আজ শনিবার, ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শুল্কারোপের মধ্য দিয়ে চীনের বিরাগভাজন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ?

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ৩, ২০২৫, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ
শুল্কারোপের মধ্য দিয়ে চীনের বিরাগভাজন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ?

Sharing is caring!


Manual7 Ad Code

টাইমস নিউজ 

Manual4 Ad Code

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর শুল্ক আরোপ করেন। তবে, চীনের প্রতি তার ভাষা ছিল সবচেয়ে কঠোর। প্রায় এক ঘণ্টার ভাষণে ট্রাম্প বলেন, আমি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রাখি, চীনের প্রতিও। কিন্তু তারা আমাদের ওপর অত্যন্ত সুবিধা নিচ্ছিল।

একটি তালিকা ধরে ট্রাম্প বলেন, আপনি যদি এটি দেখেন… চীন প্রথম সারিতে, ৬৭ শতাংশ। এটি মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক, যেখানে মুদ্রা হেরফের ও বাণিজ্য বাধাও অন্তর্ভুক্ত।

তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করব। অর্থাৎ, তারা আমাদের চার্জ করে, আমরাও তাদের চার্জ করব, তবে কিছুটা কম। তাহলে কারও অসন্তুষ্ট হওয়ার কী আছে?

তবে, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে এই পদক্ষেপকে ‘একতরফা দমনমূলক আচরণ’ বলে অভিহিত করেছে এবং কঠোর পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘অতি সরল প্রতিশোধমূলক বাণিজ্যনীতি’ বলে উল্লেখ করেছে।

চীনের উদ্বেগের কারণ

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীনের ক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। প্রথমত, নতুন ঘোষণাটি আগের ২০ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে যোগ হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও লাওসের ওপর উচ্চ শুল্ক বসিয়ে ট্রাম্প চীনের বিকল্প সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তোলার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন, যা তিনি প্রথম দফার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন আরোপিত শুল্ক এড়ানোর জন্য ব্যবহার করেছিল বেইজিং। উচ্চ শুল্ক আরোপিত ১০টি দেশের মধ্যে পাঁচটি এশিয়ার।

চীনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ

ট্রাম্প জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফেরার পর থেকে চীনের ওপর নতুন শুল্ক চাপিয়ে দিয়েছেন, যা এখন ২০ থেকে ৫৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হবে।

শুধু গাড়ি, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো কিছু পণ্যে অপেক্ষাকৃত কম শুল্ক বসানো হচ্ছে।

এছাড়া, বুধবার ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যাতে চীনা ই-কমার্স কোম্পানিগুলো কম মূল্যের পার্সেলে শুল্ক ছাড় পাবে না।

গত অর্থবছরে এই ব্যবস্থার আওতায় প্রায় ১.৪ বিলিয়ন পার্সেল যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিল। ফলে, এই ছাড় বাতিল হলে চীনা কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে, যা মার্কিন বাজারে তাদের প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে দেবে।

‘সাপ্লাই চেইনের ওপর হামলা’

ট্রাম্প ৪৬ থেকে ৪৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়ার ওপর। এটি চীনের সম্প্রসারিত সাপ্লাই চেইনের বিরুদ্ধে ‘সরাসরি হামলা’ বলে মন্তব্য করেছেন এসপিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের স্টিফেন ইনেস।

তিনি বলেন, ভিয়েতনাম ও অন্যরা এই বাণিজ্য যুদ্ধের পার্শ্বক্ষতি। এটি শুধু প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নয়, বরং এটি শুল্কযুদ্ধের মাধ্যমে চীনকে কৌশলগতভাবে নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা।

লাওস ও কম্বোডিয়া চীনের বিনিয়োগের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। উচ্চ শুল্কের ফলে তাদের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

Manual8 Ad Code

চীনের বিকল্প পথ কী?

Manual5 Ad Code

চীনের প্রতিক্রিয়া কী হবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, কারণ নতুন শুল্ক কার্যকর হতে মাত্র কয়েক দিন বাকি।

সাবেক মার্কিন বাণিজ্য আলোচক স্টিফেন ওলসন মনে করেন, বেইজিং পাল্টা শুল্ক আরোপ ও মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য ব্যবসার পরিবেশ কঠিন করতে পারে।

Manual4 Ad Code

চীনা অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে, তাই বেইজিং কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতে পারে বলে মনে করেন ইনসিয়াড বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক পুশান দত্ত।

তিনি বলেন, চীনকে অবশেষে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে হবে, কারণ অন্যান্য অঞ্চলে রফতানি বাড়ানোর পথ সংকুচিত হচ্ছে।

নতুন শুল্ক এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে পারে। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সম্প্রতি প্রথমবারের মতো পাঁচ বছর পর অর্থনৈতিক আলোচনা করেছে।

তবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান আসতে সময় লাগবে এবং তার আগে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সূত্র: বিবিসি

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code