আজ বুধবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সমন্বয়করা সেদিন কেন বঙ্গভবনে যাননি , ক্ষমতার ভাগাভাগি করেছিল কারা ?

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২, ২০২৪, ০২:৫৮ অপরাহ্ণ
সমন্বয়করা সেদিন কেন বঙ্গভবনে যাননি , ক্ষমতার ভাগাভাগি করেছিল কারা ?

Sharing is caring!


Manual4 Ad Code

টাইমস নিউজ

 

Manual4 Ad Code

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সুশীল ও রাজনৈতিক দলগুলো। তবে তখনো রাজপথে জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে ছিল ছাত্র-জনতা। অথচ ছাত্র-জনতাকে মাইনাস করে ক্ষমতার অংশীদার হতে চেয়েছিলেন সুশীল ও রাজনীতিবিদরা।

এদিকে বর্তমান আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সে সময়ের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

সমন্বয়করা সেদিন কেন বঙ্গভবনে যাননি সে বিষয়ে বিস্তর একটি পোস্ট দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশিদ।

Manual8 Ad Code

প্রায় ৪ মাস পর সেদিনের স্মরণে গত শনিবার রাতে ‘৫ আগস্ট ৩৬ জুলাইয়েরে গল্প’ শিরোনামে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে পোস্টটি করেন রশিদ।

ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘৫ আগস্টে ‘মার্স টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে আমাদের পরিকল্পনা ছিল শহিদ মিনার বা শাহবাগ দুটির যেকোনো একটা জায়গায় আমরা জড়ো হবো, সেখান থেকে আমরা গণভবন অভিমুখী মার্স করব। যদি গণভবনের দিকে মার্স করার সময় আমাদের ওপর ম্যাসাকার চালায় তাহলে আমরা ‘সশস্ত্র সংগ্রামের’ দিকে যাব।

নাহিদ ভাই সশস্ত্র সংগ্রামের ঘোষণা দিয়ে একটা ভিডিও বার্তাও বানিয়ে রাখেন, দু-একজন জার্নালিস্টকে এই ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে রাখেন যদি আমরা কেউই পরবর্তীতে ঘোষণা দেওয়ার জন্য বেঁচে না থাকি; তাহলে ৫ তারিখের পর যাতে আন্দোলন নির্দেশনার অভাবে নিস্তেজ না হয়ে যায়। আমরা যারা নেতৃত্ব দিয়েছি তারাসহ গোটা দেশই শহিদ হওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিলাম।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘সকাল থেকে ঢাকার পরিবেশ ছিল থমথমে, সকালেই শহিদ মিনারে গুলি চলে। আসিফ-বাকের-মোয়াজ্জেম ভাইকে হত্যার জন্য চানখাঁরপুলে বার্ন ইউনিটের ওপর থেকে স্নাইপার দিয়ে গুলি চালায়।

 

কিন্তু একটা পর্যায়ে মোটামুটি অর্গানিকভাবেই (ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্পট ও প্রবেশমুখগুলোতে আমাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কানেকশন ছিল আমাদের) গণভবন অভিমুখে মার্স করে। লাখ লাখ মানুষের ঢল নামে ঢাকার রাস্তায়।’

রিফাত রশিদ আরও লিখেছেন, ‘শাহবাগে আমরা যখন ছিলাম তখন বিভিন্ন সোর্স থেকে নিউজ আসতে থাকে, হাসিনা পদত্যাগ করে ক্ষমতা সেনাবাহিনীর কাছে হ্যান্ডওভার করবে। আসিফ ভাই শাহবাগ থেকে ভিডিও বার্তা দেন যে সেনাশাসন এদেশের জনগণ মানবে না।

আমিও ভিডিওবার্তা দিই এই টপিকে, পোস্ট করি যে ‘দেশের ভবিষ্যৎ ক্যান্টনমেন্ট থেকে নয়, নির্ধারিত হবে অভ্যুত্থানের মঞ্চ শাহবাগ থেকে।’ সারা দেশের মানুষ আমাদের সর্বাত্মক সমর্থন জানায়, ফলে সেনাশাসনের সম্ভাবনা সেখানেই নস্যাৎ হয়ে যায়।

‘এরপর শাহবাগ থেকে গণভবন অভিমুখে লং মার্চ শুরু হয়। তখনো আমরা জানতাম না যে, হাসিনা আদৌও পালাইছে কিনা। লং মার্চ যখন মোটামুটি ফার্মগেটের কাছে তখন আমরা জানতে পারি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাইছে। তখন গণভবন অভিমুখী লং মার্চ বিজয় মিছিলে রূপ নেয়।’

‘এতক্ষণ জানা ঘটনাগুলো আওড়ালাম কারণ পুরো ঘটনাপ্রবাহ যারা জানে না তাদের বোঝা সহজ হবে। আমরা মার্স শেষে দ্রুত শাহাবাগে আসার প্ল্যান করি। শাহবাগ থেকে আমরা ক্যাম্পাস খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশ কিভাবে পরিচালিত হবে সেটা নির্ধারণ করব। কিন্তু হিসাব এতটাও সহজ ছিল না।’

