আজ বৃহস্পতিবার, ২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট হস্তান্তর

editor
প্রকাশিত মার্চ ২২, ২০২৫, ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট হস্তান্তর

Sharing is caring!

Manual5 Ad Code

কামরুজ্জামান হিমু 

Manual8 Ad Code

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেছেন, গণমাধ্যমের মালিকানা একক হাতে কেন্দ্রীভূত থাকলে সেটাকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা হয়, পারিবারিক স্বার্থে, নিজস্ব গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা হয়। সেটা থেকে বেরিয়ে আসার প্রতিকার হচ্ছে সেটা যদি পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি হয়। সুতরাং আমরা সুপারিশ করেছি বড় এবং মধ্যম আকারের যত গণমাধ্যম আছে, তাদের উচিত হবে পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি করা।

শনিবার (২২ মার্চ) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট হস্তান্তরের পর তিনি এসব কথা বলেন।

Manual5 Ad Code

কামাল আহমেদ বলেন, ‘যারা টেলিভিশন, বড় বড় সংবাদপত্রের মালিকানায় আছেন; তাদের মালিকানার মধ্যে জনগণের স্বার্থ কতটুকু প্রতিফলিত হচ্ছে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। কারণ তাদের কোন জবাবদিহিতা নাই। আমরা গণমাধ্যম থেকে রাজনীতিকদের জবাবদিহিতা চাইছি, আমলাদের জবাবদিহিতা চাইছি, কিন্তু গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা কোথায়? একটা পত্রিকা আরেকটা পত্রিকার মালিকের বিরুদ্ধে বলছে। তার জবাবদিহিতা কোথায়, এটা কি জনস্বার্থ সম্পর্কিত নাকি একেবারেই ব্যক্তিগত স্বার্থ সম্পর্কিত; এসব প্রশ্ন আমরা বিবেচনা করে দেখেছি। বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যমের মালিক কারা সেটি দেখতে আইন হচ্ছে। আমেরিকায় ক্রস ওনারশিপ অ্যালাউ না, অর্থাৎ যিনি টেলিভিশনের মালিক তিনি সংবাদপত্রের মালিক হতে পারেন না। ভারতেও এই আইন বিবেচনাধীন আছে। ইন্দোনেশিয়ায় গণমাধ্যম করলে তাকে করপোরেশন হতে হয়, পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি করতে হয়। এতে সুবিধা হচ্ছে, বছর শেষে নিরীক্ষিত হিসাব প্রকাশ করতে হয় এবং সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের লভ্যাংশ দিতে হয়।

‘গণমাধ্যমের বর্তমান যে বাস্তব অবস্থা, এগুলো একদিনের নয়’, উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো গণমাধ্যমের দীর্ঘদিনের যে প্রক্রিয়া, পরিবর্তন, দীর্ঘদিন যে চর্চাগুলো হয়ে আসছে সেই চর্চাগুলোর ক্রমাগত পরিণতিতে আজকের গণমাধ্যমের পরিস্থিতি একধরনের সংকটের মধ্যে। সংবাদের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা একেবারেই সংকটের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। সেই বাস্তুবতায় আমরা মোটামুটি একটা ইতিহাস পর্যালোচনা করেছি এবং ইতিহাস পর্যালোচনা করে সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কোথায় কোথায় ত্রুটি ছিল, কী কী ত্রুটি ছিল এবং সেই ত্রুটি দূর করার জন্য সেরা উপায় কী হতে পারে সেগুলো খোঁজার চেষ্টা করেছি। আমরা সংবাদমাধ্যম বলতে পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন পোর্টাল, রেডিও সবগুলোই বিবেচনা করে দেখেছি। এদের প্রত্যেকটি সমস্যা একরকম নয়, একেকজনের একেক রকম সমস্যা। কিন্তু সাংবাদিকতার সমস্যা সবক্ষেত্রেই একরকম। টেলিভিশন সাংবাদিকের যে সমস্যা, পত্রিকার সাংবাদিকেরও সেই সমস্যা। সুতরাং সাংবাদিকতার কী সমস্যা, সেটা আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। সেটা মোকাবিলার কী উপায় হতে পারে, সেটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।

Manual1 Ad Code

তিনি বলেন, সুপারিশমালাতে আমরা দেখেছি যে, বাংলাদেশের একটা বড় সমস্যা এই গণমাধ্যমে কালো টাকা ঢুকেছে। এখানে মালিকানার সমস্যা একটা বড় ধরনের সমস্যায় পরিণত হয়েছে। মালিক হয়েছেন কী পদ্ধতিতে— আমরা জানি না। কারণ কোনও প্রকাশ্য, উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেওয়া হয় নাই। অনলাইন পোর্টালের যে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে সেটাও কোনও স্বচ্ছ, উন্মুক্ত কিংবা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়নি। এগুলো সবই দেওয়া হয়েছে নেপথ্যে, যোগসাজশে, রাজনৈতিক পরিচয়ে অথবা অন্য কোনও কারণে। সেই কারণে এই শিল্পে যে সংকট, সেই সংকটে মালিকদের যে ভূমিকা, সরকার পরিবর্তনের পর কিন্তু মালিক পরিবর্তন হয়নি, মালিকরা নিউজরুমের নেতৃত্বে, সম্পাদকীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন এনেছেন। কারণ তারা চাইছেন যারা ক্ষমতায় আসতে পারে বা যে রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটছে বলে মনে হচ্ছে তাদের সঙ্গে একধরনের লিয়াজোঁ করা দরকার। সুতরাং সেই কারণেই নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এই মালিকদের কাউকে ঘোষণা দিতে হয়নি তার গণমাধ্যমে বিনিয়োগের উৎস কী, সেটি কি কর প্রদেয় টাকা নাকি কর দেওয়া হয়নি এমন টাকা। আমরা দেখেছি টেলিভিশনের লাইসেন্স যারা নিয়েছেন মিশন স্টেটমেন্ট কী ছিল– কিছুই ছিল না। যা ছিল শুধু রাজনৈতিক অঙ্গীকার। আওয়ামী লীগ যে করে সে আওয়ামী লীগের আদর্শ প্রচার করতে চায়, সরকারের ডিজিটাল ভিশনকে তুলে ধরতে চায়, সেই কারণে টেলিভিশন চ্যানেল চায়। সেখানে জনস্বার্থের কোনও বিষয় ছিল না।

Manual5 Ad Code

প্রসঙ্গত, গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে গত ১৮ নভেম্বর সরকার ১১ সদস্যের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কমিশনের প্রধান করা হয় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদকে।

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code