আজ শুক্রবার, ৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাদারীপুরে তিন থেকে চার হাজার টাকায় চলে ইমাম ও মুয়াজ্জিনের সংসার 

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১, ২০২৪, ০১:৪৩ অপরাহ্ণ
মাদারীপুরে তিন থেকে চার হাজার টাকায় চলে ইমাম ও মুয়াজ্জিনের সংসার 

Sharing is caring!

Manual5 Ad Code
রাকিব হাসান মাদারীপুর প্রতিনিধি:

মসজিদ কমিটি থেকে যে সম্মানী পান তাতে সংসার চলাতো দূরের কথা বর্তমান বাজারে এই সম্মানী দিয়ে তার কিছুই হয় না।ভালো কোনো খাবার কিনতে পারেন না। আর্থিক সংকটে ছেলে-মেয়েদের ভালো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পড়াতে পারেন না তারা।তারপরও বাধ্য হয়ে বুকে পাথরচাপা দিয়ে হাসিমুখে প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দায়িত্ব পালন করে চলেছে মাদারীপুরের ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা। পরিবারের চাহিদা মেটাতে কেউ কেউ পাশাপাশি অন্য কর্মও করেন।ফলে ইমাম-মুয়াজ্জিনরা সরকারিভাবে বেতন-ভাতা দাবি করেছেন।

Manual6 Ad Code

মাদারীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন  ইউনিয়ন ঘুরে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বন্যা, খরা, শীত, ঝড়-বৃষ্টিসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও দায়িত্ব পালন করেন মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা।মসজিদ কমিটি থেকে তাদেরকে প্রতি মাসে সম্মানী বাবদ তিন হাজার টাকা দেন।তাও ঠিকমতো প্রতি মাসে পান না তারা।কোন মাসে দুই হাজার আর কোন মাসে আড়াই হাজার। যেখানে একজন লোকের প্রতিমাসে হাত খরচ লাগে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।তাহলে কিভাবে চলে এই তাদের সংসার।কেউ কেউ সংসার চালানোর জন্য অন্য উপায় হিসাবে বেঁছে নিয়েছেন কৃষিকাজ। মসজিদের ইমামতি পাশাপাশি কৃষি কাজ করেনও অনেকে।কোনমতে চলে তার সংসার। অধিকাংশ মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের একই অবস্থা।

মাদারীপুরের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে,  জেলায় সাড়ে ৫ হাজারের অধিক  মসজিদ রয়েছে।শহর পর্যায়ে মসজিদগুলোতে ইমাম-মুয়াজ্জিন থাকলেও গ্রামের বেশিরভাগ মসজিদে একজনই সব দায়িত্ব পালন করেন। সে হিসাবে জেলায় ইমাম-মুয়াজ্জিনের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ হাজার রয়েছে।

হাফেজ মাওলানা এনামুল হকের স্ত্রী তার মা এবং এলাকাবাসী জানান, এতো স্বল্প টাকায় তাদের সংসার চলা বড় কষ্ট। একমাত্র তাদের সংসার আল্লাহ নিজেই চালায়।

যেখানে ৫০০০ টাকায় একটা মানুষের হাত খরচও হয় না। সেখানে তাদের তিন হাজার টাকা বেতন। আমরা চাই সরকার যেন তাদেরকে প্রতি মাসে একটি ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়।

একই এলাকায় বিভিন্ন জেলা থেকেই ইমামতি  আশা ইমামরা আক্ষেপ নিয়ে বলেন,আমাদের যেই সম্মানি দেওয়া হয় তাতে সংসার চলা তো দূরের কথা এতে আমাদের নিজেদের চলতেই কষ্ট হয়। এই সম্মানীর কথা বলতে গেলেই চলে আছে চোখল মুখে কান্নার ছাপ। দুনিয়াতে সবকিছুর দাম বাড়ে কিন্তু আমাদের বেতন আর বাড়ে না।সরকার যেন প্রতি মাসে আমাদেরকে ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়। তাহলে ছেলে মেয়ে নিয়ে চলতে একটু সুবিধা হবে।

এদিকে একই গ্রামে ইমামতি করেন কোটালিপাড়া থেকে আশা মাওলানা শাহাজালাল ইসলাম ও বাগেরহাট জেলা থেকে আসা মাওলানা সাইদুল ইসলাম ওসমান গনি,জুবায়ের, মাহামুদুর রহমান, তাওহিদসহ বেশ কয়েকজন।সামান্য বেতনে চাকরি করে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। চক্ষু লজ্জা আল্লাহর ভয়ে তারা কাউকে কিছু বলতে পারছে না।বোবা  কান্নার মত একমাত্র আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল তারা।

হোগলপাতিয়া আকন বাড়ির জামের মসজিদে ইমাম ও খতিব হাফেজ  মোঃ এনামুল হক বলেন,

Manual7 Ad Code

মসজিদে যে সম্মানি দেয় তা দিয়ে সংসার চালানো বড় কষ্ট তাই কৃষি কাজ করি।

Manual5 Ad Code

কোন মাসে ২০০০ টাকা দিয়েও চালাতে হয় সংসার। লোক লজ্জায় কারো কাছে কোনদিন কিছু বলতে পারিনি। বিষয়টি সরকার দেখে তাহলে আমরা ভালোভাবে চলতে পারব।

একই এলাকায় বিভিন্ন মসজিদ কমিটির সভাপতি ওয়াজেদ সরদার, জাকির আকন, মজিবুর রহমান হাওলাদার মালেক আকনসহ বেশ কয়েকজনে জানান, ইমাম সাহেবদের যেই সম্মান দেওয়া হয় মসজিদ থেকে আসলে এটা দিয়ে তাদের চলা বড় কঠিন। কিন্তু আসলে গ্রাম অঞ্চলে মসজিদ আমাদের সমার্থক নাই। সরকার যদি তাদের এটা ব্যবস্থা করে দিত তাহলে ভালো হতো।

মাদারীপুর ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আবদুর রাজ্জাক রনি বলেন,এ জেলায় যত মসজিদ রয়েছে সেখানকার ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা সরকারিভাবে কোনো ভাতা বা সম্মানী পান না। শুধুমাত্র জেলার মডেল মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা সরকারিভাবে বেতন-ভাতার আওতায় এসেছে। বাকি মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা যেন বেতন-ভাতা পায় এজন্য আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লেখালেখি করছি। আমরা আসলে জানি ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা অতিকষ্টে জীবনযাপন করে আসছেন। এ নিয়ে আমরা কাজ করতেছি।

Manual1 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code