আজ মঙ্গলবার, ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জয়-পুতুলকে দলীয় নেতৃত্বে আনছেন শেখ হাসিনা

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ১০:১১ পূর্বাহ্ণ
জয়-পুতুলকে দলীয় নেতৃত্বে আনছেন শেখ হাসিনা

Oplus_16908288

Sharing is caring!

স্টাফ রিপোর্টারঃ

১৯৮১ সালের ১৭ মে থেকে একটানা ৪৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছেন শেখ হাসিনা।

তবে এত দীর্ঘ নেতৃত্বের পরও উত্তরাধিকারের পরিকল্পনা বা ‘সাকসেসন প্ল্যান’ নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে কখনো অবস্থান জানাননি, এমনকি কী ভাবছেন তারও আভাস দেননি।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের মতো বড় একটি দলের সংগঠন কার্যত ভেঙে পড়ার পেছনে এই দুর্বলতাও বড় কারণ ছিল।

বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দলটির কার্যক্রমও নিষিদ্ধ রেখেছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও তখন বুঝতে পারেননি, শেখ হাসিনা অনুপস্থিত থাকলে নির্দেশনা কোথা থেকে আসবে।

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনা ভারতের মাটিতে ‘অতিথি’ হিসেবে অবস্থান করছেন। তার চলাফেরা, দলীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ–সব ক্ষেত্রেই কঠোর নিয়ন্ত্রণ আছে। এই অবস্থায় বয়সের তাগিদ ও পরিস্থিতির চাপে তাকে উত্তরাধিকারের প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। চলতি মাসেই তিনি ৭৮ বছরে পা দেবেন।

বিবিসি বাংলার অনুসন্ধান অনুযায়ী, শেখ হাসিনা তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন।

পাশাপাশি শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিও থাকবেন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়।

এ ক্ষেত্রে ভারতের কংগ্রেস দলে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে সামনে রেখে যে মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও সেটাই প্রয়োগ করতে চাইছেন।

সজীব ওয়াজেদ এখন মার্কিন নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা হলেও মায়ের অনুপস্থিতিতে দলের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা রাখছেন। তিনি গণমাধ্যমে ঘনঘন সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন।

অন্যদিকে সায়মা ওয়াজেদ যেহেতু মায়ের সঙ্গে একই শহরে ও একই সময় অঞ্চলে আছেন, তাই সরাসরি বেশি সহায়তা করতে পারছেন। শেখ হাসিনার ভাষণের খসড়া, কর্মসূচির ক্যালেন্ডার তৈরি থেকে শুরু করে বাইরের দর্শনার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ—এসব কাজে তিনি জড়িয়ে পড়েছেন। গত দু’মাসে তিনি একাধিক বৈঠকও করেছেন।

দলের একাধিক সূত্র বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে, শেখ হাসিনা ধীরে ধীরে ছেলেমেয়ের ওপরই অনেক দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন বা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

‘সাকসেসন প্ল্যান’ নিয়ে ভারতে ও দেশের বাইরে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। তবে স্পর্শকাতর হওয়ায় কেউই প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি।

দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, আপনি যে সাকসেসন প্ল্যানের কথা বলছেন সেটা এখন আমাদের অগ্রাধিকারের মধ্যেই পড়ে না। কে কী পদ-পদবী পেলেন, সেটা এখন ভাবারই সময় নয়। দলের মধ্যেও আমরা এটা নিয়ে এখন কথাবার্তা বলছি না। আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সভানেত্রীর পরিবারের সব সদস্য যেমন, তেমনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী সবাই এই একটা লক্ষ্যেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন।’

এর মধ্যেই সজীব ওয়াজেদ যেমন আগে থেকে সক্রিয় ছিলেন, এখন সায়মা ওয়াজেদও কার্যত রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন।

২০২৫ সালের ১১ জুলাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদ থেকে তাকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠায়। দায়িত্বভার সামলাতে শুরু করেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ক্যাথরিনা বোয়েহমি।

হু মহাপরিচালক টেড্রস আধানোম গেব্রেয়েসুস কর্মীদের কাছে যে ইন্টারনাল ইমেইল পাঠান, তার একটি কপি বিবিসি দেখেছে। তাতে উল্লেখ আছে, বাংলাদেশের সরকার ওই পদে তার নির্বাচন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল এবং কাজের ক্ষেত্রে অনাগ্রহ দেখিয়েছিল। দুর্নীতি দমন কমিশনের জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগও প্রভাব ফেলেছিল এই সিদ্ধান্তে।

হু’র একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের মনোভাবে পরিবর্তন না হলে সায়মা ওয়াজেদের ফেরার সম্ভাবনা নেই। এ কারণেই তিনি পূর্ণসময়ের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন।

অথচ ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট রাজনৈতিক পালাবদলের পর এক টুইটে তিনি জানিয়েছিলেন, মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত হু’র পদে থাকতে চান। কিন্তু বাস্তবে তাকে বাধ্য হয়ে রাজনীতিতে আসতে হয়েছে।

সম্প্রতি তিনি সামাজিক মাধ্যমে আবার রাজনৈতিক পোস্ট করা শুরু করেছেন—যার মধ্যে ছিল খালাতো বোন টিউলিপ সিদ্দিক ও বড় ভাই সজীব ওয়াজেদের পোস্টের রিটুইট। বিশ্লেষকদের মতে, এতে বোঝা যায় তিনি নিজেও জানেন হু–তে ফেরার পথ বন্ধ।