আজ রবিবার, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলেটে আজহারীর ওয়াজ প্রাসঙ্গিক ভাবনা

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৩, ২০২৫, ০২:৩০ পূর্বাহ্ণ
সিলেটে আজহারীর ওয়াজ প্রাসঙ্গিক ভাবনা

Sharing is caring!


Manual4 Ad Code

আবু মকসুদ

সিলেটে আজহারীর ওয়াজের অনুষ্ঠানে কী ঘটেছে, তা আমার জানা নেই। আজহারীর ওয়াজ আমি শুনি না। এতে আমার মুসলমানিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হলো কিনা, তা নিয়ে যারা বিচার করতে চান, তারা করতেই থাকুন।

Manual3 Ad Code

কিন্তু আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো, আজহারী যে ইসলামের কথা বলে, সেই ইসলাম আমার বিশ্বাসের ইসলামের সঙ্গে বেশ দূরত্বে অবস্থান করে। তাই আজহারীকে শোনার কোনো প্রয়োজন আমি অনুভব করি না। যেমন কুখ্যাত রাজাকার মেশিনম্যানের প্রতি আমার কোনো আগ্রহ ছিল না, তেমনই মেশিনম্যানের ভাবশিষ্য আজহারীর প্রতিও আমার কোনো আকর্ষণ নেই। ধর্ম যদি একটি আত্মিক সংযোগের জায়গা হয়, তবে সেই ধর্মকে বিকৃত করা বা তাকে ব্যবসার উপকরণ বানানো মেনে নেওয়া যায় না।
ওয়াজকে আমি আর ধর্মীয় কোনো আচার বা অনুষ্ঠানের সঙ্গে তুলনা করি না। ওয়াজ এখন আর পুণ্যের উদ্দেশ্যে করা হয় না; বরং এটি বিনোদনের একটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি যদি কখনো ওয়াজ শুনি, তবে প্রকৃত ধর্মীয় বোধসম্পন্ন ওয়াজকারীদের খুঁজে নিই, কোনো অভিনেতাকে নয়। আজকালকার ওয়াজে প্রায়শই ইংরেজি শব্দের অর্ধেকাংশ আর বাকিটা কৃত্রিম ন্যাকামি মিশিয়ে একধরনের অদ্ভুত আওয়াজ তোলা হয়। সেই ন্যাকামিতে অপ্রাপ্তবয়স্করা অভিভূত হতে পারে, আমি নই। আজহারীর আওয়াজে প্রভাবিত হওয়ার মতো বয়স বা মানসিক অবস্থা আমার বহু আগেই পেরিয়ে গেছে। বরং আমি মনে করি, আজহারীর মতো তথাকথিত বক্তার চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ অভিনয়শিল্পীর মঞ্চে কাজ আমি উপভোগ করেছি। তার ওয়াজে যে অভিনয় দেখতে পাওয়া যায়, তা আমার কাছে ভাঁড়ামি ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। একসময় যে ধর্ম প্রচারের মাধ্যমটি মানুষের অন্তরকে স্পর্শ করত, আজ সেটি যেন পণ্যে রূপ নিয়েছে।
আজহারীর সিলেটের ওয়াজ আমি শুনিনি এবং সেখানকার ঘটনাগুলি সম্পর্কে আমার সঠিক কোনো ধারণা নেই। তবে ফেসবুকে ভেসে আসা বিভিন্ন পোস্ট থেকে জেনেছি, সে তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেছে, “এই সিলেট কি দেখালা মনে থাকবে।” এটি শুনে মনে হয়, যেন এক সামান্য ভাঁড় সিলেটবাসীকে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। তার এমন স্পর্ধা কীভাবে সম্ভব হলো? এটি কি তার অতিমাত্রার আত্মবিশ্বাস, নাকি দর্শকদের অন্ধ অনুগত সমর্থন তাকে এমন নির্লজ্জ হতে সহায়তা করেছে?
আমার স্পষ্ট কথা, এই ভাঁড়কে বোঝানো উচিত যে সিলেট কোনো ভাঁড়ামোর ক্ষেত্র নয়। সিলেটকে বলা হয় পবিত্র ভূমি—৩৬০ আউলিয়ার আশীর্বাদপুষ্ট স্থান। এই স্থানকে অবমাননা করার সাহস কারো থাকা উচিত নয়। ইতিহাস বলছে, যারা এই ভূমিকে অবজ্ঞা করার চেষ্টা করেছে, তারা নিজেরাই অপমানিত হয়েছে। এ ভূমির প্রতি অসম্মান দেখিয়ে কেউ পার পায়নি। তাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, এবং সেই শিক্ষা এমন গভীর যে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তারা সিলেটকে ভুলতে পারেনি।
আজহারীর কর্মকাণ্ড সিলেটবাসীর জন্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। সিলেটবাসী বরাবরই তাদের ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি সম্মান রেখেছে। আজহারীর মতো ক্ষুদ্র মানসিকতার লোকজনকে প্রত্যাখ্যান করে তারা আবারও প্রমাণ করল যে, সিলেট অপমানিত হওয়ার জায়গা নয়। তার এই প্রত্যাখ্যান যদি তাকে কিছুটা হলেও শিক্ষা দেয়, তবে তা হয়তো তার ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক হবে। ধর্ম এবং তার সাথে জড়িত সংস্কারগুলোকে ব্যবসায়িক লাভের উপকরণ বানানো কখনো সঠিক পথে মানুষকে চালিত করতে পারে না।

 

Manual5 Ad Code

আবু মকসুদ : কবি ও কলামিস্ট

Manual4 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code