Sharing is caring!
অনলাইন ডেস্ক:
ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বুধবার) : দেশের কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কর প্রশাসনকে আরও আধুনিক, করদাতা-বান্ধব, তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর ও ব্যবসা-বান্ধব করতে হবে। এতে জনগণের ভোগান্তি কমবে এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়বে।
শেরে বাংলা নগরের রাজস্ব ভবনের বহুমুখী হলরুমে আজ বুধবার ‘ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘অর্থনৈতিক অগ্রগতি মূলত নির্ভর করে দেশের নিজস্ব সম্পদ আহরণের সক্ষমতার ওপর। বিদেশি ঋণ বা অনুদানের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতায় নয়।’
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) ফাঁকিরোধ, ভ্যাট ও আয়করের আওতা বৃদ্ধি এবং কর প্রশাসন আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, ‘ভ্যাট বিশ্বব্যাপী একটি শক্তিশালী আধুনিক করব্যবস্থা। কিন্তু সামগ্রিক জিডিপি বৃদ্ধি সত্ত্বেও প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এখনো অনেক কম ভ্যাট সংগ্রহ করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ভ্যাটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। অনেক দেশে জাতীয় আয়ে ভ্যাটের অবদান অনেক বেশি। কিন্তু আমাদের দেশে জিডিপির তুলনায় ভ্যাট সংগ্রহ অত্যন্ত কম।’
তিনি জানান, খুচরা ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে ভ্যাট ফাঁকি বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা ভোক্তার কাছ থেকে ভ্যাট নিলেও তা সরকারি কোষাগার পর্যন্ত পৌঁছায় না, এটিকে তিনি ‘বাংলাদেশের দুঃখজনক বাস্তবতা’ বলে উল্লেখ করেন।
ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, উভয়ের ভ্যাটকে জাতীয় দায়িত্ব হিসেবে নিতে হবে। সঠিক নথিপত্র বজায় রাখা এবং নিয়ম মেনে ভ্যাট প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি গ্রাহকদের কেনাকাটার সময় ভ্যাট চালান দাবি করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ভ্যাট শেষ পর্যন্ত তাদের (জনগণের) কল্যাণে ফিরে আসে, উন্নত জনসেবার মাধ্যমে।’
ড. আহমেদ দীর্ঘদিনের নিম্ন কর-জিডিপি অনুপাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব শক্তিশালী না হলে বাংলাদেশ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না। নিজস্ব সম্পদ বাড়ানো ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ, ঋণ ও অনুদান আমাদের অগ্রাধিকারের সীমা সংকুচিত করে।
তিনি জানান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের সক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়, যখন রাজস্ব ঘাটতি থাকে এবং রাষ্ট্রকে বহিরাগত ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, করদাতাদের আস্থা বাড়াতে হবে। উন্নত অনেক দেশে মানুষ আয়ের প্রায় ২৬ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে দ্বিধা করে না, কারণ তারা বিশ্বাস করে তাদের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং মানসম্মত জনসেবার মাধ্যমে তাদের কাছেই ফিরে আসে।
তিনি বলেন, ‘মানুষ যাতে স্বেচ্ছায় কর দেয়, সেজন্য সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে করদাতারা সেবা পাচ্ছেন এবং তাদের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে।’
তিনি কর ব্যবস্থার দ্রুত সম্প্রসারণ, কর পরিশোধ প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও করদাতা-বান্ধব করা এবং আইটি-নির্ভর কর প্রশাসন গড়ে তুলতে এনবিআরকে নির্দেশনা দেন। করদাতাদের হয়রানি বন্ধ, রিটার্ন দাখিল সহজ করা এবং ভ্যাট-আয়কর উভয় ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা জোরদারের ওপরও তিনি জোর দেন।
তিনি জানান, সম্পূরক শুল্কের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমিয়ে ভ্যাট ও আয়করকে শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি কর রাজস্ব বাড়ানোর পথও খুঁজতে হবে।
ভ্যাট প্রক্রিয়া সহজ ও আধুনিক করা গেলে জনগণ দ্বিধাহীনভাবে ভ্যাট পরিশোধ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভালো চর্চা বাড়াতে হবে, ভোগান্তি কমাতে হবে এবং কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে যাতে ভ্যাট ঠিকভাবে কোষাগারে পৌঁছায়।’
ড. সালেহউদ্দিন আশা প্রকাশ করেন, আগামী দুই মাস প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম চালাতে পারলে পরবর্তী সরকারের জন্য একটি আধুনিক ও গতিশীল রাজস্ব ব্যবস্থা প্রস্তুত করা সম্ভব হবে।
তিনি ব্যবসায়ী, ভোক্তা, এনবিআর কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ভ্যাট সচেতনতা বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। তার মতে, প্রতিটি গ্রাহক যদি কেনাকাটার সময় ভ্যাট চালান দাবি করেন, তাহলে ভ্যাট ফাঁকি অনেকটাই কমে আসবে।
অনুষ্ঠানে অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মুজুমদার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দীকি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সচিব নাজমা মোবারেক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আনোয়ার হোসেন, এফআইসিসিআই সহ-সভাপতি ইয়াসির আজমান, আইসিসি বাংলাদেশ সভাপতি মাহবুবুর রহমান এবং পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সত্তার বক্তব্য দেন।
সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভ্যাট অডিট সদস্য সৈয়দ মুশফিকুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন ভ্যাট নীতি সদস্য মো. আজিজুর রহমান।বাসস