আজ সোমবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্যাংক দখল ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২, ২০২৪, ০৭:৩৯ অপরাহ্ণ

Sharing is caring!


Manual6 Ad Code

টাইমস নিউজ

ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তাদের বেনামে শেয়ার কিনে বা ধারণ করে ব্যাংক দখল ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। ওই নীতিমালা অনুযায়ী যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামেই শেয়ার কেনা হতো বা ধারণ করা হোক না করে শেয়ারধারীকে শেয়ারের প্রকৃত মালিকের তথ্য জানাতে হবে।

শেয়ারের প্রকৃত মালিকই শেয়ারের মূল সুবিধাভোগী হিসাবে বিবেচিত হবেন। শেয়ারের ধারণকারী ও প্রকৃত মালিকদের তথ্য এখন থেকে প্রতি তিন মাস পরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব তথ্য নিয়ে একটি তথ্যভান্ডার গড়ে তুলবে। যার আলোকে শেয়ারের সুবিধাভোগীকে জরুরি প্রয়োজনে শনাক্ত করা যায়।

এ বিষয়ে রোববার রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ নীতিমালা আগামী বছরের মার্চ প্রান্তিক থেকে কার্যকর হবে।

Manual2 Ad Code

সূত্র জানায়, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এস আলম গ্রুপ নামে বেনামে শেয়ার কিনে নয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক দখল করে সেগুলোকে নজিরবিহীন লুটপাট করা হয়েছে। লুটপাটের কারণে এসব ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে এখন গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। বেনামে শেয়ার কিনে ব্যাংক দখল বা জালজালিয়াতি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

Manual1 Ad Code

নীতিমালায় বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো একক ব্যক্তি, পরিবার বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপ কোনো ব্যাংকের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারে না। ব্যাংকের পরিচালক হতে হলে একক নামে কমপক্ষে কোনো ব্যক্তির ২ শতাংশ ধারণ করতে হবে। কোনো একক ব্যক্তির নামে কোনো ব্যাংকের ২ শতাংশের বেশি শেয়ারধারকের প্রকৃত সুবিধাভোগী মালিকের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে। তিন মাস পরপর এসব তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে। এসব তথ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি ডাটাবেইজড গড়ে তুলবে। আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠানের নামে উলে্লখযোগ্য শেয়ার ধারণ করলে সে বিষয়েও তথ্য দিতে হবে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের মূল মালিকসহ সুবিধাভোগীদের নাম দিতে হবে।

নীতিমালায় বলা হয়, এখন থেকে যে কোনোভাবে ২ শতাংশ বা তার বেশি পরিমাণ শেয়ারধারক ব্যক্তি, পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিক প্রকৃত সুবিধাভোগী মালিক হিসাবে বিবেচিত হবে। ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের নামে ২ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ারের সুবিধাভোগীও এই ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভূক্ত হবে। ঘোষিত শেয়ারধারণের কাঠামো স্বচ্ছ বা বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শেয়ারহোল্ডারের উপযুক্ত তথ্য উপস্থাপনের নির্দেশ দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো অসংগতি পেলে আইনগত ব্যবস্থা এবং মালিকানার কাঠামো পরিবর্তনেরও নির্দেশ দিতে পারবে।

নীতিমালায় বলা হয়, সে আলোকে শেয়ারের প্রকৃত মালিকানার বিষয়ে ‘ইউবিও ডেটাবেইজ’ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে একটি প্রান্তিক চলমান অবস্থায় মালিকানা পরিবর্তন হলে তাত্ক্ষণিকভাবে সে তথ্য জানাতে হবে। কেউ মিথ্যা তথ্য দিলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের আলোকে তার শেয়ার রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নীতিমালা প্রতিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের আগামী সভায় বিস্তারিত উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।

Manual5 Ad Code

নীতিমালা অনুযায়ী মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান শেয়ার কিনলে বা ওই শেয়ার দিয়ে ব্যাংকের পরিচালক হলে ঘটনা ধরা পড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই শেয়ার রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।

এতে বলা হয়, কোনো ব্যাংকের মালিকানা কাঠামোতে অস্বচ্ছতা থাকলে ব্যাংকটির প্রকৃত অবস্থার মূল্যায়ন, মূলধনের আসল চিত্র যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ কঠিন করে তুলে। বেসরকারি খাতের ব্যাংকের আর্থিক সুস্থতা এবং ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য এ ধরনের প্রবণতা বড় বাধা। এ অবস্থায় ব্যাংকের প্রকৃত মালিকানার কাঠামোতে স্বচ্ছতা আনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে নতুন নীতিমালায়।

Manual2 Ad Code

নীতিমালা অনুযায়ী এখন থেকে ২ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ারধারকদের বিষয়ে একটি তথ্যভান্ডার তৈরি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই তথ্যভান্ডারের তথ্যের সঠিকতা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা হবে। প্রতিটি ব্যাংকেও তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের বিষয়ে একটি নির্দষ্টি তথ্যভান্ডার থাকতে হবে। এ তথ্যের সঠিকতার জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শেয়ার বিভাগের প্রধান এবং কোম্পানি সচিব দায়বদ্ধ থাকবেন। এ সংক্রান্ত কোনো ভুয়া তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দিলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের আলোকে তাদের বিরুদ্ধে শাসি্তমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code