আজ বুধবার, ১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মৌলভীবাজারে ভুয়া মামলার হিড়িক

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১, ২০২৪, ১২:৪৫ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজারে ভুয়া মামলার হিড়িক

Sharing is caring!

Manual7 Ad Code

টাইমস নিউজ 

Manual6 Ad Code

মৌলভীবাজারে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একের পর এক মামলা করা হচ্ছে। যেদিন কোনো আন্দোলন কর্মসূচি ছিল না। সহিংসতা হয়নি। সেদিনের ঘটনা উল্লেখ করেও মামলা হয়েছে। এসকল মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সমন্বয়ক, ছাত্র প্রতিনিধি ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম ভাঙানো হচ্ছে। এ নিয়ে খোদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ব্যক্তিগত আক্রোশ ও মামলা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যেই এরকম মামলা হচ্ছে বলে ছাত্র প্রতিনিধিরা মনে করছেন।
নতুন নতুন মামলায় আসামি করা হচ্ছে শিক্ষক, সাংবাদিক, চাকরিজীবী, এমনকি বিএনপির নেতা-কর্মীদেরও। এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জেলা পুলিশ সুপারের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। সম্প্রতি দায়েরকৃত নতুন একটি মামলা নিয়ে অনুসন্ধান করেছে পূর্বদিক।

মামলা ও স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, গত ২৫ নভেম্বর মৌলভীবাজারের পশ্চিম বাজার এলাকার রাসেল (এজাহারে উল্লেখিত) নামের একজন বাদী হয়ে আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের পক্ষে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এজাহারে মামলার বাদী ঘটনার তারিখ ৩ আগস্ট, দুপুর ১টা ১০ মিনিট এবং হামলার স্থান মৌলভীবাজার চৌমোহনা উল্লেখ করেছেন। ৫ আগস্টের ঘটনার ৩ মাস ২০দিন পর দায়ের করা এই মামলা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। তারা ৩ আগস্ট মৌলভীবাজারে ছাত্রদের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচিই ছিল না বলে জানিয়েছেন।

Manual7 Ad Code

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সকল সমন্বয়কগণ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের জন্য ১ দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। সারা দেশের কর্মসূচি হিসাবে ৩ আগস্ট মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে প্রায় ৫০০-৬০০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এসময় আন্দোলনকারীদের উপর দেশীয় অস্ত্র, লাটি, রড, চা-পাতি ও অবৈধ পিস্তল, দেশীয় হাত বোমা, ডেগার নিয়ে হামলা করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌলভীবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৬ জুলাই। ওইদিন (১৬ জুলাই) দুপুরে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্টসহ কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে মিছিল বের করে। মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা করে। এতে কয়েকজন আহত হয়। পরে তারা পুনরায় সংগঠিত  হয়ে বিকেলে শহরের কোর্ট রোড ও চৌমোহনায় বিক্ষোভ করে। পরের দিন (আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন) ১৭ জুলাই আবারও তারা মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনায় মিছিল বের করলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। একইভাবে ১৮ জুলাই দুপুরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশ ৪ শিক্ষার্থীকে আটক করে। এরপর ৪ আগস্টের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলার ভয়ে শিক্ষার্থীরা মৌলভীবাজারে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি।

এদিকে ৪ আগস্ট সকাল থেকেই মৌলভীবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা সংঘটিত হয়ে চূড়ান্ত কর্মসূচি পালন করে। এদিন হাজারো ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে রাস্তায় নামলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলার মুখে পড়ে। এদিন পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ ও সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে প্রচুর টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে অনেকে আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীদের শক্ত অবস্থানের ফলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্থান ত্যাগ করে। ছাত্ররা দখল নেয় রাজপথের। পরদিন ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীরা মুহুর্মূহূ ¯েøাগানে মৌলভীবাজার শহর প্রকম্পিত করে। ওইদিন (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।

Manual1 Ad Code

মৌলভীবাজারে ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে এর সাথে জড়িত সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি বিশ্বজিৎ নন্দী বলেন, ‘১৮ জুলাইয়ের পর মৌলভীবাজারে ছাত্রদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। এরপর সকলের সাথে যোগাযোগ ও সবাইকে সংগঠিত করে ৪ আগস্ট ১ দফার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৮ জুলাই থেকে ৪ আগস্টের আগ পর্যন্ত ছাত্রদের পক্ষ থেকে আর কোনো কর্মসূচি ছিল না। ৩ আগস্টের মামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘৩ তারিখতো কোনো আন্দোলন কর্মসূচিই ছিল না। তাহলে মামলা হয় কিভাবে। এখন ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক কারণে অনেকেই মামলা করছেন। যা নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হচ্ছে।’

৩ আগস্টের মামলায় আসামি করা হয়েছে সাংবাদিক তৌফিক আহমদ রাজনকে। তার দাবি, ৩ আগস্ট একটি শারীরিক অস্ত্রোপচারের জন্য তিনি মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শয্যায় ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কোনোভাবেই আমি এসব ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নই। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায়ও আমাকে মামলার আসামি করা হয়েছে।’ তিনি প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার চান।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি জাকারিয়া ইমন বলেন, ‘এই মামলার বাদি কে। আমরা চিনি না। বর্তমানে মামলা বাণিজ্য ও ¯্রফে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে কিছু লোক মামলা করছে। এরকম মামলার সাথে ছাত্র সমন্বয়কদের কোনো সম্পর্ক নেই।’

Manual5 Ad Code

মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, ‘বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এখন অনেকেই মামলা করছেন। মামলার এজাহারে উপরের দিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম দিয়ে পরে ব্যক্তিগত বাদ-বিবাদ ও আক্রোশ থেকে গণহারে আসামি করা হচ্ছে। ভিত্তিহীন মামলার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে গতকাল (৩০ নভেম্বর) মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপারের সাথে আমরা দেখা করেছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তদন্ত ছাড়া কাউকে হয়রানি করা হবে না।’ ময়ূন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে এসব মামলা করা হচ্ছে। এসব মামলায় বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকেও আসামি করা হয়েছে। এছাড়া চাকরিজীবী অনেককেও মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।’

এসব মামলার ব্যাপারে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন (পিপিএম-সেবা) এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘মামলা হলেই চিন্তিত বা ভয় পাওয়ার কারণ নেই। পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে মামলাগুলোর সত্যতা যাচাই করবে। ৩ তারিখে কোনো ঘটনা না ঘটলে পুলিশ সেভাবেই ব্যবস্থা নেবে।’

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code