আজ বুধবার, ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বোতলটা নতুন, হালাল মদটা পুরানো

editor
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫, ০৮:০১ অপরাহ্ণ
বোতলটা নতুন, হালাল মদটা পুরানো

Sharing is caring!

Manual5 Ad Code

 

Manual8 Ad Code

মেঘমল্লার বসু

Manual5 Ad Code

পৃথিবীর সর্বাধিক মুসলমানের দেশ ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় প্রতীকগুলার একটা গরুড় পাখি, জাতীয় গ্রন্থসম মর্যাদায় দেখা হয় রামায়ণকে। তাতে কি ইন্দোনেশিয়া ভারতের কলোনি হয়ে গেছে? অর্থনৈতিকভাবে কি সে ভারতের কাছে জিম্মি।

এই যে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের প্রশ্ন উঠলে ‘সাংস্কৃতিক হেজিমোনি’র নাম তুলে অর্থনীতির প্রশ্নকে আড়াল করে দেওয়া হয় এতে কার ফায়দা হয়? স্ট্রাকচার যে অর্থনীতি, বাকি সব সুপার স্ট্রাকচার এইটুকু বোধও কি আপনাদের নাই! রেজওয়ানা বন্যারা রবীন্দ্রনাথের গান না গাইলে কি সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়ে যাবে? ডেইলি স্টারের সামনে গরু কাটলে কি তিস্তার পানি গলগল করে আসতে শুরু করবে? গত ছয় মাসে ভারতীয় ফান্ডিংয়েই কিছু লোক ফ্রান্সে, আমেরিকায় বসে সীমান্তে জেয়াফত করার, পহেলা বৈশাখে জেয়াফত করার, প্রথম আলোর সামনে জেয়াফত করার, মোদ্দা কথা কিছু হলেই গরু কাইটে ভারত বিরোধিতা করার উস্কানি দিয়ে গেছে। কিন্তু এর মধ্যে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে এই তথাকথিত ভারত বিরোধীরা টু শব্দ করে নাই, আদানীর সাথে তিন মাস গ্যাঞ্জাম করার পর আবার আদানীকেই আগের মাত্রায় বিদ্যুৎ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অথচ ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে আদানি পোষা ছিল অসাম্প্রদায়িক সম্প্রসারণবাদ বিরোধীদের ক্রোধের একটা প্রধান উৎস। খেয়াল করে দেখবেন, অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা, সীমান্ত হত্যা, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আদানির সাথে অসম চুক্তি এগুলো নিয়ে যারা কথা বলে তাদেরকেই আগে থেকে ভারতের এজেন্ট বলে ডেলিজিটিমাইজ করে রাখা হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা করলে সাম্প্রদায়িকতা হিসেবে করেন। ভারত হিন্দুর কোডওয়ার্ড হইলে হিন্দুর বিপদ, ভারতের লাভ।
(২)
নাহিদ সাহেব, মাহফুজ সাহেবরা এক সময় প্যালেস্টাইন নিয়ে মিছিল করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশাল আয়োজন করতেন। আমি নিজে ছাত্র শক্তির আয়োজিত সেই প্রোগ্রামে গিয়ে সংহতিস্বরূপ স্লোগান দিয়ে আসছি। উঠতে বসতে ইসলামপন্থী, বামপন্থী সবাই প্যালেস্টাইন নিয়ে গলার রগ ফুলায়ে ফেলসি। অথচ আজ যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজারে মার্কিন ট্যুরিজম সেন্টার বানায়ে ফেলার পরিকল্পনা দিল তখন একটা টু শব্দ বাংলাদেশ থেকে হইল না। যদি বলেন দেশের পরিস্থিতি এসব করার মতো নয় তাহলে তো এই প্রশ্ন আসবেই “আগেই কি ভালো