আজ সোমবার, ৩রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যেভাবে প্রধান উপদেষ্টা হবার দাওয়াত পেয়েছিলেন প্রফেসর ইউনূস

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ

Sharing is caring!

Manual2 Ad Code

টাইমস নিউজ

Manual1 Ad Code

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস তখন অবস্থান করছেন ফ্রান্সে। প্যারিস অলিম্পিক আয়োজনের সঙ্গে জড়িত থেকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। অন্যদিকে বাংলাদেশ তখন ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল । তখনও নিশ্চিত নয় আন্দোলনের ফল। কিংবা ড. ইউনূসের সরকার প্রধান হওয়া।

Manual8 Ad Code

প্যারিস অলিম্পিকের ফাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে হয় তাকে। সেখানে গিয়ে অস্ত্রোপচারও করাতে হয়। আর এদিকে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। ছাত্রদের পক্ষ থেকে প্যারিসের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ড. ইউনূসকে ফোন করা হয়। জানানো হয় অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে তাকেই। সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় ৬ মাস পর প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন সরকার গঠনের সেই সময়ের গল্প। জানিয়েছেন, হাসপাতালের বেডে শুয়ে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার সংবাদ জানতে পেরেছিলেন তিনি।

Manual2 Ad Code

সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে সুইজারল্যান্ডের দাভোস সফর করেন প্রধান উপদেষ্টা। সে সময় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের বৈদেশিকবিষয়ক প্রধান ভাষ্যকার গিডেয়েন রাখমানের উপস্থাপনায় একটি পডকাস্টে কথা বলেন তিনি।

‘রাখমান রিভিউ’ নামের ওই পডকাস্ট অনুষ্ঠানে কথোপকথন লিখিত আকারে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানেই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ও ছাত্রদের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন ড. ইউনূস।

ইউনূস বলেন, ‘আমি যখন প্রথম ফোনকল পাই, তখন আমি প্যারিসের হাসপাতালে ছিলাম। আমার ছোট্ট একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তখন তারা (ছাত্রনেতারা) ফোন দিল। যদিও আমি বাংলাদেশে কী ঘটছে, সেসব খবর প্রতিদিন মুঠোফোনে দেখতাম। তখন তারা বলল, “তিনি (শেখ হাসিনা) চলে গেছেন। এখন আমাদের সরকার গঠন করতে হবে। দয়া করে, আমাদের জন্য সরকার গঠন করুন।” আমি বলেছিলাম, না, আমি সেই ব্যক্তি নই। আমি এর কিছুই জানি না। আমি এর সঙ্গে যুক্ত হতেও চাই না।’

Manual8 Ad Code

কারা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল—এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা। আমি তাদের কাউকেই চিনতাম না। কখনো তাদের সম্পর্কে শুনিনি। কাজেই আমি তাদের বিকল্প কাউকে খোঁজার বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। তাদের বলেছিলাম, বাংলাদেশে অনেক ভালো নেতা আছেন। তোমরা তাদের খুঁজে নাও। তারা বলছিল, “না, না, না, আপনাকেই থাকতে হবে। আমরা কাউকে পাইনি।” আমি বলেছিলাম, জোরালো চেষ্টা করো। তারা বলল, “আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই।” তখন বলেছিলাম, অন্তত একটা দিন চেষ্টা করো। না পেলে ২৪ ঘণ্টা পর আমাকে আবার ফোন করো।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তারা (ছাত্রনেতারা) আমাকে আবারও ফোন করল। বলল, “আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সম্ভব হয়নি। আপনাকে অবশ্যই দেশে ফিরতে হবে।” শেষ পর্যন্ত আমি বললাম, দেখো, তোমরা রাজপথে জীবন দিয়েছো। প্রচুর রক্তক্ষয় হয়েছে। তোমরা সম্মুখসারিতে আছো। যেহেতু তোমরা এসব করতে পেরেছ, এখন ইচ্ছা না থাকলেও তোমাদের জন্য আমারও কিছু করা উচিত। আর এটাই সেই সময়। সরকারের সংস্কার করতে হবে। আমি রাজি। তোমরা কি একমত? তারা আর কোনো কথা বলেনি।’

সেই দিনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ঘণ্টা দুয়েক পর হাসপাতালের একজন নার্স এলেন। তিনি আমাকে একটি ফুলের তোড়া উপহার দিলেন। আমি বললাম, এটা কেন? তখন ওই নার্স বললেন, “আপনি বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’, আমরা এটা জানতাম না।” আমি বললাম, এটা আপনি কোথা থেকে জানলেন? তখন তিনি বললেন, “সব গণমাধ্যমে, সব টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার হচ্ছে, আপনি বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’।” আমি বললাম, আমি আপনার কাছ থেকেই এটা জানলাম।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এরও ঘণ্টা দুয়েক পর ওই বোর্ড সদস্যরাদসহ হাসপাতালের প্রধান আসেন। তারা ফুলের তোড়া দিয়ে নতুন ‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে আমাকে শুভেচ্ছা জানান। সঙ্গে এটাও বলেন যে বিকেলের আগে আমাকে হাসপাতাল ছাড়ার বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হবে না।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি পরিচালককে বলি, ওরা আমাকে চাইছে। দেশে যেতে বলছে। ভ্রমণের জন্য আপনি কি আমাকে প্রস্তুত করে দিতে পারেন? তিনি বললেন, “অবশ্যই, আপনার কথা আমাদের মানতে হবে। আপনি একজন প্রধানমন্ত্রী। আপনার নিরাপদ যাত্রার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দেব। প্রয়োজনীয় ওষুধসহ সবকিছু দেব। সার্বক্ষণিক যোগাযোগে থাকব।”’

এর কয়েক ঘণ্টা পর, সকালে ফরাসি সেনাবাহিনীর বড় একটি দল আমাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে আসে—এমনটাই বলছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, ‘এটাই ছিল দেশে ফেরার আগের ঘটনাবলী। পুরো জাতি আমার ফেরার উড়োজাহাজের অপেক্ষায় ছিল। বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে যাত্রা করেছিলাম। তখন তারা (ছাত্রনেতারা) নতুন সরকারের রূপরেখা দাঁড় করিয়ে ফেলেছে। আমি বিমানবন্দর থেকেই জাতির সামনে ভাষণ দিলাম। সবাইকে ধৈর্য, শান্তি, একতা বজায় রাখতে বললাম। এটাই ছিল পুরো ঘটনার শুরু।’

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code