Sharing is caring!

এম.এ.মান্নান,টাঙ্গাইল(নাগরপুর)সংবাদদাতা:
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের ধুনাইল গ্রাম হয়ে টাঙ্গাইল-আরিচা মহাসড়কের সংযোগস্থল পর্যন্ত বিস্তৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। মাঝপথে নদী পারাপারের জন্য এখনো একটি পাকা সেতু নির্মিত হয়নি। ফলে আশপাশের প্রায় ৮-১০ হাজার মানুষ প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাঠের পুল ও কাঁচা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন।
ব্রিজটির অবস্থান ধুনাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে ভাদ্রা বাজারমুখী পথের ওপর। প্রতিদিন শত শত মানুষ, বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ী ও মসজিদগামী মুসল্লিরা এই পুল ব্যবহার করেন। নামাজের সময় বহু মুসল্লি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই কাঠের পুল পার হয়ে স্থানীয় জামে মসজিদে যান। ফলে ধর্মীয় কাজেও বড় ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা।এছাড়াও সারুটিয়াগাজী,পাঁচআড়রা, চাষাভাদ্রা, ধুনাইল ও তিরছাসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ এই সড়ক ও পুলই ব্যবহার করে থাকেন হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং চিকিৎসা বা জরুরি প্রয়োজনে।
স্থানীয়রা জানান, একসময় নদী পারাপারের জন্য ছোট নৌকাই ছিল একমাত্র ভরসা। পরে এলাকাবাসীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয় প্রায় ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের কাঠের পুল। বর্তমানে সেই পুল দিয়ে নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ যাতায়াত করলেও প্রতিনিয়তই রয়েছে ভেঙে পড়ার শঙ্কা। কাঠ ও বাঁশে তৈরি পুলটি দিন দিন জীর্ণ হয়ে পড়ছে।
শুধু পুল নয়, এর সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটিও এখনো কাঁচা। বর্ষা মৌসুমে সড়কজুড়ে জমে থাকে হাঁটুসমান পানি, তৈরি হয় কাদা আর পিচ্ছিল পথ। ফলে জনজীবন হয়ে পড়ে দুর্বিষহ। বৃষ্টির দিনে শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না, অসুস্থ মানুষ হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।
ধুনাইল গ্রামের এক স্কুলছাত্রী লাবনী আক্তার বলেন, বৃষ্টির দিনে স্কুলে যাওয়া যায় না। পুলটা কাঁপে, রাস্তা পিচ্ছিল হয়। আমরা প্রতিদিন অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করি। পুল দিয়ে বৃদ্ধ মানুষ চলতে পারেন না। কিছুদিন আগে একজন পড়ে গিয়েছিলেন। খুব ভয় লাগে।”
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বাবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,এই পুল এলাকাবাসী নিজের খরচে করেছে। অথচ এখনো সরকার কোনো স্থায়ী সেতু নির্মাণ করেনি। রাস্তাটাও এখনো কাঁচা। আমরা দাবি জানাচ্ছি দ্রুত ব্রিজ ও পাকা রাস্তা নির্মাণের।”
এলাকাবাসী সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে আবেদন করেছেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়—রোড কোড ৩৯৩৭৬৫০১৫ অনুযায়ী এই সড়ক ও নদীর ওপর একটি পাকা ব্রিজ নির্মাণ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
দপ্তিয়র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. ফিরোজ সিদ্দিকী জানান,“আমাদের ইউনিয়নের আর্থিক সামর্থ্য এ ধরনের বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে এলজিইডিকে জানিয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন।”
এ বিষয়ে এলজিইডি’র নাগরপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. তোরাপ আলী বলেন,আমরা এলাকাবাসীর দেওয়া প্রতিবেদন পেয়েছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে।”
স্থানীয়দের একটাই প্রত্যাশা,বেহাল কাঠের পুল নয়, হোক দৃঢ় এক সেতু; কাঁচা রাস্তা নয়, হোক মজবুত চলার পথ।উন্নয়ন শুধু শহরের জন্য নয়, গ্রামীণ জনগণেরও ন্যায্য অধিকার এই বার্তাটি যেন পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষের দোরগোড়ায়।