আজ রবিবার, ৪ঠা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পরকীয়া প্রেমের টানে প্রবাসী স্বামীকে তালাক দিয়ে থানায় অভিযোগ; হাতিয়ে নিয়েছেন ২৯ লক্ষ টাকাসহ স্বর্ণালংকার

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ৩০, ২০২৫, ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ
পরকীয়া প্রেমের টানে প্রবাসী স্বামীকে তালাক দিয়ে থানায় অভিযোগ; হাতিয়ে নিয়েছেন ২৯ লক্ষ টাকাসহ স্বর্ণালংকার

Sharing is caring!

রাকিব হাসান,মাদারীপুর প্রতিনিধি:

 

মাদারীপুরে পরকীয়া প্রেমের টানে গ্রীস প্রবাসী স্বামীকে তালাক দিয়ে উল্টো তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মিথ্যা অভিযোগ করেছেন মারুফা আক্তার (২৩)। এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী গ্রীজ প্রবাসী নুর আলম মুন্সির(৩৮) পরিবার। পুলিশ বলছে দুপক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছে আমরা তদন্ত করছি। প্রবাসী নুর আলম মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের আপাসী গ্রামের করম আলী মুন্সীর ছেলে ও মারুফা আক্তার একই ইউনিয়নের পাশ্ববর্তী বনগ্রাম এলাকার রহিম হাওলাদারের মেয়ে।

 

গ্রীস প্রবাসীর অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ১৬ বছর যাবত গ্রিসে জীবন-যাবন করছেন প্রবাসী নূর আলম মুন্সী (৩৮)। বিগত ৫ বছর পূর্বে গ্রীস থেকে ছুটিতে এসে পারিবারিক ভাবে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক মরুফা আক্তারকে বিয়ে করেন তিনি। বিবাহের কয়েকমাস পর পরিবারের কথা ভেবে আবারো প্রবাসে চলে যান। এরপর কয়েক বছর ভালোই চলছিলো তাদের সংসার। তবে দীর্ঘ বছর প্রবাসে থাকার সুযোগে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন নুর আলমের স্ত্রী মারুফা। বিষয়টি নুর আলম বুজতে পেরে তাকে সর্তক করেন। কিন্তু মরুফা তার কথায় কোন প্রকার কর্ণপাত না করে পরকীয়া প্রেমিকার সাথে ঘোরাফেরা সহ নুর আলমের বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা তার পরকীয়া প্রেমিকাকে দিয়ে দিতো। এসব বিষয় মারুফার পরিবার ও প্রবাসীর পরিবারের সদস্যদেরকে জানালে সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরই ধারবাহিকতায় গত অনুমান ৩ মাস আগে মারুফা তার প্রবাসী স্বামীর বসতবাড়ি থেকে ৮ আনা মূলে একজোড়া স্বর্ণের কানের দুল (অনুমান মূল্য ৭৫ হাজার টাকা), ২ ভরি ওজনের একজোড়া স্বর্ণের বালা (অনুমান মূল্য ৩ লক্ষ টাকা), ১ ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের গলার হাড় (অনুমান মূল্য দেড় লাখ টাকা), ৬ আনার একটি স্বর্ণের আংটি (অনুমান মূল্য ৬৫ হাজার টাকা), ৮ আনার ১ টি স্বর্ণের চেইন (অনুমান মূল্য দেড় লক্ষ টাকা), বিদেশ থেকে পাঠানো বসত বাড়িতে থাকা নগদ ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা এবং প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে মারুফা তার পিতার বাড়িতে চলে যায়। নুরু আলম বিদেশে থাকাকালীন অবস্থায় মারুফা ও তার মা হাবিবা আক্তারের ব্যাংক একাউন্টে (ব্যাংক স্টেটমেন্ট অনুযায়ী) প্রায় ২৯ লক্ষ টাকা পাঠায়। এইসব টাকা মারুফা তার পিতার বাড়িতে নানা অজুহাতে ধার হিসাবে দিয়ে দেয়। এদিকে হঠাৎ করে টাকা-পয়সা স্বর্ণালংকার নিয়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে মারুফার পিতার বাড়িতে গেলে তার পরকীয়ার ঘটনা জানতে পারেন ওই প্রবাসীর স্বজনরা। পরে এ বিষয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে মাদারীপুর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী প্রবাসীর বোন ফাহিমা আক্তার। এ অভিযোগের প্রতিশোধ নিতে ও হয়রানি করতে উল্টো ফাহিমাসহ ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্বজনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন মারুফা।

