আজ মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিরিয়ার বাশারের সঙ্গে বাংলার হাসিনার অনেক মিল

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৯, ২০২৪, ০৬:৫৭ অপরাহ্ণ

Sharing is caring!

Manual7 Ad Code

টাইমস নিউজ 

একনায়ক, স্বৈরশাসক, স্বৈরাচার শব্দগুলো প্রায় কাছাকাছি। কোনো রাষ্ট্রে একজন নায়ক বা প্রধান অর্থাৎ একজনই সর্বেসর্বা হলে তাকে বলা হয় একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও সিরিয়ার পলাতক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের মিল লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকশেও একনায়ক বা স্বৈরাচারি শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। হাসিনা, গোতাবায়া ও বাশারের মধ্যে মিল হচ্ছে- তিনজনই বিদ্রোহের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বিদ্রোহীদের ইন্ধন দিয়েছে বিদেশি পরাশক্তি ।

যুগে যুগে সময়ের প্রয়োজনে বহু দেশে একনায়ক বা স্বৈরাচারকে তাদের স্বেচ্ছাচারি আচরণ সহ্য করতে না পেরে ক্ষমতা থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়েছেন বিদ্রোহী জনতা। তারই অংশ এবার হিসেবে বাশার আল আসাদের পতন হলো। মাত্র ১২ দিনের বিদ্রোহের মুখে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শামের নেতৃত্বে পরাজিত হয়েছে বাশারের সামরিক বাহিনী।

সিরিয়ার ঘটনার সঙ্গে সবচেয়ে ভালো ‍তুলনা করা যায় বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন। টানা ১৫ বছর দেশে হেন অপরাধ নেই যা করেনি স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার। অভিযোগ আছে,
বিরোধী শক্তিকে দমানোর জন্য রাজনৈতিক মামলা, জেল-জুলুম, আয়নাঘরে বন্দি করে নির্যাতন, ব্যাংক লুট, চাঁদাবাজি, বিডিআর সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা, ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে গোটা দেশকে অন্ধকারে ফেলে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ছাত্রদের আন্দোলন থামানোর জন্য কারফিউ জারি করে গণহত্যা করেছে দলটি।

হাসিনার ‘আয়নাঘর’, বাশারের ‘বন্দিশালা’

বাশার আল আসাদ সরকারের সঙ্গে হুবহু মিল পাওয়া যায় শেখ হাসিনা সরকারের। হাসিনা সরকার যেমন মানুষকে আয়নাঘরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করতো। তেমনি বাশার সরকারও গোপন বন্দিশালায় নিয়ে মানুষের উপর নিপীড়ন চালাত। মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, সেই বন্দিশালায় অন্তত ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬১৪ জন বন্দি ছিলেন।

আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে আসাদের বন্দিশালা থেকে মুক্তি পাওয়া একজনের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি জানান, তাকে নাম ধরেও ডাকা হতো না, স্রেফ নম্বর দিয়ে ডাকা হতো। তার নাম ছিল ‘১১০০’। তিনি বলেন, কখনো ভাবিনি বাশারের পতন হবে, কোনোদিন আলোর মুখ দেখবো।

Manual2 Ad Code

বাশার আল আসাদ পালানোর পর অনেকগুলো গোপন বন্দিশালার সন্ধান মিলেছে।

Manual2 Ad Code

জীবনের মায়ায় পলাতক হাসিনা-বাশার

বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শাম যখন রাজধানী দামেস্ককে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করেছে তখনই দেশ ছেড়ে জীবনের মায়ায় রাশিয়ার মস্কোয় পালিয়েছেন বাশার আল আসাদ। দুই স্বৈরাচারদের মধ্যে এই মিলটিও খুঁজে পাওয়া গেল।

তবে বাশার সরকারের সঙ্গে হাসিনার যে অমিল পাওয়া গেছে তা হলো- আসাদ পালিয়ে চুপ করে আছেন। তবে হাসিনা পালিয়ে চুপ করে থাকেননি। পদত্যাগপত্রসহ নানা ইস্যুতে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অবৈধ’ বলার চেষ্টা করেছেন।

