নিম্নলিখিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে-মরহুম এম সাইফুর রহমানের কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ সকাল ১০ টায়। জেলার বিভিন্ন মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।