আজ মঙ্গলবার, ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অগ্নি সন্ত্রাস নাকি দুর্ঘটনা?

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২০, ২০২৫, ০৮:৪৫ অপরাহ্ণ
অগ্নি সন্ত্রাস নাকি দুর্ঘটনা?

Sharing is caring!

Manual3 Ad Code
লায়ন উজ্জল কান্তি বড়ুয়া,
বিগত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রা পেয়েছে। রাজধানীর মার্কেট, চট্টগ্রামের ইপিজেড, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গোভিলেজ নারায়ণগঞ্জের শিল্প এলাকা কিংবা আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন জায়গায় আগুনের ভয়াল থাবা। প্রতিদিনের খবরে যেন আগুনের লেলিহান শিখা আমাদের বিবেককে পোড়াচ্ছে। এখন প্রশ্ন উঠছে এসব কি কেবল দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে রয়েছে পরিকল্পিত অগ্নি সন্ত্রাসের ছায়া?
বাংলাদেশে অগ্নিকাণ্ডের প্রচলিত কারণ হিসেবে বলা হয়- বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, গ্যাসের লিকেজ, অসতর্কতা বা ব্যবস্থাপনার অভাব। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে আশ্চর্য মিল পাওয়া যাচ্ছে। একই সময়ে, একই ধরনের ভবনে, প্রায় একই ধাঁচে আগুন লাগা নিছক কাকতালীয় নয়। কেউ কেউ বলছেন, ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বীমা জালিয়াতি কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাশকতা এসব ঘটনার পেছনে থাকতে পারে।
তবে কারণ যাই হোক, সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো আমাদের অপ্রস্তুতি ও অবহেলা। দেশের অধিকাংশ ভবন, মার্কেট ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা হয় নেই,  থাকলেও অকেজো। জরুরি বহির্গমন পথ বন্ধ, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র মেয়াদোত্তীর্ণ, প্রশিক্ষিত কর্মী নেই ফলে সামান্য আগুনও মুহূর্তে ভয়াবহ বিপর্যয়ে রূপ নেয়। ফায়ার সার্ভিসের সীমিত সক্ষমতা ও নগর পরিকল্পনার বিশৃঙ্খলতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
অন্যদিকে, প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পর গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর রিপোর্ট খুব কম ক্ষেত্রেই জনসম্মুখে আসে। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বললেই চলে। প্রশাসনিক উদাসীনতা, দুর্নীতি এবং আইন প্রয়োগের দুর্বলতা বারবার একই ট্র্যাজেডি ডেকে আনে।
অগ্নিকাণ্ড কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়; এটি আমাদের সামাজিক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। একটি বাজার বা কারখানা পুড়ে গেলে শত শত পরিবার তাদের জীবিকা হারায়, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আর জাতি হারায় আত্মবিশ্বাস।
এই অবস্থায় এখনই প্রয়োজন বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া। যেমন –  ১. প্রতিটি ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা সনদ বাধ্যতামূলক করতে হবে। ২. বৈদ্যুতিক ও গ্যাস সংযোগের মাননিয়ন্ত্রণে কঠোরতা আনতে হবে। ৩. ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিক প্রযুক্তি, যান ও প্রশিক্ষণে সমৃদ্ধ করতে হবে। ৪. জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে অগ্নি প্রতিরোধ প্রশিক্ষণ চালু করা জরুরি। ৫.  সর্বোপরি, প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আগুন শুধু কাঠ বা লোহা পোড়ায় না, পোড়ায় মানুষের আশা, ঘরবাড়ি ও ভবিষ্যৎ। তাই আজ প্রশ্ন একটাই, এসব আগুন কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি আমাদের সমাজে অগ্নি সন্ত্রাসের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা এখন সময়ের দাবি।
লেখক পরিচিতি : সংগঠক ও কলাম লেখক।
Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code