Sharing is caring!
সাফওয়ান মনসুর,
যুক্তরাজ্য ও কানাডায় বাংলাদেশি কমিউনিটির সেবামুখী এক সুহৃদ ছিলেন মরহুম আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ মাহমুদ মিয়া। তাঁর পুরো জীবনজুড়ে ছিল মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও নিঃস্বার্থ সহযোগিতার হাত। বিশেষ করে কানাডায় নতুন আসা বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্টদের সহায়তায় তিনি ছিলেন এক নির্ভরতার নাম। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন সৎ, ধার্মিক ও মানবিক মূল্যবোধে উজ্জ্বল একজন আদর্শবান মানুষ। সমাজের যে কোনো মানুষের সঙ্গে সহজেই আত্মিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারতেন—ছিল তাঁর অন্তর্নিহিত অসাধারণ গুণ।
নীরবে-নিভৃতে মানুষের উপকার করা ছিল তাঁর স্বভাব। সমাজসেবা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও রাজনীতির ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন আজীবন সক্রিয়। প্রবাসের নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত রাখতে তাঁর ছিল নানামুখী উদ্যোগ। বিশেষ করে বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মধ্যে বাংলাভাষার প্রতি যে মমত্ববোধ সৃষ্টি করেছেন—তা কমিউনিটিতে সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
মরহুম জিএম মাহমুদ মিয়ার স্মরণে আয়োজিত নাগরিক স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা তুলে ধরেন।
যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে স্থানীয় কমিউনিটি, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও প্রবাসীদের সমন্বয়ে গঠিত নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ২৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল।
শুরুতাই পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন ইউসুফ ও মোস্তফা, এবং স্মরণসভা শেষে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন বার্মিংহাম জামে মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারের ইমাম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ।

সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত চলা এই আয়োজনটি হয়ে ওঠে এক হৃদয়গ্রাহী স্মৃতিচারণের আসর। বার্মিংহাম ছাড়াও ওয়েলস, কার্ডিফ, সেন্ট্রাল লন্ডনসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে আগত প্রায় দুই শতাধিক মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। দীর্ঘ স্মৃতিচারণেও কারো মধ্যে ক্লান্তি বা বিরক্তির ছাপ ছিল না—প্রত্যেকের কথায় প্রকাশ পায় মাহমুদ মিয়ার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বার্মিংহাম মাল্টিপার্পাস সেন্টারের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কামরুল হাসান চুনু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউকেবিসিসিআই এর সভাপতি ড. এমজি মৌলা মিয়া এমবিই। পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন কমরেড মসুদ আহমেদ। পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলা প্রেসক্লাব, বার্মিংহাম-মিডল্যান্ডসের সভাপতি মোহাম্মদ মারুফ; তাঁকে সহযোগিতা করেন হবিগঞ্জ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এম এ মুনতাকিম ও বাংলা ভয়েস-এর সাব-এডিটর জিয়া তালুকদার।

