আজ মঙ্গলবার, ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যেকারণে নিরাপত্তা হুমকি বাড়ার আশঙ্কা

editor
প্রকাশিত মার্চ ৯, ২০২৫, ০২:৫০ পূর্বাহ্ণ
যেকারণে নিরাপত্তা হুমকি বাড়ার আশঙ্কা

Sharing is caring!

Manual5 Ad Code

টাইমস নিউজ 

Manual5 Ad Code

 

রামগড় স্থলবন্দর এবং ফেনী ইকোনমিক জোন চালু হলে দেশের নিরাপত্তা হুমকি বাড়ার আশঙ্কা করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এক গোপনীয় প্রতিবেদনে বিজিবি দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে রামগড় স্থলবন্দর এবং ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলে চালু না করার সুপারিশ করেছে।

সম্প্রতি ওই প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

Manual1 Ad Code

এতে বলা হয়েছে, ওই দুই স্থাপনা চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দর এবং ফেনী-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে পণ্য আমদানি-রপ্তানি চাপ বাড়বে। এই দুই স্থাপনায় যাতায়াতের সুযোগ নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বাড়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারসংক্রান্ত চুক্তি সংশোধনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বৃহস্পতিবার বলেন, রামগড় স্থলবন্দর নিয়ে আমাদের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কাজ করছে। ওই কমিটির কাছে এই প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। ওই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, দেশের জন্য যে পদক্ষেপ ভালো হবে, সেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, ওই প্রতিবেদন স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। এতে ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রামগড় স্থলবন্দরের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আপাতত এই স্থলবন্দর চালু না করার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। যদিও নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিও এ বন্দর নিয়ে তদন্ত করছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, রামগড় স্থলবন্দর ও আসা-যাওয়ার মহাসড়ক নির্মাণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। রামগড় স্থলবন্দর চালু না হলে সেখানে নির্মাণ করা স্থাপনা কাজে আসবে না।

Manual3 Ad Code

ওই প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান। তিনি বলেন, রামগড় স্থলবন্দর চালু হবে কি না-সেই সিদ্ধান্ত নেবে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত হবে কি না-তা আমি নিজেই নিশ্চিত নই। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।

পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলায় রামগড় স্থলবন্দরটি অবস্থিত। ২০১০ সালের ৭ নভেম্বর শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়। এ স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন (এলসিএস)। মূলত ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় ভারতীয় পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর জাহাজের মাধ্যমে আসবে। এরপর সড়ক পথে রামগড় স্থলবন্দর হয়ে ভারতে যাওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নির্মাণ করেছে।

Manual3 Ad Code

প্রতিবেদনে যা আছে : নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের একাধিক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রামগড় স্থলবন্দর এবং ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর প্রতিবেদন দিয়েছে বিজিবি। এ দুই স্থাপনা চালু হলে এ দেশে কী ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে তার বর্ণনাও তুলে ধরেছে। এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন ঝুঁকি ছাড়াও ভারতের সাবরুমে দেশটির ব্যবসায়িক প্রস্তুতির বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের সক্ষমতা অনেক বেশি। সাবরুমে ৫৬ একর জায়গাজুড়ে দেশটি স্থলবন্দর নির্মাণ করেছে। ওই বন্দরের সঙ্গে রেললাইন ও হাইওয়ে রোড সংযোগ রয়েছে। রামগড় স্থলবন্দর ও ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে দেশটি পণ্য পরিবহণ ও যাত্রী চলাচলে এ দেশের চেয়ে বেশি সুবিধা পাবে। ফেনী-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে যানবাহনের চাপ বাড়বে, যা ধারণ ক্ষমতার তুলনায় অপ্রতুল। এই সড়কের টোল ও ফি থেকে যে পরিমাণ আয় হবে, তার চেয়ে রক্ষণাবেক্ষণে অনেক বেশি টাকা ব্যয় হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের ওপর অতিরিক্ত চাপ বাড়বে। এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের স্বাভাবিক আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হবে।

নিরাপত্তাঝুঁকির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রামগড় স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সন্ত্রাসীরা অবৈধ পথের পাশাপাশি বৈধ পথে যাতায়াতের সুবিধা পাবে। চট্টগ্রাম-রামগড় রাস্তা দিয়ে ভারতীয় যানবাহন চলাচলের সুযোগ নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী জনগোষ্ঠী এই পথে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ বা প্রাপ্তির পরিকল্পনা করতে পারে। এতে আরও বলা হয়েছে, ফেনী থেকে সোনাগাজী পর্যন্ত ভূখণ্ড ২২ কিলোমিটার, যা বাংলাদেশের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই স্থাপনা চালু হলে এই অঞ্চল ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

চুক্তি পর্যালোচনার প্রস্তাব : চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি রিভিউয়ের (পর্যালোচনা) প্রস্তাব করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত দুই দেশের এক বৈঠকে রামগড়-সাবরুম রুটকে এ চুক্তির আওতায় আনতে ভারতের পক্ষ বাংলাদেশকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যদিও ওই সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদন পায়নি। রামগড়কে ওই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এই চুক্তি পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করা হয়েছে।

২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর দুই দেশ এই চুক্তিতে সই করে। চুক্তি অনুযায়ী, ভারত তাদের পণ্য নৌপথে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে এনে সেখান থেকে সড়কপথে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে নেওয়ার সুযোগ পায়। চুক্তিতে পণ্য পরিবহণে তামাবিল-ডাউকি, শেওলা-সুতারকান্দি, আখাউড়া-আগরতলা, বিবিরবাজার-শ্রীমান্তপুর রুট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অর্থাৎ এসব রুটে ভারতীয় পণ্য পরিবহণের চুক্তি রয়েছে।

স্থাপনা নির্মাণে বিপুল বিনিয়োগ : একাধিক সূত্র জানায়, রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণে ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আরও ৬ একর জমি অধিগ্রহণ চলমান রয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেকটিভি প্রকল্পগু-১ এর আওতায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরে সুদৃশ্য ১২ হাজার বর্গফুট আয়তনের আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনাল, ১৩০২ মিটার সীমানা প্রাচীর, ওয়্যারহাউজ, অফিস ভবন, ট্রান্সশিপমেন্ট শেডসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া জাপান সরকারের অর্থায়নে ক্রস বর্ডার নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ৩০০ কোটি টাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ভারত সরকারের তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় বারৈইয়ার হাট থেকে হেয়াকো-রামগড় পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন কাজ চলছে। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই মহাসড়ক, ৯টি সেতু এবং ২৩টি কালভার্ট নির্মাণ করছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ১১০৭ কোটি টাকা। রামগড় স্থলবন্দর চালু না হলে বিপুল বিনিয়োগে নির্মাণ করা এসব স্থাপনার কী হবে-এমন প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code