ছিলাম?” স্পষ্টতই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার নামে মনিব পরিবর্তনের খেলা চলছে৷ নব্য ফ্যাসিস্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে আসলে ইউনূস সাহেবকে খারাপ কথা বলেন নাই এই ক্ল্যারিফিকেশন দিতে ফেসবুকে নামতে হচ্ছে ফারুক ওয়াসিফকেও। যার লেখাপত্র প্রথম আলোয় পড়ে আমার প্রজন্মের অনেকে মার্কিন ফরেন পলিসি নিয়ে ক্রিটিকালি ভাবতে শিখেছি। ডোনাল্ড ট্রাম্প গালি দিলে সেইটা ব্যাজ অব অনার। একটা ইব্রাহিম ত্রায়োরে বা জুলিয়াস মালেমা তো দূরস্থান একটা ক্লাউদিয়া শিনবাম বা গুস্তাভো পেত্রোও আমরা প্রোডিউস করতে পারি নাই। ফ্যাসিবাদ বিরোধী যদি আমরাও আদৌ হতাম তবে নাৎসি রবার বেরোন ইলন মাস্ককে দেশে নিয়ে আসার চেষ্টা রীতিমতো জাতীয় ক্রোধ সৃষ্টি হত। একটা লোক বর্তমানে অন্তত চারটা দেশে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা) ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য টাকা ঢালছে। আর তাকে দেশে আনার চেষ্টাকে মাস্টারস্ট্রোক হিসেবে উপস্থাপন করতে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী’রা তৎপর।
(৩)
একেপির মডেলে নাহিদ সাহেবদের নতুন দল হবে। তা এরদোয়ান সাহেব যে মডেলে কুর্দি প্রশ্ন ডিল করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রশ্ন কি ইহদেশীয় এরদোয়ানবাদীরা একইভাবে ডিল করবেন? পিকেকে ও আইসিস একই রকম সন্ত্রাসী, এই কথার সাথে ‘অতি বাম অতি ডানরা বাড়াবাড়ি করছে’ মার্কা বক্তব্যের আমি বিশেষ পার্থক্য দেখিনা৷ অবশ্য বাস্তবতা এই যে ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন পার্টি না থাকলে এখনো মধ্যপ্রাচ্য আইসিসরেই ডিল করতে ব্যস্ত থাকত। অবশ্য এরদোয়ানের কোনো অলিক মৃ ছিল না, বা অনিক রায়ও না। দু-একটা আনহিঞ্জড মওদুদীবাদী তুরস্ককে দিয়ে বাংলাদেশে ন্যাটোর ঘাঁটি তৈরির কথা বলে ফেলেছে বটে, কিন্তু নয়া-নাগরিকরাও মাহফুজ সাহেবকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে এরদোয়ানের সাথে তোলা ছবি পোস্ট করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মুসলমান’ প্রশাসন তুরস্কের প্রতিনিধিদের সাথে মিটিং করছে ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে। এইখানে ইয়াহুদী-নাসারা বিরোধিতাকে এড়ায়ে ন্যাটোর আধিপত্য বিস্তার করতে গেলে মিডেল ম্যান বানাতে হবে তুরস্করেই। চোখ রাইখেন সবাই।
মোদ্দা কথা বন্দোবস্ত কিছুই নতুন না। বোতলটা নতুন, হালাল মদটা পুরানো। কোনো মুক্তিমুখী রাজনীতি না, পুরানো বস্তাপচা ধর্মীয় পরিচয়বাদের রাজনীতির দাঁত-নখ কেটে চালানো হবে স্রেফ। ফলত, মাহফুজ সাহেব বইমেলায় আসা মবকে মব বলে আবার ক্ষমা চাইতে বাধ্য হবেন।
বাংলাদেশের শ্রমিক, নারী, হিন্দু, তরিকতপন্থী মুসলমান, আদিবাসী কেউ তার হিস্যা পায় নাই। তাদের সংগঠিত করতে হবে। এটাই লড়াই। বাকি সব ডিস্ট্র‍্যাকশান।

Manual8 Ad Code

 

Manual6 Ad Code

মেঘমল্লার বসু : সভাপতি ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা 

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code