Manual3 Ad Code

রিফাত সেদিনের বর্ণনায় লিখেছেন, ‘দুপুর থেকেই আসিফ নজরুল স্যার নাহিদ ভাই, আসিফ ভাই ও মাহফুজ ভাইকে খুঁজছিলেন বঙ্গভবনে আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা যারা দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে এক্টিভিজম করেছি তাদের মাঝে প্রাথমিক বোঝাপড়া থাকার জন্য আমরা সবাই জানতাম আমরা বঙ্গভবনে যাব না। আমাদের ডিসিশন শাহবাগে জনতার মঞ্চ থেকেই হবে। নাহিদ, আসিফ, মাহফুজ ভাইয়েরা এই সিদ্ধান্তে একমত ছিলেন। কিন্তু ওই মুহূর্তে সবাই একসঙ্গে বসে একটা একক সিদ্ধান্ত নিতে পারব এই সুযোগ আমরা পাই নাই।’

‘আসিফ নজরুল স্যার নাহিদ-আসিফ-মাহফুজ ভাইদের রাজি করাতে না পেরে হাসনাত ভাইকে অ্যাপ্রোচ করেন। আপনারা যারা আমাদের লং মার্চের ভিডিও দেখেছেন তারা জানেন নাহিদ-আসিফ ভাই এক রিকশায় ছিলেন, সারজিস-হাসনাত ভাই অন্য আরেকটা রিকশায় ছিলেন। ফলে নাহিদ-আসিফ-মাহফুজ ভাইয়েরা বঙ্গভবনে যাবেন না, এই সিদ্ধান্তটা হাসনাত ভাইয়েরা জানতেন না।’

তিনি লিখেছেন, ‘আসিফ নজরুল স্যার হাসনাত ভাইকে অ্যাপ্রোচ করলে হাসনাত ভাই স্যারের সঙ্গে গাড়িতে উঠে বঙ্গভবনে যাওয়ার জন্য রওনা দেন এই ভেবে যে আমাদের সবাই বঙ্গভবনে যাচ্ছি/আছি। অথচ বাস্তবতা হলো, সেখানে অলরেডি ক্ষমতার ভাগ নেওয়ার জন্য দেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বসে আছেন। জাস্ট ছাত্র সমন্বয়কদের মধ্যে একটা গ্রুপকে সেখানে নিয়ে গিয়ে তাদের মাধ্যমে ম্যান্ডেট নিতে পারলেই ক্ষমতা সেখানে ভাগাভাগি হয়ে যেত। অর্থাৎ ক্ষমতার কেবলা শাহবাগ থেকে ক্যান্টনমেন্টের দিকে শিফট করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ক্ষমতাকে সব পলিটিক্যাল দলের সমর্থনে বঙ্গভবনে শিফট করে ফেলা হয়।’

‘আমরা টিভিতে যখন দেখতে পেলাম হাসনাত ভাই বঙ্গভবনের দিকে যাচ্ছেন তখন নাহিদ ভাই হাসনাত ভাইকে কল দিয়ে জানান যে, আমরা কেউ বঙ্গভবনে যাচ্ছি না। তখন হাসনাত ভাই দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে আমাদের কাছে চলে আসেন। আমরা তখন চ্যানেল ২৪-এর অফিসে প্রেস ব্রিফিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমরা সেখান থেকেই ঘোষণা দিই যে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। শিক্ষার্থীরাই এ দেশের পরবর্তী ক্ষমতা কাঠামো নির্ধারণ করবে। এর ফলে একটা বার্গেনিং পয়েন্ট তৈরি হয়। এই বার্গেনিং পয়েন্টের জোর এবং সারা দেশ আমাদের পাশে থাকায় পরবর্তী ক্ষমতা কাঠামো থেকে আমাদের পুরোপুরি বাদ দেওয়া যায় নাই।’

Manual8 Ad Code

রিফাত লিখেছেন, ‘তবু নানা গেম আসলে চলছিল আমাদের সঙ্গে, ফলে বাধ্য হয়েই মাঝরাতে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে নাহিদ ভাই, আসিফ ভাই আর বাকের ভাই জানান যে, ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করা হবে, যা এ দেশের সর্বস্তরের জনগণ সমর্থন জানায়। মূলত ছাত্র প্রতিনিধিদের দ্বারা প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বসম্মতিক্রমে নিয়োগের মাধ্যমেই গভমেন্টে ছাত্রদের স্টেকটুকু নিশ্চিত করা যায়।’

পোস্টের শেষাংশে রিফাত রশিদ লিখেছেন, ‘যারা ভাবেন ছাত্ররাই দেশ চালায় তারা ভুল ভাবেন। ছাত্ররা গোটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশ, পুরোটা জুড়ে মোটেও ছাত্ররা নাই। সরকারে ছাত্র প্রতিনিধিদের বার্গেইন করতে হয়। সরকারের বাইরে যারা সেই ছাত্রদের ভরসা আসলে রাজপথ, তাদের ভরসা শিক্ষার্থীরা, তাদের ভরসা জনগণ। এই বাদে তাদের কোনো ভরসার জায়গা নাই।’

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code