রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন জুলাই যোদ্ধারা। তাদের দাবি— জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং ঘোষণাপত্রকে স্থায়ী আইনি রূপ দেওয়া।
আন্দোলনের ফলে শুক্রবারও শাহবাগসহ আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানচলাচল ব্যাহত হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন এই সড়কে চলাচলকারী মানুষজন।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত চলমান রয়েছে। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘জুলাই যোদ্ধা সংসদ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে এ কর্মসূচি নেওয়া হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টানা বৃষ্টির মধ্যেও বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। সড়কের চারপাশে তারা ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছেন, ফলে শাহবাগ মোড় হয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।
শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আশপাশের সব সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন চলাচলকারীরা। শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ থাকায় কাটাবন মোড়, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, মৎস্যভবন মোড় ও শাহবাগ থানার সামনের সড়ক থেকেই যানবাহন অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে রাস্তা অবরোধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক মোটরসাইকেল চালক। তারা বলেন, প্রতিদিন আন্দোলনের জন্য এক ঘণ্টার জায়গায় তিন ঘণ্টা লাগিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়। যারা রাইড শেয়ার করি তাদের চরম ক্ষতি হয়। জুলাইয়ের আন্দোলন আমরাও করেছি, কিন্তু এখন আমাদেরই দুর্ভোগ বেশি।
অবরোধকারীরা বলছেন, বারবার দাবির কথা জানানো হলেও এখনো পর্যন্ত সরকার জুলাই সনদের বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি দেখায়নি। ফলে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়েই আবারও আন্দোলনে নেমেছেন।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, অবরোধকারীরা বৃহস্পতিবার রাতভর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করেছেন এবং শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। বৃষ্টির মধ্যেই তাদের সেখানে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
‘জুলাই যোদ্ধা সংসদ’-এর মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, সরকার দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত তারা শাহবাগ ত্যাগ করবেন না।
আজ শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় অফিসমুখী মানুষের চাপ কিছুটা কম হলেও যানবাহনের অভাবে সাধারণ মানুষকে অনেক কষ্ট করে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে।
অবরোধকারীদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের আজীবন সম্মান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা দেওয়া; শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহত ব্যক্তিদের সব চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের ওপর সংঘটিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।