প্রবাসী নুর আলমের বোন ফাহিমা আক্তার জানান, আমার ভাইয়ের বিয়ের পরে কয়েক বছর তাদের সংসার সুখে শান্তিতে ছিল। তবে আমার ভাই বেশীর ভাগ সময় তার স্ত্রীকে নিয়ে তার শশুড় বাড়ী থাকতো। তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্ত আমার ভাই বিদেশে যাওয়ার পরে আমার ভাইয়ের স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। আমরা বিষয়টি সমাধানের জন্য একাধিকবার চেস্টা করেছি। কিন্তু সমাধান করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা জানতে পেরেছি আমার ভাইয়ের সংসার থেকে টাকা-পয়সা স্বর্ণালংকার নিয়ে গিয়ে আমার ভাইকে গোপনে স্বামী তালাক দিয়েছে এবং পরকীয়া প্রেমিকের সাথে সংসার করছে। এরপরই আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। যা সম্পুর্ণ মিথ্যা।

নুর আলমের বোন জামাই জাকির সিকদার বলেন, আমি একটি চাকরি করি। যার কারনে নিজের বাড়ীতে ঠিকমত আসতে পারি না। সেখানে আমার স্ত্রী ও আমার নামে মিথ্যা একটা অভিযোগ দিয়েছে।

প্রবাসী নুর আলম জানান, বিয়ে হওয়ার পরে আমার স্ত্রী বেশীর ভাগ সময় আমার শশুড় বাড়ী থাকতো। যে কারনে আমিও সেই বাড়ীতে বেশীর ভাগ সময় থাকতাম। এমনকি সেই বাড়ীতে থাকা অবস্থায় বেশীর ভাগ খরচ আমি নিজে করতাম আমার সন্তান ও সংসারের সুখের কথা ভেবে। কিন্তু আমি প্রবাসে আসার পরে আমার স্ত্রী পরকীয়ায় জড়ায়। বিষয়টি অনেকবার সমাধানের চেস্টাও করেছি। কিন্তু সে আমার সব টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকার ও মালামাল নিয়ে গিয়ে আমাকে তালাক দিয়েছে। এমনকি আমি প্রবাসে থাকা অবস্থায় আমার নামেসহ আমার পরিবারের নামে মিথ্যা একটা অভিযোগ দিয়েছে।

সরেজমিনে মারুফার বাড়িতে গেলে তার বাবা রহিম হাওলাদার ও মা হাবিবা আক্তার অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, আমাদের একমাত্র মেয়েকে নূর আলমের কাছে বিয়ে দিয়ে ভুল করেছি। সে সন্তান ও স্ত্রীর কোন খরচই দিতো না। এজন্য আমার মেয়ে স্বামী তালাক দিয়েছে। কিন্তু কারো সাথে কোন প্রেম করেনা। আর যদি করতো তাহলে সে এতোদিন তার সাথেই চলে যেতো। অথচ আমার মেয়ে আর কোনদিন বিয়েই করবে না বলে জানিয়েছে। আমার মেয়ে বর্তমানে মাদারীপুর কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ালেখা করতেছে। এসময় টাকার বিষয় জানতে চাইলে একপর্যায়ে মাত্র ১ লক্ষ টাকা ধার নেয়ার কথা স্বীকার করেন তারা।

তবে মারুফা বাড়ীতে পাওয়া যায়নি। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

মারুফার পিতার বাড়ীর প্রতিবেশী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, আমরা দেখছি বিয়ের পরে মারুফা এই বাড়ীতেই (পিতার বাড়ী) বেশী থাকতো। এই কারনে মারুফার স্বামী বেশীর ভাগ সময় এখানে থাকতো। বাজার সদায় টাকা পয়সা সবই খরচ করতো। মারুফার বাবা কৃষি কাজ করে আর দুই ভাই বেকার। মারুফার পুরো পরিবার তার প্রবাসী স্বামীর টাকায় চলতো। তার পড়ালেখার সম্পূর্ণ খরচও ওই স্বামীই দিছে। জামাইয়ের কোন দোষ দেখি নাই। ছেলেটি খুব ভাল মানুষ ছিল। কিন্তু স্বামী বিদেশে যাওয়ার পরে শুনছি মারুফা স্বামী তালাক দিছে এবং উল্টো তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিছে শুনলাম। দুইটা অভিযোগে দুইবার মারুফাদের বাড়িতে পুলিশ আসছে। ওদের সাথে মানুষ তেমন কথা বলে না। তারা একটু অন্য ধরনের।

এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল হোসেন জানান, দুই পক্ষই অভিযোগ করেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।