আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের দুই শতাধিক আসনে প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করেছে বিএনপি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে নির্বাচনী গণসংযোগে নামার আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেয়া হবে মনোনীত প্রার্থীদের।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, আসনভিত্তিক বিরোধ নিরসনে একাধিক বৈঠকের পর একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে সতর্ক করে বলেন, ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করলে বহিষ্কারের খড়গ নামবে সংশ্লিষ্ট নেতার ওপর।
অন্যদিকে, একসময়কার জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী এখন বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করে গণসংযোগ শুরু করেছে ইসলামপন্থী এ দলটি। ফলে একই আসনে বিরোধ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে চাপে পড়ছে বিএনপি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, যার সঙ্গে জনগণের সংযোগ আছে, তাকে বাছাই করা সহজ নয়। হঠাৎ ঘোষণা দিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করা মানে হবে সংগঠনের ভিত্তি দুর্বল। কিন্তু বিএনপি তো গণভিত্তিক দল, আমরা সতর্কভাবে যাচাই করছি।
দলটির প্রত্যেক আসনে গড়ে চারজন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। নিজেদের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবিলা করেই সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে সাক্ষাৎকার নেয় বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ সময় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। মাঠপর্যায়ের জরিপের ভিত্তিতেই এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তবে যেসব আসনে বিদ্রোহী প্রার্থীর আশঙ্কা বেশি, সেখানে বিএনপি কৌশলী ভূমিকা রাখবে বলে জানানো হয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত এসব আসনে সিদ্ধান্ত গোপন রাখবে দলটি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, একক প্রার্থীর পক্ষে সবাই যেন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে— সেটি নিশ্চিত করতে আলাপ-আলোচনা চলছে। এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যেই একক প্রার্থী মাঠে গণসংযোগে নামবেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে একই আসনে একাধিক মনোনয়ন দিয়ে সমালোচিত হয়েছিলো বিএনপি। এবার সে অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দলটি শুরু থেকেই সতর্ক। মনোনয়নে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে আন্দোলনে সক্রিয়তা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাকে। তরুণ ও অভিজ্ঞ নেতাদের সমন্বয় ঘটিয়ে ‘চমকপ্রদ’ তালিকা প্রস্তুত করছে বিএনপি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অতীত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, আন্দোলনে ভূমিকা, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা— সবই বিবেচনায় আছে। পাশাপাশি আগামী সংসদে যোগ্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে তারুণ্যের প্রতিও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
রুহুল কবির রিজভীর মতে, আন্দোলনে ভূমিকা যেমন বিবেচনায় আসবে, তেমনি জনগণের দৃষ্টিতে প্রার্থীর ভাবমূর্তি ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হবে।
এদিকে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়েও বিএনপি দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চায়। মিত্র দলগুলোর কাছে আসন তালিকা চেয়েছে দলটি। সূত্র জানায়, জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী থাকলে সর্বোচ্চ ৫০টি আসনে ছাড় দিতে পারে বিএনপি। তবে আপাতত বিষয়টি গোপন রাখার কৌশল নিচ্ছে শীর্ষ নেতৃত্ব।
নীতি নির্ধারকরা বলছেন, মিত্রদের জন্য অর্ধশত আসন উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। তবে সমঝোতার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত জানানো হবে না বলে জানা যায় ।