আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার মাসিক ও আইন শৃঙ্খলা মিটিং এ আমের হাট স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বানেশ্বর ঢাকা রাজশাহী মহাসড়ক থেকে স্থানান্তর করে বানেশ্বর ট্রাফিক মোড় থেকে চারঘাট রোডে এই হাট বসবে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান।
প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী রাজশাহীর পুঠিয়ায় গুটি জাতের আম দিয়ে শুরু হয়েছে এই মৌসুমের আমের বেচা কেনা।
এবার প্রায় এক হাজার কোটি টাকার আম বেচা কেনার আশা করছেন রাজশাহী অঞ্চলের চাষি, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়া অন্যান্য বারের চেয়ে উৎপাদন খরচ এবার বেশি। তাই দাম কম থাকায় লকশানের আশংকা করছেন আম চাষিরা।
পুঠিয়াসহ রাজশাহীর সুমিষ্ট জাতের আমে জমে উঠেছে আমের বাজার। ঢাকা রাজশাহী মহাসড়কের দুই পাশে সারিসারি আমের গাড়ীর পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আম মালিক। বেপারীরা আসছেন দামাদামি করছেন মালিকের চাহিদা মত দাম হলেই নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীর দেওয়া আড়তে। আর মহাসড়কে আমের হাট বসায় দুর্ভোগে পরছেন যাত্রীবাহী বাস, ট্রাকসহ ছোট বড় বিভিন্ন যানবাহন। ঘন্টার পর ঘন্টা এক থেকে দের কিলোমিটার এই যানজোট ঠেলে পার হতে হচ্ছে গন্তব্যস্থলে। সব চেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে রুগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ও বাসের যাত্রীদের।
শহিদুল ইসলাম নামের একজন বাস ড্রাইভার বলেন রাজশাহী থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাব। কিন্তু রাস্তার উপর আমের হাট বসায় প্রচুর যানজোট হচ্ছে। বেলপুকুর চেক পোস্ট থেকে শিবপুর বাজার পর্যন্ত এই আমের মৌসুমে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত যানজোট লেগে থাকে। সারা বছর রাস্তার উপর পেঁয়াজ বসুন ও আমের মৌসুমে আমের হাট মহাসড়কে উপর হওয়ায় যানজোট লেগে থাকে তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি বানেশ্বর পেট্রোল পাম্প থেকে বানেশ্বর ট্রাফিক মোড় পর্যন্ত একটি ওভারব্রিজ করলে আর কোন ধরনের যানজোট হবে না।
রাজশাহী জেলার সবচেয়ে আমের বড় হাট হচ্ছে বানেশ্বর হাট এই হাটে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসে আম। তাই এবার ঈদের আগেই আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কম। গুটি আম ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, গোপালভোগ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা, লখনা ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকা, রাণীপছন্দ ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, ল্যাংড়া ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, হিমসাগর ১২০০ থেকে ১৭০০ টাকা এই আম গত তিনদিন আগেও ১৬০০ থেকে ২২০০ টাকা দরে বেচাকেনা হয়েছে। আবার বেশ কিছু আম জেলা প্রশাসনের বেধে দেওয়া ম্যাংগো ক্যালেন্ডারের নির্দেশনা না মেনে সময়ের আগেই নামানো হচ্ছে ।
রাজশাহীর সুমিষ্ট আমের ব্যাপক কদর থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন ব্যবসায়ীরা। গত বারের চেয়ে আমের দাম তুলনামূলক কম রয়েছে বলেও জানান ঢাকা থেকে আগত ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন। তিনি আরও বলেন এখনও আমের দাম কম রয়েছে। তবে ঈদের পরে ব্যবসায়ী আরও আসলে আমের দাম বাড়বে বলে জানান তিনি।
আম বাগান মালিক আবুল কাশেমসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন এমনিতে আমের দাম কম তার উপর আড়তদাররা অতিরিক্ত ওজনে আম নিচ্ছে। কিছু বললেই আম ফেরৎ দেওয়ার হুমকি দেয়। আমরা নিরুপায় কারণ আমতো আর পুনরায় গাড়ীতে তুলে এই যানজটের মধ্যে কোন ভাবেই ফেরৎ আনা সমস্ত না। তাই বাধ্য হয়েই ৫০ কেজির বেশিতে মণ হলেও আমরা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। তাই দাম কম হলেও ঠিকিতে এখন থেকে বিক্রি করছি।
এব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম নুর হোসেন নির্ঝর বলেন, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে বানেশ্বর আমের হাটে চরম যানজোট হচ্ছে। এই যানজটের কারণে বাসের যাত্রীসহ সকল মানুষের জনদুর্ভোগ হচ্ছে। সেই কারণে আমের হাটটি ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক থেকে বানেশ্বর চারঘাট রোডে নেওয়া সিদ্ধান্ত আমরা মাসিক মিটিং এ নিয়েছি। শুক্রবার (৩০ মে) থেকে আমের হাট চারঘাট রোডে বসবে। চারঘাট রোডে আমের হাট দেওয়ায় আশা করছি হাইওয়ে রোডে অনেক যানজোট কম হবে।
চলতি বছর ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ মেট্রিক টন। যার সম্ভাব্য বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।