আজ বুধবার, ২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পদ্মা সেতু দুর্নীতিতে ‘অনিয়মের প্রমাণ’, মামলা পুনরুজ্জীবনের ইঙ্গিত দুদকের

editor
প্রকাশিত জুলাই ১, ২০২৫, ০২:২৩ অপরাহ্ণ
পদ্মা সেতু দুর্নীতিতে ‘অনিয়মের প্রমাণ’, মামলা পুনরুজ্জীবনের ইঙ্গিত দুদকের

Oplus_16908288

Sharing is caring!

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রমাণ না মেলার কথা বলে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির যে মামলার সমাপ্তি টেনেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক); এক দশক পর সেই মামলায় অনিয়মের ‘যথেষ্ট উপাদান ও প্রমাণ’ থাকার দাবি করেছে সংস্থাটি।
গায়ের জোরেই অভিযুক্তদের মামলা থেকে দায় মুক্তি দেওয়া হয়েছিল বলে মনে করেন দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন। মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
মঙ্গলবার দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছিল, সেটা নিয়ে মামলা হয়। মামলার উপাদানগুলো সঠিক থাকার পরও শেষ পর্যন্ত আদালতে এফআরটি (ফাইনাল রিপোর্ট ট্রু) বা নিষ্পত্তি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
তিনি বলেন, “দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা এটি পুনরায় বিবেচনা করি, এবং আমাদের মনে হয় যে অনেকটা গায়ের জোরে মামলাটা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই মামলা পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন। এজন্য আমরা নতুন করে তদন্ত শুরু করি।”
পদ্মা সেতুর অনিয়ম প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ”সরকারি বিধি-বিধান মেনে পিপিএ-পিপিআর পুরোপুরি অনুসরণ করেই কাজ করতে হয়। পিপিএ-পিপিআর অনুসরণ করে যে কাজ করার কথা, তাতে আমরা যে মূল্যায়ন কমিটি গঠন করি, সেই কমিটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে একাধিকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্য কিংবা অপরাধ প্রবণতার কারণে এটি করা হয়েছে।”
২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিশ্ব ব্যাংকের চাপে দুদকের উপ পরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ বনানী থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন সেতু বিভাগের তখনকার সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তাকে গ্রেপ্তার ও সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরবর্তীতে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়।
এছাড়া অভিযোগ ছিল সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে তখনকার দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপপু দাবি করেছিলেন। ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর আদালত সাত আসামিকে অব্যাহতি দেয়।
মঙ্গলবার দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, “বড় প্রকল্প করতে গেলে একই জিনিস অনেকবার ব্যবহার করার সুযোগ থাকে। সেক্ষেত্রে একাধিকবার ক্রয় দেখানো সমীচীন না।
এরকম কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা যখন যৌথ মূল্যায়ন করি, কনসালটেন্টদের সিভি যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। মূল্যায়নের বিভিন্ন জায়গায় পিপিএ-পিপিআর আমরা এভয়েড করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “মূল্যায়ন কার্যক্রম চলাকালে মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের ম্যান্ডেটরি সাক্ষাৎ ও তথ্য গ্রহণ করা উচিত ছিল, যা হয়নি।”
তদন্তকারী কর্মকর্তা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “ফলশ্রুতিতে আমরা মনে করি, আগের যে প্রতিবেদন বাধ্য হয়ে হোক আর যেভাবেই হোক, যে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে, সেটি ত্রুটি ও অসম্পূর্ণ।”
প্রথমবার যাদের আসামি করা হয়েছিল তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, “সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, রিয়াজ আহমেদ জাবের, মোহাম্মদ মোস্তফা, মোহাম্মদ ইসমাইল, এসএনসি লাভালিনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এখন তদন্ত করতে গিয়ে আরও নাম আসলে তাদের অন্তর্ভুক্ত করব। গাফিলতি থাকলে তাও বিবেচনায় আনব।”
দুদকের কমিশনের দায়মুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, “কমিশন এক ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে। তারপরেও চেষ্টা করব, যদি কমিশনের হাতে কোনো ভ্রান্তি, ত্রুটি বা ব্যত্যয় ঘটে থাকে, সেটা শনাক্ত করব।
 প্রাথমিক অনুসন্ধানে আমরা মনে করছি যে এফআরটি হওয়াটা ঠিক হয়নি। অথবা আমরা ঠিকভাবে উপস্থাপিত করতে পারিনি।”সূত্র: বিডি নিউজ