স্মরণসভায় স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন প্রবীণ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব আজির উদ্দিন, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ড. আব্দুল খালিক, গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউ’কের কেন্দ্রীয় কনভেনর সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ মকিস মনসুর,
বাংলাদেশ মাল্টিপার্পাস সেন্টারের ট্রাস্টি ফয়জুর রহমান চৌধুরী এমবিই, বার্মিংহাম বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন এর সভাপতি আব্দুল মালিক পারভেজ, দেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মিসবাউর রহমান, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব কয়ছর আহমদ, রাজনীতিবিদ বশির মিয়া কাদির, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব আব্দুল কাদির আবুল, রাজনীতিবিদ ছয়ফূল আলম, নিজাম উদ্দিন, রাজনীতিবিদ আকমল খান,রাজনীতিবিদ এডভোকেট গোলাম মোস্তফা, এনামুল হক খান নেপা, সাংবাদিক ও কলামিস্ট ফারুক যোশী, এনাম আহমদ, সাংবাদিক সোহেল আহমদ চৌধুরী, সৈয়দ শিপার আহমদ, সৈয়দ শহিদ আলী, ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমদ চৌধুরী, ড. জশ, এডভোকেট নজরুল, গ্রেটার ম্যানচেস্টার মৌলভীবাজার জেলা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন এর চেয়ারম্যান রুহুল আমিন রুহেল, গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউকের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ শাফি কাদির, ইউনিটি অব মৌলভীবাজার সভাপতি আব্দুর রুউফ তালুকদার, ও মোহনা মৌলভীবাজার এর সভাপতি মোহাম্মদ মুজিব মিয়া প্রমুখ।
মৌলভীবাজার জেলা সদরের বালিকান্দি গ্রামের কৃতিময় পুরুষ, সিলেট বিভাগের গর্ব, বার্মিংহামে বসবাসকারী জনপ্রিয় কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ মাহমুদ মিয়া গত ২৪ অক্টোবর রাত ১২:১৪ মিনিটে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।)
গত ২৭ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার, বাদ জোহর বার্মিংহাম সেন্ট্রাল মসজিদে বৃটেনের বিভিন্ন শহর থেকে আগত প্রচুরসংখ্যক লোকের অংশগ্রহণে নামাজে জানাজা শেষে বামিংহাম কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করার মাধ্যমে অশ্রুসিক্ত নয়নে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বিদায় জানিয়েছে বৃটেনের বাংলাদেশ কমিউনিটি।

উল্লেখ্য, একসময়ের কানাডার বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী ও সমাজসেবক জি এম মাহমুদ মিয়া দীর্ঘদিন কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি সিলেট ডিভিশন অব ক্যুইবেকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি, কানাডা বাংলা স্কুলের সাবেক সভাপতি, কানাডা মৌলভীবাজার সমিতি, মৌলভীবাজার জেলা আন্দোলন, সিলেট বিভাগ বাস্তবায়ন আন্দোলন এবং মৌলভীবাজার জেলায় একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পেইন এর অন্যতম পৃষ্টপোষক, গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউকের অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অন্বেষা’ মৌলভীবাজার এর প্রবাসী দাতা ছাড়াও নিজ এলাকার মসজিদ মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত ছিলেন। একজন জনপ্রিয় কমিউনিটি নেতা, পরোপকারী, জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব হিসাবে আজীবন মানুষের জন্য নিষ্ঠা ও নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।
তিনি ছিলেন মানবতার সেবায় নিবেদিত এক প্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব, যিনি সমাজের প্রতিটি স্তরে ন্যায়, সহমর্মিতা ও মানবকল্যাণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
বাংলাদেশ, কানাডা এবং যুক্তরাজ্য – এ তিন দেশের বাংলাদেশী কমিউনিটির সেবায় অক্লান্ত নিবেদিত এ মহান ব্যক্তি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এ তিন দেশের কমিউনিটির মধ্যে সেতুবন্ধনে মরহুম মাহমুদ মিয়ার অবদানটি অনস্বীকার্য।
বিভিন্ন মানবিক ও সামাজিক কাজে তাঁর অবদান কমিউনিটির মানুষেরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। সাহসী ও মহাণ ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন একজন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতা হিসেবে পুরো বিশ্বাব্যাপী তিনি পরিচিত ছিলেন।সংবাদ কর্মীদের সাথেও ছিলো তাঁর হৃদ্যতা। ডেইলি সিলেট এন্ড দৈনিক মৌলভীবাজার ডট কমের চেয়ারম্যান সহ ইউকে বিডি টিভির সাথে ও জড়িত ছিলেন। তিনি একজন সৎ, মানবিক গুণসম্পন্ন একজন ভালো মানুষ। তাঁর মৃত্যুতে কমিউনিটি তথা সমাজে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদ প্রেরক ;মোহাম্মদ সাফওয়ান মনসুর,বামিংহাম, ইউকে,
২৭ শে নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি।