আজ রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গণতন্ত্রের হারানো বিজ্ঞপ্তি

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ০৪:৪৬ অপরাহ্ণ
গণতন্ত্রের হারানো বিজ্ঞপ্তি

Sharing is caring!

শর্বরী মিত্র

বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে – কোন বিবেকবান ব্যক্তি যদি তা খুঁজে পান , জানাবেন দয়া করে ।
তাৎক্ষনিক ভাবে ঘুষ দিয়ে বা জালিয়াতি করে গনতন্ত্র পাওয়া যায় না ,এর জন্য দরকার দীর্ঘ কালিন চর্চা জীবনের সব ধাপে । চলুন পরিবার থেকে শুরু করা যাক । দাদু দিদা কাকা পিসি সবাইকে নিয়ে পরিবার এখন খুব দেখা যায় না, তাও পরিবারের সবাই কি সমান গুরুত্ব পায় ? না বাবার সমান মায়েরই হয় না । পরিবারে বাবা সব সময় সবার উপরে । বাবা সবার ভাল চায় ,ভালই করে কিন্তু মায়ের কথা মাঝে মধ্যে শুনলে ক্ষতি কি ? বেশির ভাগ পরিবারে মাকে বলতেই দেওয়া হয় না আবার কোথাও মা কথা বলার অবস্থাতে থাকে না কারন অত্যধিক মানসিক চাপ , না বলার অভ্যাস ,সেটা কি গনতন্ত্র ?

 

পরিবারের ছোটদের মানে বাচ্চাদের খাদ্য , বস্ত্র , শিক্ষা সহ সব কিছু ঠিক করা হয় কর্তার ইচ্ছামত – বাচ্চাদের কিছু বলার থাকে না , সে কি গনতন্ত্র ? বাচ্চার বাবা চান ছেলে ডাক্তার হবে , সেটাই হবে , ছেলের কবি হওয়ার উপায় নাই ।বলছেন বাংলাদেশে এমন পরিবার হয় না , কি জানি হয়তো হয় না ! গত ৫৫ বছরে বাংলাদেশে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে নিশচয় লক্ষ্য করেছেন – বড বড বিল্ডিং হয়েছে , চওড়া পাকা রাস্তা হয়েছে সে সব রাস্তায় প্রচুর দামী দামী বিদেশি গাড়ী চলছে ।মানুষের প্রচুর টাকা । মানুষ যথেষ্ট বিলাসিতায় অভ্যস্ত হয়েছে ।

 

এক কথায় জীবন যাত্রার মান বেড়েছে, খুবই ভাল কথা । মানুষের মনের ভিতরে অথবা মননে যে বিরাট পরিবর্তন হয়েছে সেটাও লক্ষ্য করেছেন আশাকরি । লোভ , দুর্নীতির জন্য অসৎ উপায়কে রীতিমত বৈধতা দেওয়া হচ্ছে এবং তা হচ্ছে সমাজের সব স্তরে ।চেহারা এবং বেশভুষাতেও যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে । শিক্ষিত এবং শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন ভয়াবহ অবস্থায় আছে । বলা হচ্ছে গত ১৫ বছরে গনতন্ত্র নষ্ট হয়েছে !! হবে হয়তো, কিন্তু ভাংগনের শব্দ অনেক আগে শোনা যাচ্ছিল । বাংলাদেশের সমাজের ,রাষ্ট্রের মূল ভাব ধারায় যে অবনতি চলছিল সেটার বিশাল প্রকাশ হয় ২০২৪ এর জুলাই । বর্তমান যে যুব সমাজ বাংলাদেশকে অস্থির অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে , এতে তারা যতটা না তার চে অনেক বেশি তাদের অভিভাবকেরা দায়ী ।

 

বর্তমান যুব গোষ্টী তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য জানে না কারন অভিভাবকেরা বলে নাই , কেউ ভুল বলেছে , কেউ মিথ্যা বলেছে । সরকার এবং শিক্ষাব্যবসথাতেও লাগাতার গোলমাল চলেছে । দুর্নীতিপরায়ন অভিভাবক ছাড়া আরেক ধরনের অভিভাবক আছেন যারা চুপ করে সমস্ত অনিয়ম দেখেছেন , সহ্য করেছেন এবং এরা একটা বিশাল অংশ । এই অবস্থায় কি গনতন্ত্র থাকে ? দলবাজী , চাঁদাবাজী , গুন্ডামি এসব এখন সমাজের সাধারন ব্যপার ।

 

 

মানুষ ব্যক্তি চিন্তায় এত মগ্ন যে কেউ কোন কথা বলে না , সবাই সব কিছু পাশ কাটিয়ে যায় । একাই বড হওয়ার , ভাল থাকার , সরে যাওয়ার যে প্রবনতা – এর থেকে এই বর্তমান প্রজন্ম তৈরী হয়েছে । এদের গনতন্ত্র জানার বা শেখার কি কোন উপায় আছে ? এই যুব সমাজের শিক্ষাজীবন কেটেছে অভিভাবকের দুর্নীতিতে আর এদের কর্ম জীবন কাটছে নিজেদের আরো দুর্নীতিতে । এদের সুস্থ , মুক্ত চিন্তা চেতনা নাই । এরা কিছুই অর্জন করতে চায় না সবই ফাও পেতে চায় । এদের গড়ার যোগ্যতা নাই , নষ্ট করাকে বাহাদুরি ভাবে , অন্যকে অভিযোগ করা এদের ধর্ম ।আরেক ধরনের অভিভাবক যারা ধর্ম নিয়ে পরিবারে সমাজে অকারন অতিরিক্ত সোচচার । ফলে বর্তমান যুব গোষ্ঠী মানবতা , সততা পরোপকার ইত্যাদি বাদ দিয়ে অন্যান্য আজগুবি আচরনে ব্যস্ত ।

 

 

এই চক্রে বাংলাদশের পরিবার ,সমাজ , সরকার ঘুরছে দীর্ঘ সময় ধরে ।কখন যে গনতন্ত্র কোথায় হারিয়ে গেছে কে জানে ? কে বা কারা গনতন্ত্র খুঁজবে , ফিরিয়ে আনবে সে তো সময় বলবে । কর্ম ফল সবাইকে ভোগ করতে হয় , ভেবে দেখেছেন এই অস্থির অসুস্থ অবস্থার শিকার কারা হবে ? অবশ্যই ভাবুন ,এখন যারা ১৪/১৫ বছরের ছেলেমেয়ে তারা , আগামী প্রজন্ম । এদের না আছে দেশে কোন সুস্থ নিরাপদ শিক্ষা ব্যবস্থা , না থাকবে অন্য কোথাও যাওয়ার , কিছু করার যোগ্যতা । এরা হবে হতাশ এবং আরো বেপরোয়া । যা হবে একমাত্র এলাহী ভরসা ।