নিরাপদ আশ্রয়স্থল বন্ধুরাষ্ট্র

Manual3 Ad Code

বাশার আল আসাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলেন ভ্লাদিমির ‍পুতিন। যখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী সিরিয়ায় অভিযান শুরু করেছিল তখন তাদের দমানোর জন্য হামলা পরিচালনা করেছিল পুতিন সরকার। তাই অন্য কোথাও না গিয়ে রাশিয়ায় পালানোকেই নিরাপদ মনে করেছেন বাশার।

পালানোর একদিন পর মস্কোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেখানে সপরিবারে অবস্থান করছেন রাশিয়া। যদিও প্রথমে স্পষ্ট করে তা বলা হয়নি। হাসিনার বেলায়ও এমনটি হয়েছিল। শেখ হাসিনার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল ভারত। তাই সেখানেই গেছেন তিনি।

Manual2 Ad Code

বিপদে বন্ধুর পরিচয়

রাশিয়ার গোটা পরিবার নিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন বাশার আল আসাদ। তবে কোন পরিচয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে রুশ পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুতিন ব্যক্তিগতভাবে বাশারকে আশ্রয় দিয়েছেন। দেশটির গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মানবিক কারণে’ তাকে মস্কোয় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তবে রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক মিখাইল উলিয়ানভ বলেন, রাশিয়ার আমেরিকার মতো নয়। তারা বিপদে বন্ধুর পাশে থাকে। অর্থাৎ আসাদ বিপদে পড়েছেন। তাই তাকে আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে রাশিয়া। ভারতও হয়তো তাই করেছে। তবে প্রথম হাসিনাকে ‘সাময়িক সময়ে’র জন্য আশ্রয় দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু গত চার মাস ধরে এই ‘সাময়িক’ সময় শেষ হয়নি।

পিতার পূজা

বাশার আসাদের দল বাথ পার্টি। আসাদের পিতার নাম হাফেজ আল আসাদ। তিনি সিরিয়ার ক্ষমতায় বসেন ১৯৭১ সালে। ২০০০ সালে তার মৃত্যু হয়। এরপর পিতার উত্তরসূরি হন বাশার। এক স্বৈরশাসকের আসনে আরেক স্বৈরশাসক।

দীর্ঘ দুই যুগের শাসনামলে সিরিয়ার নানা জায়গায় পিতার হাজারো ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি তৈরি করেছিলেন আসাদ। সেইসব প্রতিকৃতি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এ যেন গত পাঁচ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি, ম্যূরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি ভাঙার সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে।

হাসিনার সরকার পতনের পর বঙ্গবন্ধুর প্রায় দেড় হাজার ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে। এগুলো তৈরিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছিল হাসিনা সরকার।

বাশার আল আসাদের পিতার ভাঙা মূর্তির উপর উল্লাস করছেন জনতা।

পাঁচ আগস্ট ঢাকায় যা হয়েছিল ঠিক যেন তা-ই হয়েছে সিরিয়ায়। হাসিনার পালানোর সংবাদ শুনে ঘর থেকে নেমে এসেছিলেন সাধারণ জনতা। গণভবন, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনসহ মানুষের কোলাহলে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল গোটা রাজধানী। আনন্দে সেনাবাহিনীকে গোলাপ ফুল বিতরণ করেছেন মানুষ।

ঢাকার মতো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট প্যালেসও দখলে নিয়েছেন সাধারণ জনতা। বাশারের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে সব জায়গা থেকে। রাস্তায় রাস্তায় ফুল হাতে নারীরাও নেমে পড়েছেন। সেনাবাহিনীর ট্যাংকের উপর দাড়িয়েও উল্লাস করতে দেখা গেছে। স্বৈরাচারের পতনের খুশিতে ঢোল পিটিয়ে বিজয়োল্লাসে মেতেছেন সিরিয়াবাসী। এ যেন ঈদের আনন্দ।

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code